সুর ও বাণী : নতুন জীবনে প্রবেশদ্বার-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা
  2016-06-08 18:30:45  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। জুন মাস চীনে পরীক্ষার মাস। প্রতি বছর এ মাসের ৭ থেকে ৮ তারিখ চীনের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত চলে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা। এ দু'টি পরীক্ষা চীনের বেশির ভাগ পরিবারের সঙ্গে অতপ্রতভাবে জড়িত। আমাদের দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের উত্সাহ ও আত্মবিশ্বাস দিতে আমি আজকের অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি গান বাছাই করেছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আমরা একসাথে গানগুলো শুনবো।

বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন ইয়াং পেই আনের কণ্ঠে 'আমি বিশ্বাস করি' নামে একটি গান। এ গানে বলা হয়েছে, 'আমি আকাশে উড়তে চাই। আমি সূর্যের পাশে কাঁধে কাধ রেখে বসতে চাই। আমার স্বপ্ন কখনো অন্যজনকে দেখাতে কোনো ভয় নেই। আমি সব বাস্তবায়ন করবো। আমি বিশ্বাস করি আমাকে। আমি বিশ্বাস করি আগামীকালকে। আমি মঞ্চের মাঝখানে দাঁড়াবো। আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি ভরসায় বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি, আমার হাত বাড়িয়ে আকাশ স্পর্শ করা যায়। তুমি আমার পাশে থাকলে জীবন আরো সতেজ হবে। প্রতিটি মুহুর্ত হবে চমত্কার'।

চলতি বছর চীনে ৯৪ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এ সব শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মার মনের এখন ভীষণ চাপ। অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পুরো তিন বছর ধরে এ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। কারণ সবাই বিশ্বাস করে, পরিশ্রম করলে জয় সুনিশ্চিত।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এবার শুনুন হুয়াং ঈ লিংয়ের গাওয়া 'পরিশ্রম করলে জয় হবে' নামের গানটি। এটি মিন নান ভাষার গান। এ গানে বলা হয়েছে, 'জীবনে পরাজিত হলেও হতাশ হবে না। আমাদের জীবন সমুদ্রের তরঙ্গের মতো ওঠা-নামা করে। কেবল পরিশ্রম করলে জয় হবে।'

আমার বিশ্বাস, প্রতিটি মানুষ কোনো একটি দায়িত্ব নিয়ে এ পৃথিবীতে আসে। তাই সবার ভালোভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করা উচিত। হয়তো কেউ লেখাপড়ায় খুব ভালো। কেউ খেলাধুলায় ভালো। কেউ নাচ-গানে ভালো। প্রত্যেকের বিশেষ বিশেষ গুণ রয়েছে। সবসময় নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থাবান হওয়া দরকার।

প্রিয় শ্রোতা, এবার শুনুন 'নিজেকে বিশ্বাস করো' নামের গানটি। গেয়েছেন জিরো ব্যান্ড। তারা গেয়েছেন, 'বহুবার পরিশ্রমের ঘাম ঝরেছে। কারণ আমরা সবসময় বিশ্বাস করি, কেবল পরিশ্রম করলে বিজয়ী হবো। সবসময় সাফল্য অর্জনের জন্য নিজেকে উত্সাহ দিই। খেলার সময় আমাদের রক্ত গরম হয়ে উঠে। নিজেকে বিশ্বাস করো, তুমি বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারো।'

শ্রোতাবন্ধুরা, ছোটবেলায় আত্মীয়-স্বজন বা শিক্ষকরা প্রায়শই আমাদের প্রশ্ন করতেন, বড় হলে তুমি কী হবে? অথবা তোমার স্বপ্ন কী? আমি বাচ্চাদের কাছ থেকে শুনেছি নানা উত্তর। কেউ বলতো, আমি বড় হলে বিজ্ঞানী হবো। কেউ বলতো, আমি বড় হলে প্রকৌশলী হতে চাই। কেউ বলতো, আমি রাজকুমারী হতে চাই। আমার ছেলে বলতো, আমি বড় হয়ে ট্রাকের চালক হতে চাই। আর আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো বড় হলে আমি সাংবাদিক হবো। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আশা করি, আপনাদের স্বপ্নও বাস্তবায়িত হবে।

বন্ধুরা, এবার শুনুন 'আমার ভবিষ্যত স্বপ্ন নয়' নামে একটি গান। গেয়েছেন চাং ইয়ু শেং। এটি আমার প্রিয় গান। এ গানে বলা হয়েছে, 'আমি জানি, আমার ভবিষ্যত স্বপ্ন নয়। আমি নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতি মূহুর্ত কাটাই। আমার মন ভরসার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।'

শ্রোতা, আমার মনে হয়, একজন ছেলে এবং একজন মেয়ের ভবিষ্যত স্বপ্ন ভিন্ন। ছেলে ও মেয়ের জীবনের চাপও ভিন্ন। আমার দৃষ্টিতে চীনে ছেলেদের জীবনের চাপ আরো বেশি। কারণ ছেলেদের পুরো পরিবারের এক ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। অনেকাংশেই পরিবারের জন্য গর্ব বয়ে আনার দায়িত্ব তাদের। তাদের নিজেকে ছোট সংসার তৈরির জন্য নানারকম প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা সবসময় বলতেন, তুমি ছেলে মানুষ, তোমার মন শক্ত হতে হবে। কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে ভয় পাওয়া যাবে না। চোখের জল পড়া যাবে না।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এখন শুনছেন 'ছেলেদের আত্মনির্ভর হতে হবে' নামে একটি গান। গানটিতে বলা হয়েছে, 'পুরুষের সাহস লোহার মতো। পুরুষের হাড় ইস্পাতের মতো। পুরুষের বুক শত মাইল চওড়া। পুরুষের দৃষ্টি হাজার কিলোমিটার দূরে দেখতে পায়। ভালো ছেলে, প্রতি দিন নিজেকে বলবে, আত্মনির্ভর হতে হবে। তার শরীরের গরম রক্ত সূর্যের মতো উজ্জ্বল'।

একটি প্রবাদ আছে, এ পৃথিবীতে একই রকম দেখতে দুটি পাতা নেই। মানুষের জীবনেরও একই অবস্থা। অন্য লোকের মতো নিজের জীবন হবে না। তবে প্রত্যকের নিজের জন্য চমত্কার সময় সৃষ্টি করা যায় এবং সকলে এর জন্য প্রচেষ্টা চালায়।

প্রিয় বন্ধুরা, এবার শুনুন 'উজ্জ্বল ভবিষ্যত' নামে একটি গান। গেয়েছেন সিন। আমার এক সহপাঠি আমাকে বলেছেন, এ গানটি যতবার সে শোনে ততবার তার ভালো লাগে। কারণ এ গানটি সবসময় তাকে উত্সাহ দেয়। এ গানে বলা হয়েছে, 'স্বপ্নে আমি একাই মরুভূমিতে হাঁটছিলাম। আমি জানি না, সামনে কী দেখতে পারবো? আমার ভাগ্য ভালো, আমি কখনো পিছনে ফিরে দেখিনি। অবশেষে আমি দেখেছি, সামনে সত্যি সত্যি মরুদ্বীপ আছে। উদাসীন ব্যক্তি, তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। তোমাদের উপেক্ষার কারণে আমি আরো চমত্কার জীবন সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। আমি কখনো মাথা নত করি না। কালবৈশাখি ঝড়ের পর উজ্জ্বল আকাশ দেখা যায়। যারা আমাকে বুঝতে পারে, তারা সবসময় আমার পথে সঙ্গী ছিলো। তোমাদের ধন্যবাদ।'

প্রিয় বন্ধু, আপনার সামনের দিকে যাওয়ার পথে কী কী কষ্ট বা বিপদ ছিল? কে আপনাকে সহযোগিতা করেছে? যদি আপনি মনে করেন আপনার গল্প অন্যকে স্পর্শ করবে তাহলে দেরি না করে আমাকে লিখে জানাবেন।

বন্ধুরা, পরীক্ষা আসলে শান্তভাবে মন নিয়ে তাতে অংশগ্রহণ করুন। বিশ্বাস করুন, ঝড়-বৃষ্টির পর সূর্যালোক আসবেই। শুনুন এ গানটি। 'জীবনের দূ:খ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা তুমি আমার সঙ্গে ভাগ করো। মাঝে মাঝে আমরা হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই। মাঝে মাঝে অপেক্ষা করতে হয়। এক সময় সাহসের সাথে মাথা উচু করবে। ঝড়-বৃষ্টির পর সূর্যালোক আসবে। কালো মেঘের পর নীল আকাশ আসবে। তোমার হৃদয়ে ভরসা আছে। বিশ্বাস করো, রংধনু আসবেই। আমিও সবসময় তোমার পাশে থাকবো।'

প্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের 'সুর ও বাণী' আসর শুনলেন। আজকের আসরে বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি উত্সাহব্যঞ্জক গান বাছাই করে প্রচার করেছি। আশা করি, গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। তা হলে আজ এ পর্যন্তই। আমি বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040