বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো 'প্রথম বিশ্ব ৫-জি সম্মেলন'
  2016-06-07 13:14:42  cri



গত ৩১ মে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো 'প্রথম বিশ্ব ৫-জি সম্মেলন'। স্বাগতিক চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেনের আয়োজন করা হয়। এ সম্মেলনকে দেখা হচ্ছে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিতে আমাদের পঞ্চম প্রজন্মে বা ৫-জি যুগে প্রবেশের সূচনালগ্ন হিসেবে।

৫-জি মানে পঞ্চম প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি। ৫-জি আমাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? প্রিয় শ্রোতা, চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন সামনের সেই দিনগুলোর কথা। সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠলেন, ঘরের হালকা আলোর বাতিটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিভে গেল, এসি চলে গেল আপনার চাহিদামতো অবস্থানে। আপনি শরীরের আড়মোড়া ভেঙে বাথরুমে গেলেন, টেপের পানি আপনি ঠিক যে তাপমাত্রের পানি দিয়ে হাত-মুখ ধোন, ঠিক সেই তাপমাত্রায় আপনার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। ওদিকে, দাঁত ব্রাশ করার পর ডিজিটাল টুথব্রাশ আপনার দাঁতগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তা আপলোড করে দিল ইন্টারনেটে, যেখান থেকে আপনার ডেন্টিস্ট আপনার দাঁতের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জেনে গেলেন তাত্ক্ষণিকভাবে। আপনি আপনার চশমাটি চোখে দেওয়ার সাথে সাথে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখতে পেলেন আপনার স্ত্রী শিশু-সন্তানটিকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। ওরা নিরাপদ আছে জেনে আপনি স্বস্তি পেলেন। এসময় আপনি এই চশমার মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে হাই-হ্যালোও করতে পারেন। নাস্তা খাওয়ার পর স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আপনাকে অফিসে পৌঁছে দিবে। গাড়িতে বসেই আপনি প্রয়োজনীয় ভিডিও সম্মেলনটি সেরে নিতে পারেন।

তো বন্ধুরা, এ ধরনের একটা জীবন কি আপনি চান? নিশ্চিয়ই চান। আমরাও চাই। তবে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার জন্য আমাদের চাই টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে পঞ্চম প্রজন্ম তথা ৫-জি প্রযুক্তি।

প্রযুক্তি এগুচ্ছে। টেলিযোগাযোগ খাতে এখন ৪-জি'র জয়-জয়কার। তবে এ প্রযুক্তিতে অনলাইনে ভিডিও দেখা একটা ব্যয়বহুল ব্যাপার। ভবিষ্যতে ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে একটা গোটা মুভি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। অর্থাত তখন ইন্টারনেটের গতি বেড়ে যাবে বহুগুণ। পাশাপাশি আপনার প্রয়োজীয় সব ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি নেটওয়ার্কিংয়ের আওতায় চলে আসবে। বর্তমানে তো কেবল মোবাইল ফোনসহ হাতে গোনা কয়েকটা যন্ত্র ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু ৫-জি প্রযুক্তি চাল হলে গাড়ি থেকে শুরু করে সুই পর্যন্ত মোটামুটি সবকিছুই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়ে যাবে।

৫-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ হাতের মোবাইল দিয়ে দূরের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ধরুন আপনি একটি ফাইল বাড়িতে ভুলে ফেলে অফিসে চলে এসেছেন। কোনো সমস্যা নাই। আপনি বাড়িতে ইনস্টল করা যন্ত্রের মাধ্যমে ফাইলটি খুঁজে পাবেন অফিসে বসেই। ফাইলটি পাবার পর স্মার্ট রোবট দিয়ে সেটির স্ক্যান কপি আপনি হাতে পাবেন মুহূর্তের মধ্যেই। যত দূরেই থাকুন না কেন, আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকবে পুরোপুরি।

চীনা মোবাইল গবেষণালয়ের উপ-পরিচালক হুয়াং হং ইউ বলেন, ভবিষ্যতে এমন একটি যুগ আসবে যখন সকল তথ্য থাকবে মাথায় এবং সব জিনিষ থাকবে হাতের কাছে।

আজকাল স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রদর্শনী হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ভবিষ্যতে গাড়িও বোমাইলফোনের মতো ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হবে। মানুষকে তখন আর গাড়ি চালাতে হবে না। গাড়ি চলবে তার আপন মনে। আপনি গাড়িতে আরাম করে বসে প্রয়োজনীয় কাজ সারবেন। আপনি ভিডিও সম্মেলন করতে পারেন, ভিডিও গেমস্‌ গেলতে পারেন, গান শুনতে পারে, মুভি দেখতে পারেন বা আপনার স্ত্রী বা বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আজকাল অনেক কোম্পানি নিজেদের তৈরি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব কোম্পানি ৫-জি প্রযুক্তি এলেই সেগুলো বাজারে ছাড়বে। তা ছাড়া, স্মার্ট ফোনের মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষও স্মার্ট হবে। যেমন, স্মার্ট ছাতা, স্মার্ট কাপ, স্মার্ট থালাবাসনসহ ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ইতোমধ্যেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এক সময় আর মোবাইল ফোনও লাগবে না। আমাদের চশমা, ঘড়ি যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হবে। গুগল, অ্যাপেলসহ বিভিন্ন কোম্পানি ইতোমধ্যেই এ ধরনের যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেছে।

প্রিয় শ্রোতা, আপনারা হয়তো ভাবছেন, ভবিষ্যতে যারা ৫-জি প্রযুক্তিতে বেশি দক্ষতা অর্জন করবে, তারাই বিশ্বকে শাসন করবে। কথাটা কিন্তু একেবারে ফেলে দেবার মতো নয়। ২জি, ৩জি ও ৪জি প্রযুক্তি বিশ্ব টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিশ্ব যখন ২-টি ও ৩-জি যুগে ছিল, তখন চীন ছিল এ খাতে পিছিয়ে। কিন্তু ৪-জি প্রযুক্তি খাতে চীন বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে সামনে এগিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পঞ্চম প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। চীনও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বেইজিংয়ে ৫-জি সম্মেলন আয়োজন তার প্রমাণ।

চীনের টেলিযোগাযোগ কোম্পানি চায়না মোবাইল, হুয়া ওয়ে, ZTE ও তাথাং দীর্ঘকাল ধরেই ৫জি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে আসছে। আশা করা যায়, টেলিযোগাযোগ খাতে চীন উন্নত বিশ্বের সাথে সমান তালেই পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে।

আশা করা হচ্ছে, বিশ্বে প্রথম ৫জি প্রযুক্তির স্ট্যান্ডার্ড ঠিক হয়ে যাবে ২০১৮ সালের মধ্যে। আর ২০২০ সালে চীনের বাজারে চলে আসবে ৫জি প্রযুক্তি। এখন ২০১৬ সালে বসে আমরা যেন শুনতে পারছি ৫-জি প্রযুক্তি আগমনের পদধ্বনি।

(শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040