0607china
|
প্রশ্ন উঠতে পারে: বাস্তবে যে প্রাণীটির কোনো অস্তিত্ব নেই, সেটির ধারণা এলো কী করে? উত্তরে বলতে হয়: রূপকথা থেকে। চীনা রূপকথায় ড্রাগন এক ধরনের কল্পিত প্রাণী। সে লাফাতে, উড়তে এবং হাঁটতে পারে। তার ইশারায় বাতাস প্রবাহিত হয়; তার ইংগিতে বৃষ্টি নামে। সে পৃথিবীর সবকিছুর জন্য শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনে।
চীনাদের কল্পনার ড্রাগন আর পাশ্চাত্যের ড্রাগন এক নয়। চীনের ড্রাগনের পাখির মতো ডানা নেই, এরা মুখ থেকে আগুনও ছড়ায় না। চীনের ড্রাগনে অনেক প্রাণীর বৈশিষ্ট্য এসে মিলেছে। এর আছে চিংড়ি মাছের চোখ, হরিণের শিং, গরুর মুখ, কুকুরের নাক, ক্যাটফিশের গোফ, সিংহের কেশ, সাপের লেজ, মাছের আঁশ, ঈগলের পা।
প্রাচীনকালে ড্রাগনকে রাজকীয় লক্ষণ ও রাজবংশের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। চীনা সম্রাটরা নিজেদের ড্রাগন মনে করতেন। তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্রও ড্রাগনের ছবি দিয়ে সাজানো হতো। ড্রাগনের ছবিওয়ালা জিনিসের ব্যবহার সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। সে কালে সম্রাটের মুখকে 'ড্রাগনের মুখ'; তার ব্যবহার্য কাপড়কে 'ড্রাগনের কাপড়'; তাদের ছেলে বা নাতীকে ড্রাগনের ছেলে বা নাতী ইত্যাদি ডাকা হতো।
প্রাচীনকালে চীনারা ড্রাগনের পূজা করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, ড্রাগন হচ্ছে তাদের পূর্বপুরুষ। হান জাতির মানুষ সবসময় ড্রাগনকে জাতির প্রতীক হিসেবে দেখে আসছে। তাই চীনারা সাধারণভাবে নিজেদের 'ড্রাগনের বংশধর' গণ্য করে থাকে।
খুব সম্ভাবনাময় বা প্রতিভাবান কোনো মানুষকে চীনারা 'ড্রাগন' বলে ডেকে থাকে। তাই চীনা পিতামাতা আশা করেন, তাদের ছেলে বা মেয়ে ড্রাগনের মতো হবে; ড্রাগনের মতো আদর্শবান ও ধনবান হবে।
চীনের সাধারণ মানুষ এখনও ড্রাগনকে শুভ ও কল্যাণের প্রতীক বলে বিশ্বাস করে। এদেশে প্রতি বছর ড্রাগনের সাথে সম্পর্কিত দু'টি বড় উত্সব পালন করা হয়। চীনা চান্দ্র পঞ্জিকার প্রথম মাসের ১৫ তারিখে 'লন্ঠন উত্সবে' চীনারা ড্রাগন-লণ্ঠন দুলিয়ে বসন্তকে স্বাগত জানায়। অন্যদিকে, চান্দ্র পঞ্জিকার পঞ্চম মাসের পঞ্চম দিনে 'ড্রাগন নৌকা উত্সবে' লোকজন ড্রাগন নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।