২০১৩ সালে ওয়েই সিন চীনে ফিরে এসে তার নিজের ফ্যাশন স্টোর প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দোকানে পুরাতন ফ্যাশন গুরুত্ব পায়। তবে নতুন নতুন ডিজাইন নিয়েও তিনি গবষেণা করে যাচ্ছেন। তিনি নিজের শখকে পেশায় পরিণত করেছেন বলা চলে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি পুরাতন জিনিষ পছন্দ করি। আবার পুরাতন জিনিষ হুবহু একইরকম তৈরী করাও আমার পছন্দ না। তবে আমি পুরাতন ডিজাইনের খুঁটিনাটি পরিবর্তন করতে চাই না। তাই আমি যে পোশাক তৈরি করি তার সাথে পুরাতন ডিজাইনের কিছুটা পার্থক্য থাকে। আসলে আমি পুরাতন ফ্যাশনের সাথে আধুনিক ফ্যাশনের মিশেলে নতুন কিছু সৃষ্টি করি।'
ওয়েই সিন পুরাতন ফ্যাশন নিয়ে প্রচুর লেখাপড়া করেছেন এবং পুরাতন ফ্যাশন দোকানগুলো পরিদর্শন করেও অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের প্রতিফলন দেখা যাবে তার শো রুমে গেলে। শুরুর দিকে তিনে মাত্র কয়েকজন মার্কিন ডিজাইনারের ডিজাইন করা পণ্য বিক্রি করতেন। শো রুমের আয়তনও ছিল বর্তমানের অর্ধেক। কিন্তু এখন তাঁর দোকানে প্রায় ৫০টি বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক বিক্রি হয়।
আরও শো রুশ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন ওয়েই সিন। ২০১৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় শো রুমটির যাত্রা শুরু হয়। এখানে বিক্রিত পোষাকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশনের বিভিন্ন যুগের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার প্রথম শো রুমে ডেনিম'সহ বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্য বিক্রি হয়। আর দ্বিতীয় শো রুমে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের ফ্যাশনের আদলে তৈরি পুরুষদের পোষাক বিক্রি হয়। যেমন, এখানে পাবেন গত শতাব্দীর ৩০-এর দশকে ব্যবহৃত ব্রিটিশ সৈন্যদের পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক।'
ওয়েই সিন'র মা'রও বেইজিংয়ে একটি প্রাচীন সামগ্রী বিক্রির দোকান রয়েছে। মা'র প্রভাবেও তিনি পুরাতন ফ্যাশনের ব্যাপারে আগ্রহী হন। তিনি বলেন, 'ভিন্টেজ কী? এটি হল পাশ্চাত্য দেশগুলোর শিল্পবিপ্লবের সময় শ্রমিকরা যে ধরনের পোশাক ব্যবহার করতো তার আধুনিক রূপ। আমার পণ্যগুলো বিশেষ ধরনের। অনেকে মনে করে আমি পুরাতন ফ্যাশনের পোশাক বিক্রি করি। আর আমি মনে করি, আমি পুরাতন সংস্কৃতি নিয়ে নাড়াচাড়া করি।'
পুরাতন সংস্কৃতিতে আগ্রহ থাকায় ওয়েই সিন পুরাতন আমলের মোটর সাইকেল, পুরাতন ঘড়ি, কাঠের পুরাতন আসবাবপত্র ইত্যাদির প্রতিও সমান আগ্রহী। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন পুরাতন সংস্কৃতি মিলে একটি নতুন সংস্কৃতির জন্ম দিতে পারে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি আরও শো রুম খুলতে চাই। শো রুমের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপরও পুরাতন ধারণা এবং আমার নিজের ধারণার মিশেল লক্ষ্যণীয়। আমি বিশ্বাস করি, আমার শো রুমগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দিন দিন বাড়বে। আমি ওয়েবসাইটেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করি। তাঁরা আমার লেখা পড়তে পারেন। আমার ক্রেতারাও আমার মত পুরাতন সংস্কৃতি পছন্দ করেন।'
দোকানের ব্যবসা করার পাশাপাশি ওয়েই সিন নিজের সংগৃহীত সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও ছবি ওয়েবসাইটে শেয়ার করেন। তাঁর এখন অনেক ভক্ত আছে। অনেকেই তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার সম্পর্কে জেনেছেন। তার ক্রেতারা এখন তার বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন।
২০১৬ সালে তার প্রথম শো রুম প্রতিষ্ঠার তৃতীয় বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে তার অনেক ভক্ত তার দোকানে ভিড় করছেন, তার কাছ থেকে সরাসরি তার অভিজ্ঞতার কথা শুনছেন। বেইজিংয়ে আমেরিকার পুরাতন ফ্যাশনের শো রুমের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ওয়েই সিন এখন এ শহরে অনেক পরিচিত। এ লাইনে তিনি এখন গুরু। ওয়েই সিন বলেন, 'ভালভাবে কাজ করলে সবার প্রশংসা পাওয়া যায়। আমি নিজের অভিজ্ঞতা ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পছন্দ করি। আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।'
যা ছিল একসময় নিজের শখ, সেটাই এখন পরিণত হয়েছে তার পেশায়। ব্যাপারটা ওয়েই সিনের জন্য খুবই সুখের। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে নিজস্ব ব্রান্ডের পণ্য বাজারে আনতে সক্ষম হবেন। পুরাতন ফ্যাশনের কফি শপ ও মোটরসাইকেলের শো রুম খোলার স্বপ্নও দেখেন। আমরা আশা করি তার এ স্বপ্নও পূরণ হবে।