তো, আইনটি গত এক বছর ধরে কার্যকর আছে। এর কার্যকারিতা কেমন? প্রকাশ্যে ধূমপান প্রতিরোধে এ আইন কি সফল হয়েছে? এ ব্যাপারে বেইজিংবাসীর ধারণা কী? চলুন আমরা এ প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করি।
বেইজিংয়ের এক বাসিন্দা বললেন,
'আমার ধারণা, আগের চেয়ে অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। এখন প্রকাশ্যে জনবহুল স্থানে ধূমপান অনেক কমেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় ধূমপানবিরোধী এ আইনটি বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। আবার রেস্তোরাঁর মতো জনবহুল স্থানগুলোতে এ আইন তেমন একটা কার্যকর হয়নি। একবার আমি রেস্তোরাঁয় ডিনার খেতে গেলাম। আমার পাশে একজন ধূমপান করছেন। অথচ রেস্তোরাঁর লোকজন তাকে বাধা দিল না।'
আসলে গেল বছর বেইজিংয়ে এ আইন চালুর পর অমান্যকারীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ ইউয়ান জরিমানা আদায় করেছে কর্তৃপক্ষ। বেইজিংয়ে বর্তমানে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি। সংখ্যা বিবেচনায় নিলে আদায়কৃত জরিমানার অংক অবশ্য বড় না। একটা গোপন জরিপ থেকে জানা গেছে, বেইজিংয়ের রেস্তোরাঁ, অফিসভবন, হাসপাতাল, বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থানে প্রকাশ্যে ধূমপানের হার এক বছর আগের ২৩.১ শতাংশ থেকে নেমে বর্তমানে ৬.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কে চীনের ধুমপান নিয়ন্ত্রণ পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, চীনের বিখ্যাত ধূমপান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ স্যু কুই হুয়া বলেন,
'জনবহুল স্থানকে তামাকমুক্ত করার নীতি চালু করার পর ইনডোর পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে আইন মেনে চলার প্রবণতাও বেড়েছে। এ আইন ৯৪ শতাংশ নাগরিকের সমর্থন পেয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, জনসাধারণ ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন।'
বর্তমানে চীনের ১০টিরও বেশি শহরে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খুব সম্ভবত চলতি বছরে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও এ ধরনের আইন করা হবে। এ আইন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ স্যু কুই হুয়া অনেক আশাবাদী।
'আমাদের গবেষণা মহলে এ আইনকে প্রকাশ্যে ধূমপান প্রতিরোধে চূড়ান্ত উদ্যোগ বলে গণ্য করা হয়। তবে, সমাজকে সার্বিকভাবে ধূমপানমুক্ত করা যাবে কি না বলা মুশকিল।'
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ চীন। এ চুক্তিতে জনবহুল স্থানে সার্বিকভাবে ধূমপান নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চীনে সার্বিকভাবে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা সহজ কাজ নয়। কেউ কেউ মনে করেন, ধূমপানশিল্প চীনের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। প্রকাশ্যে ধূমপান সার্বিকভাবে নিষিদ্ধ করলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। আবার কেউ কেউ অধিকারের প্রশ্নও তুলে থাকেন। তাদের যুক্তি, প্রকাশ্যে ধূমাপান করার অধিকার আছে সবার।
তবে এ সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চীনে নিযুক্ত প্রতিনিধি কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ উপদেষ্টা ম্যাডাম পান চিয়ে লানের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। তিনি বললেন, বেইজিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় চীনে সার্বিকভাবে প্রকাশ্যে ধুমপান নিষিদ্ধ করে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এখন গোটা চীনেই বেইজিংয়ের মতো কঠোর আইন করার সময় এসেছে। সেটা হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (সুবর্ণা/আলিম)