20160525yinyue.mp3
|
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের সিছুয়ান প্রদেশে লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলে বসবাস করছে। দুর্গত শিশুদের টেকসই ত্রাণ প্লাটফর্ম তৈরির জন্য গাড়ি নির্মান প্রতিষ্ঠান 'ওডি কোম্পানি' এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল যৌথভাবে 'শিশুদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন' শীর্ষক গণকল্যাণমূলক প্রকল্প তৈরি করেছে। একই সাথে ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চলের শিশুদের ত্রাণদানের জন্য 'বিশেষ তহবিল' স্থাপন করা হয়েছে। চীনের বিখ্যাত সুরকার চাং ইয়া তোং এবং লেখক ছুই শু এ প্রকল্পের থিম সোং লিখেছেন। গানের নাম 'উত্কৃষ্ট ভবিষ্যত'। এখন আপনারা শুনছেন 'Angel children's choir' নামক শিশু গায়ক দলের গাওয়া এ গানটি।
বন্ধুরা, 'শিশুদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন' গানটি রচিত হয়েছে ২০০৭ সালে। এ গানে বলা হয়েছে 'প্রতিটি রং পরিপূর্ণ পুষ্প হওয়া উচিত। সূর্যালোকের পিছনে কেবল সাদা ও কালো থাকে না। প্রতিটি মানুষের আশা করার অধিকার আছে। ভালোবাসা হৃদয়ে রেখে আমার সাথে চলে আসো। আমরা প্রেম দিয়ে উত্কৃষ্ট বর্তমান সৃষ্টি করবো। প্রতিটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে পারে। প্রতিটি শিশুর আদর পাওয়া উচিত। তারা আমাদের ভবিষ্যত। একই আকাশের নিচে পরস্পরকে ভালোবাসবে। এটাই সবচেয়ে ভালো ভবিষ্যত।' এ গানের কথা যেমন সুন্দর, সুরও তেমন শ্রুতিমধুর। এবার শুনুন আমার প্রিয় গায়িকা লিউ রুই ইং এবং বাচ্চাদের গাওয়া 'উত্কৃষ্ট ভবিষ্যত' নামের গানটি।
বন্ধুরা, আপনারা এতোক্ষণ 'উত্কৃষ্ট ভবিষ্যত' নামের গানটি শুনলেন। এ গানের সুর করেছেন চাং ইয়া তোং। তিনি চীনের মূলভূখণ্ডের পপ সংগীত জগতের 'রাজা'। তিনি চীনের মূলভূখণ্ডে পপ সংগীতের জনকের শ্রদ্ধা পান।
সুরকার চাং ইয়া তোং
চাং ইয়া তোং ১৯৬৯ সালে শানশি প্রদেশের দাথোং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ২২ বছর বয়সে বেইজিংয়ে এসে সংগীত জগতে পা রাখেন। চাং ইয়া তোং একজন বহুমুখী সুরকার। বিভিন্ন ধরণের সংগীত, বিশেষ করে চীনের ইলেকট্রনিক মিউজিক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে চাং ইয়া তোং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বলা যায়, গত শতাব্দীর ৯০'র দশক থেকে একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত তিনি চীনের সবচেয়ে সফল সংগীত প্রযোজক। তিনি হংকংয়ের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ওয়াং ফেইয়ের জন্য বেশ কিছু গান প্রযোজনা করেছেন এবং সফল হয়েছেন।
চলচ্চিত্র 'স্পর্শ করা যায় না'
২০১৪ সালে সুরকার চাং ইয়া তোং এবং গীতিকার লিন সি 'স্পর্শ করা যায় না' নামক চলচ্চিত্রের থিম সং লেখেন। গায়িকা ওয়াং ফেই সুরে সুরে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার আগের বিশেষ সময়ে গোয়েন্দাদের বেদনাদায়ক এ প্রেমের কাহিনীতে অভিনয় করেছেন। শুনুন এ গানটি।
চাং ইয়া তোংয়ের বয়স খুব বেশি নয়। তবে তার ২৫ বছরের সংগীত জীবনে ওয়াং ফেই, পু শু, লি ইয়ু ছুন, সুই ওয়েই, লিন ঈ লিয়ান ও রোং চু আরসহ হংকং, তাইওয়ানসহ মূলভূখণ্ড এবং বিদেশের অনেক বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীকে সাহায্য করেছেন। তার অনেক গান চীনা সংগীত জগতে অতুলনীয় ক্ল্যাসিকেল সংগীতে পরিণত হয়েছে।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে 'রাণী ও স্বপ্ন' নামে একটি অ্যালবাম বাজারে আসে। এ অ্যালবামের গায়িকা লি ইয়ু ছুন। গানের কথাগুলো লিখেছেন চাং ইং, সুর করেছেন চাং ইয়া তোং। এ অ্যালবামের বেশ কয়েকটি গান সে বছর নানা পুরস্কার পায়। এ অ্যালবামের মধ্যে 'চন্দ্রমল্লিকা' নামের গানটি চীনের চা সংস্কৃতি প্রচারের জন্য নির্মিত সিরিজ কার্টুন ছবির থিম সং। গানটিতে ইলেকট্রনিক মিউজিক এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী সংগীতের মিশ্রণ করা হয়েছে। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'চন্দ্রমল্লিকা' নামের চমতকার এই গানটি।
চলচ্চিত্র 'বসন্তের সাবওয়ে'
প্রিয় শ্রোতা, চাং ইয়া তোং চলচ্চিত্রের জন্যও সংগীত সৃষ্টি করেছেন এবং প্রশংসা পেয়েছেন। ২০০২ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক চাং ই পাই 'বসন্তের সাবওয়ে' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মান করেন। এ চলচ্চিত্রে শহরাঞ্চলের যুবক-যুবতীদের জীবন কথা তুলে ধরা হয়েছে। নতুন ও পুরোনো সংস্কৃতির সংঘর্ষ থেকে পছন্দের বিষয়টি কীভাবে বেছে নেওয়া উচিত? জীবনে আবেগ এবং বাস্তবের নিষ্ঠুরতার মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য খুঁজে বের করা যায়? এ ছিলো এ চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। চাং ইয়া তোং এ চলচ্চিত্রের সুর সৃষ্টির জন্য সে বছর শ্রেষ্ঠ সংগীত প্রযোজকের পুরস্কার পান।
বন্ধুরা, এবার শুনুন 'বসন্তের সাবওয়ে' নামের গানটি। গেয়েছেন ইয়ু ছুয়ান নামের একটি ব্যান্ড। এ গানে বলা হয়েছে, 'আমি ও তুমি বসন্তের পথে যাওয়ার সাবওয়ে খুঁজছি। বসন্তকালের দিকে যাওয়ার পথ খুঁজতে আমি একদিন এক রাত সময় ব্যয় করেছি। এ জন্য যে কোনো মূল্য দিতে পারি আমি। তোমাকে খোঁজার জন্য, তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব উপায় ব্যবহার করেছি। আমি ভীষণ ভয় পাই, যদি কোনো দিন তুমি আমার সঙ্গে আর কথা না বলো। তাহলে আমি খুব ব্যথা পাবো।'
২০০৯ সালে চাং ইয়া তোংয়ের নতুন অ্যালবাম 'অন্তঃস্রোত' মুক্তি পায়। এ অ্যালবামকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা পপ সংগীত জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। এই অ্যালবাম চাং ইয়া তোংয়ের নিজের চিন্তাভাবনা, সৃষ্টি এবং ভিন্ন ব্যক্তির কণ্ঠ মিলে এক বিশেষ ধরনের কাজ। এ অ্যালবামের মাধ্যমে চাং ইয়া তোংয়ের চেষ্টায় অনেক শিল্পী নিজেরা শ্রোতাদের সামনে হাজির হতে পেরেছে। চাং ইয়া তোং নিজেও 'গরম স্রোত' ও 'অন্তঃস্রোত' দুটি গান গেয়েছেন। এ দুটি গান এ অ্যালবামের থিম সং। আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনলে অন্তঃস্রোতের মধ্যে মালভূমি, তুষার পাহাড় এবং সমতল ভূমির দৃশ্য দেখতে পাবেন। 'অন্তঃস্রোত' অ্যালবাম সকল শ্রোতাদের কাছে হয়তো জনপ্রিয়তা পায় নি। তবে এ অ্যালবামটি চাং ইয়া তোংয়ের নতুন প্রচেষ্টা। শুনুন 'অন্তঃস্রোত' গানটি।
চাং ইয়া তোং বলেন, 'আমি ভালো চলচ্চিত্র তৈরি করতে চাই। আমি মনে করি, চলচ্চিত্র নির্মানের প্রক্রিয়া আমার মধ্যে 'এ বিশ্বে' থাকার অনুভূতি সৃষ্টি করে। আমরা মানুষের সাগরে বসবাস করি। আমরা ক্ষুদ্র ব্যক্তি। আমি এ বিশ্বে কিছু হৃদয়স্পর্শী জিনিষ খুঁজে পাই। সংগীত বা চলচ্চিত্রের মাঝে আমি নিজের সবচেয়ে আন্তরিক দিকটি খুঁজে পাই। বিষয়টি আমার মন জয় করতে না পারলে অনেক টাকায় তা বিক্রি হলেও আমার ভালো লাগে না।'
বন্ধুরা, এবার শুনুন চাং লিয়াং ইংয়ের গাওয়া 'সূর্যাস্ত সড়ক' নামে একটি গান। ইংরেজী ও চীনা ভাষা মিলিয়ে তিনি এ গানটি গেয়েছেন। এ গানে বিদেশী সংগীতের ভাব রয়েছে।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে আপনাদের সুরকার চাং ইয়া তোংয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়েছি। একই সাথে তার কয়েকটি তৈরি বেশ কয়েকটি গান শুনিয়েছি। আশা করছি আপনারা উপভোগ করেছেন। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)