গ্রামাঞ্চলের শিশুদের জন্য আরো উন্নত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলবে চীন
  2016-05-16 14:33:42  cri

 


আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের দরিদ্র এলাকার শিক্ষার উন্নয়ন এবং বেইজিংয়ের নিকটবর্তী হোপেই প্রদেশের গ্রামাঞ্চলের শিশুদের জন্য উন্নত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সভাপতিত্বে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের এক নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশটির পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের শিক্ষা খাতের সমস্যা সমাধান করা, শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করা এবং সমাজের শিক্ষাগ্রহণের সমতা বাস্তবায়ন দ্রুততর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকে উল্লেখ করা হয় যে, চীনের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সমান শিক্ষাগ্রহণ এবং তাদের শিক্ষাদানের মান উন্নত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।

আসলে চীনের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় প্রদেশের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের শিক্ষার দুর্বলতা সহজেই বোঝা যায়।

এবার রাষ্ট্রীয় পরিষদের বিশেষ বৈঠকে পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির বিষয়ে বেশ মনোযোগ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সার্বিকভাবে চীনের সচ্ছল সমাজের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে বলেও বৈঠকে বলা হয়।

এ বৈঠকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্কার চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। যেমন শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করা, মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা কার্যক্রম উন্নত করা, আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া, মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষাদানের ব্যবস্থাপনা, শিক্ষকদের যোগ্যতা ও শিক্ষাদানের গুণগতমানসহ অনেক বিষয় উন্নত করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এর সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘু জাতি ও প্রতিবন্ধীদের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়।

বোর্ডিং স্কুল ছিলো এ বৈঠকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। বৈঠকে বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষাদান, পাঠাগার, খাওয়া ও বসবাস ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

২০১৮ সালে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্কুলে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ক্লাস বাতিল করা, দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা খরচে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করা এবং ২০২০ সালে মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯০ শতাংশ দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বৈঠকে।

আসলে শিক্ষার সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষার দায়িত্ব শুধু ব্যক্তিদের প্রশিক্ষিত করা নয়, বরং দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যক্তিদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করা। সেজন্য রাষ্ট্রীয় পরিষদের এ বৈঠকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা উন্নত করা সম্পর্কে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, পেশাগত প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ফি বাতিল, শিক্ষার্থীদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করা, প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা জোরদার করা এবং পেশাগত প্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করাসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে দরিদ্র এলাকার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি করা হবে।

বৈঠকে বলা হয়, উন্নত শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র উন্নত করা যায়। শিক্ষার কর্তব্য ব্যক্তি প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থানের উদ্ভাবন ও সমাজের সমতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের শিক্ষাবিষয়ক এ বৈঠকে দেশটির মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা উন্নত করা নিয়ে বহুমুখী প্রস্তাব পেশ করা হয়। তার মাধ্যমে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষাদান ব্যবস্থার ব্যবধান কমে আসবে এবং মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে উন্নত শিক্ষাদানব্যবস্থা উপভোগ করতে পারবে বলে আশা করি আমরা।

আচ্ছা, বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার সম্পর্কিত কিছু তথ্য শুনলেন। এবার আমরা চীনের বেইজিংয়ের নিকটবর্তী হোপেই প্রদেশের লাইশুই জেলার ওয়াংকেচুয়াং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের পরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন শোনাবো।

রাজধানী বেইজিং থেকে প্রায় ১০৫ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে পৌঁছানো যায় হোপেই প্রদেশের লাইশুই জেলায়। জেলাটির ইতু উপজেলার ওয়াংকোচুয়াং গ্রামের একটি প্রাথমিক স্কুল এ অঞ্চলে খুবই বিখ্যাত। যদিও স্কুলটি ততটা বড় নয়, তবে এর আশেপাশের ৬টি প্রশাসনিক গ্রামের ৭০০০ জনেরও বেশি গ্রামবাসীর সন্তানরা এখানে লেখাপড়া করে থাকেন।

ওয়াংকোচুয়াং গ্রামের অর্থনীতি অনেক দুর্বল। স্থানীয় অঞ্চলের প্রাথমিক স্কুলের লেখাপড়ার পরিস্থিতি দীর্ঘকাল ধরে খুবই কঠোর। শিক্ষাগ্রহণের প্রতিষ্ঠানও খুব কম যা, স্থানীয় অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম নয়।

চীনে একটি প্রবাদ আছে, 'দরিদ্র হলেও শিক্ষাগ্রহণের দুর্বলতা সহ্য করা হবে না, পরিস্থিতি কঠোর হলে শিশুদের জীবনযাপন উন্নত করতে হবে'।

পিছিয়ে পড়া শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে লাইশুই জেলার সরকার ওয়াংকোচুয়াং প্রাথমিক স্কুলের পুনর্গঠন কাজ চালু করে এবং শিক্ষাদানের ব্যবস্থাপনা স্থাপন করে। নতুন নির্মিত এ স্কুলের আয়তন ৩৪৮০ বর্গমিটার। এ সম্পর্কে স্কুলটির শিক্ষক চাং হাই ইয়ান বলেন,

'আগে এ স্কুলের মাঠ মেরামত করা হয় নি, বৃষ্টি পড়লে স্কুলের খেলার মাঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। ২০০৪ সালে পুনর্গঠন কাজের মাধ্যমে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এর আগে বিশেষ করে শীতকালে কাঠ জ্বালিয়ে ক্লাসরুম গরম করতে হতো। গত বছর থেকে সব ক্লাসরুমে বিদ্যুত চালিত তাপ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।'

বর্তমানে পরিষ্কার ও বিশাল ক্লাসরুম এবং উন্মুক্ত খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা দেখে শিক্ষক চাং অনেক খুশি।

শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে এ স্কুলে পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে পাঠাগারটিতে বইয়ের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী চাং ছেন ইয়াং বলেন,

'বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের চিন্তাভাবনা প্রসারিত হবে এবং আমরা নানা ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবো। শিশুরা ছোটবেলা থেকে গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে ভালো কাজ করতে পারবে।'

শিশুদের জন্য আরামদায়ক লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী বিশেষ করে দরিদ্র অঞ্চল ও পরিবারের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের মান উন্নত করার জন্য চীন সরকার পরপর ১২৫.৬ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ দিয়ে দরিদ্র অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের খাবার বাজেট পূরণ করে।

এ সম্পর্কে লাইশুই জেলার শিক্ষা ব্যুরোর প্রশাসনিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক লিউ ইয়ান থাও বলেন,

'২০১২ সাল থেকে লাইশুইতে পুষ্টিকর খাবার পরিকল্পনা শুরু করা হয়। তখন প্রতিটি স্কুলে একটি করে ক্যান্টিন স্থাপন করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার প্রদান করা যায় নি।

সেজন্য বিভিন্ন গ্রামের স্কুলের অবস্থা বিবেচনা করে যাদের স্কুলে ক্যান্টিন নেই সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন সকালের নাস্তায় দুধ, পাউরুটি ও ডিম প্রদান করা হয়। বিভিন্ন সেমিস্টারে তাদের খাবারে পরিবর্তন আনা হয় হয়, যাতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টির ভারসাম্যতা বজায় থাকে। প্রতিদিন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর খাবারের খরচ ৪ ইউয়ান,পাচকসহ অন্য খরচ আমাদের জেলা অন্যভাবে বহন করে। তার মানে ৪ ইউয়ানের বাজেট পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের খাবারের খরচ।

আরামদায়ক পরিবেশ ও স্বাস্থ্যকর শরীর বজায় রাখা শিক্ষাদানের একটি অংশ। দরিদ্র অঞ্চলে অবস্থিত হলেও ওয়াংকোচুয়াং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষাদানের ধারণা উন্নত। স্কুলটি শিশুদের মানসিক ও জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের শিশুদের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে যথাযথভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। বিশেষ করে আচরণ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ সম্পর্কে এ স্কুলের প্রধান ছেন কুই লোং বলেন,

'গ্রামাঞ্চলের শিশুদের অনেকে দাদা-দাদির সঙ্গে জীবনযাপন করে, তাদের সৌজন্যতার কিছু অভাব থাকে। আমাদের শিক্ষকরা সাধারণত ছুটি নিয়ে শিশুদের বাসায় সফর করেন এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। এভাবে শিশুদের মানসিক অবস্থা তারা জানতে পারেন। স্কুলে আমরা নিয়মিতভাবে আচরণ সম্পর্কিত বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করি। এভাবে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের আচরণ সম্পর্কে একটি ভালো প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে স্কুলটি।'

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষার ওপর অনেক মনোযোগ ও সমর্থন দেয়। দরিদ্র অঞ্চলের অনেক স্কুলে তা কল্যাণ বয়ে এনেছে। বর্তমানে ওয়াংকোচুয়াং প্রাথমিক স্কুলের বিভিন্ন সমস্যা ধাপে ধাপে সমাধান করা হয়েছে এবং শিক্ষাদানের মানও উন্নত হয়েছে। শিশুদের স্নিগ্ধমাখা হাসি ও খেলার মাঠের আনন্দময় দৃশ্য যেন বসন্তকালের সূর্যালোকের মতো প্রত্যেকের মনকে উষ্ণ করে তোলে।

বন্ধুরা, এবার আমরা একটি গান শুনবো। আর এ গানটির নাম 'আমাদের জীবনে সুখের সূর্যালোক দেখা যায়'।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আর এ সুন্দর ও মিষ্টি গানের মধ্য দিয়ে শেষ করছি আমাদের আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানটি। তবে এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিও'র মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে আমাদের বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn

এবার তাহলে বিদায়। আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবারো আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। চাই চিয়ান।

'বিদ্যাবার্তা' পরিবেশনায় ছাওইয়ানহুয়া সুবর্ণা ও এনামুল হক টুটুল।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040