বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় নারী
  2016-05-08 15:49:12  cri
সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশার নাম। ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাংবাদিকতা সবার পেশা কিন্তু দেখা যায়,সাংবাদিকতায় পুরুষের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহণ নিতান্তই কম। দেড়যুগ আগেও বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় নারীদের হার ছিল শতকরা ৭ শতাংশ। তাদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ রিপোর্টার। কিন্তু বর্তমানে দেশে নারী সাংবাদিকরা এখন সে অবস্থানে নেই। এগিয়েছে অনেক দূর। মাড়িয়েছে অনেকটা পথ। বিপুলসংখ্যক মেয়ে সাংবাদিকতায় আসছে। নারীরা এখন ডাক্তারি আর মাস্টারি পেশার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অন্যান্য পেশার মতোই সাংবাদিকতা পেশায় পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও পারদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছে।

বর্তমানে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে কল্পনার চেয়েও বেশি। মানুষ শুধু সংবাদপত্র আর টিভি চ্যানেলে আটকে নেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে এফএম রেডিও এবং অনলাইন মিডিয়া। যে কোনো ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে আমাদের সামনে চলে আসছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং শত শত অনলাইনের মাধ্যমে।

কী সংবাদপত্র,রেডিও-টিভি,অনলাইন প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী সাংবাদিকদের দীপ্ত পদচারণা লক্ষণীয়। এখন অজপাড়াগাঁ থেকে রাজধানীর অলিগলির অনেক অজানা খবরও নারী সাংবাদিকরা নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন ১৯৯৮ সালে ঢাকার ২০টি দৈনিক ৩টি ম্যাগাজিনে এবং ৫টি সংবাদ সংস্থার ৬৯ জন নারী সাংবাদিকদের মধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপে দেখা যায় সমগ্র সংবাদ মাধ্যমে ৭ শতাংশ সংবাদকর্মী নারী। তাদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ রিপোর্টার।

রিপোর্টিংয়ে নারীরা এখন আর শতকরা ২ শতাংশে আটকে নেই। সাংবাদিকতার একটি অংশ রিপোর্টিং,যেখানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ,সেখানে সাংবাদিকতার সব অংশ মিলে নারী সাংবাদিকদের শতকরা হার ১০-১২ শতাংশের নিচে নেই। এসব নবীনদের আগমনে সাংবাদিকতায় নারীদের অবস্থানগত পরিবর্তন আজ বাস্তবতা।

২০১৩ সালের ১৪-১৬ মে পিআইবি ও নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী ৭০ জন নারী সাংবাদিক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এই নারীরা সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা শিক্ষায় ঢাকা,রাজশাহী,চট্টগ্রাম এরপর সম্প্রতি জগন্নাথ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ খোলা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে ১৯৯৮ সালে যখন নারী সাংবাদিকদের শতকরা হারের জরিপ করা হয় তখন কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকতায় আসতেন। ওই বছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম ব্যাচ শিক্ষা জীবন শেষ করেন।

জানামতে,১৯৯৮-২০০১ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করা কোনো নারীকে সাংবাদিকতায় দেখা যায়নি। ওই চার বছরে কমপক্ষে ৩০-৩২ জন নারী শিক্ষার্থী সাংবাদিকতা থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০২ সালের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পাস করে সরাসরি রিপোর্টিংয়ে আসেন চ্যানেল আইয়ের রিপোর্টার জান্নাতুল বাকেয়া কেকা। সেখান থেকে শুরু গত ১২ বছরে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পাস করা শতাধিক নারী শিক্ষার্থী গণমাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে এসেছেন। যা সাংবাদিকতায় নারী অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ইতিবাচক দিক।

উপমহাদেশে বেগম রোকেয়া,সুফিয়া কামাল,নুরজাহান বেগম দেখিয়েছেন সাংবাদিকতা সবার পেশা। বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় নারীর পদচারণা শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার একমাস আগে বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। এ সাময়িকীর সম্পাদক নুরজাহান বেগমের হাত ধরেই মূলত নারীরা সংবাদপত্র জগতে প্রবেশ করে। আর ৬০-এর দশকে হাসিনা আশরাফ,নিশাত সাদানী সার্বক্ষণিক রিপোর্টিং পেশা বেছে নেন। ৭০-এর দশকে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। দৈনিক সংবাদে বেবী মওদুদ,পূর্বদেশে নার্গিস রফিক বানু। দি পিপলে শিরিন রহমান ও শাহিদা হোসেন,মাহমুদা চৌধুরী প্রমুখ। আর স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের যুগে মুন্নী সাহা ও শাহনাজ মুন্নী রিপোর্টিংয়ে অগ্রদূত।

অভিযোগ আছে নারী সংবাদকর্মীদের আগে কোনো সংবাদ প্রতিষ্ঠানে ডেস্কে বা সাব-এডিটর,প্রুফরিডার টেবিলে বসিয়ে রাখা হতো। বেড়াজাল নারীরা ভেঙেছেন অনেক আগেই। বর্তমানে মিডিয়ার ব্যাপক প্রসারে এবং সংবাদ মাধ্যমে তাতক্ষণিকতা যোগ হওয়ার পরও রিপোর্টিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগগুলোয়ও তারা ভালো করছেন। আমাদের দেশে সম্প্রতি যোগ হয়েছে কমিউনিটি রেডিও। সেখানেও নারী সাংবাদিকদের সাড়া জাগানো অংশগ্রহণ। অন্তত ৩টি কমিউনিটি রেডিওতে নারীরা স্টেশন কর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতা তো আর প্রিন্ট মিডিয়ার দৈনিক,সাপ্তাহিক,মাসিক, পাক্ষিক পত্রিকায় বন্দি নেই।

সম্প্র্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত 'সাংবাদিকদের নেতৃত্বে নারী সাংবাদিকদের অবস্থান'শীর্ষক এক সেমিনারে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা গণমাধ্যমগুলোয় ২৫ শতাংশ নারী নিয়োগের দাবি করেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে গণমাধ্যমে ২৫ ভাগ নারী সাংবাদিক নিয়োগের চেষ্টা ও তদবির করবেন বলে জানান। তথ্যমন্ত্রীর এ ইতিবাচক মনোভাব সাংবাদিকতায় নারীদের আগমনে নতুন প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

পেশাগত দক্ষতার বিকল্প নেই। নিজের চেষ্টায় জ্ঞানে পড়াশোনায় ও পরিশ্রমে এগিয়ে যেতে হবে। নিজেকে সাংবাদিক হতে হবে। এতে হবে কি,যারা এ পেশায় আছেন তারা সফল হবেন,তাদের দেখে অন্যরা উতসাহী হবেন। তাদের জন্য একটা ভালো অবস্থান তৈরি হবে। এতে উপকৃত হবে গণমাধ্যম, উপকৃত হবে গোটা সমাজ।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040