প্রসঙ্গ: ভারতের অর্থনীতি
  2016-05-07 18:02:27  cri
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর রাঘুরাম জি রাজন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে জি-টোয়েন্টির অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের সম্মেলনে বলেন, ভারতের অর্থনীতি বিগত ১০ বছর ধরে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য কমায় এবং ভারতে মুদ্রাস্ফীতির হার কমায়, ভবিষ্যতেও দেশটির অর্থনীতিতে মধ্যম-উচ্চ গতির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে থাকবে। অবশ্য পাশাপাশি তিনি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার প্রেক্ষাপটে নিজের দেশের অর্থনীতিকেও মন্দার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, আসন্ন বর্ষাকালে ভারতে কৃষি-উত্পাদন বৃদ্ধি পাবে। দেশটির জাতীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী জুন মাসে বৃষ্টিপাত হবে আগের চেয়ে বেশি। এতে ভারতের টানা দুই বছরের খরাবস্থার অবসানও ঘটবে। এদিকে, 'হিন্দুস্তান টাইমস' পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, যথেষ্ট বৃষ্টি হলে ব্যাপকভাবে ভারতের কৃষি-উত্পাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, যা প্রকারান্তরে দেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

জানা গেছে, ভারতে সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫ শতাংশেরও কম, যা লক্ষ্যমাত্রার নীচে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কিছু করার সুযোগ রয়েছে। মুদ্রানীতি উদার করে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো উপকৃত হবে।

এদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে সেদেশের শিল্প-উত্পাদন বাড়ে ২ শতাংশ। শিল্প-উত্পাদন একটানা তিন মাস কমার পর বাড়লো।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির হার খুব কম হবে। কিন্তু আইএমএফ মনে করে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অব্যাহত মূল্যহ্রাসের ফলে, ভারতের অর্থনীতিতে চলতি বছর ও পরের বছর ৭.৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের অব্যাহত মূল্যহ্রাস ভারতের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এটা বাইরের কারণ। ভারতকে প্রয়োজনীয় তেলের প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু বিগত দুই বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এতে ভারতের প্রতি বছর সাশ্রয় হয়েছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে। এ অর্থ ভারতের মোট জিডিপি'র ৩ শতাংশ।

মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই 'মেক ইন ইন্ডিয়া' কর্মসূচি হাতে নেয়। সরকারের ইচ্ছা, সবকিছু ভারতের মাটিতেই তৈরি হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের রফতানির হার টানা ১৪ মাস ধরে কমছে। গোটা বিশ্বেই আসলে পণ্যের চাহিদা কমছে। এটা তারই একটি ফল। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে উত্পাদন-শিল্পে উন্নতি করতে হলে, ভারতকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে।

ভারতের শ্রমসম্পদ প্রত্যাশিত মাত্রায় সমৃদ্ধ নয়। মোদি সরকার ২০২২ সালের মধ্যে ৪০ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অথচ শ্রম ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, বর্তমান ভারতে প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী কম। 'মেক ইন ইন্ডিয়া' কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে, এ খাতে প্রশিক্ষিত কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে।

ভারতের বাজার-পরিবেশ উন্নত করাও জরুরি। কারণ, বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের জন্য শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান ১০০-এর নীচে।

ভারতীয় বিশ্লেষকরা জাতীয় অর্থনীতিতে উত্পাদন-শিল্পের অবদান ১৫ থেকে ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি করার কথাও বলেন। একে ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবেও চিহ্নিত করেন তারা।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040