20160503yinyue.mp3
|
সুই পেই তোং চীনের সংগীতজ্ঞ সমিতির স্থায়ী ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চীনের নৃত্যগীত থিয়েটারের উপপ্রধান ছিলেন। তার ৬০টিরও বেশি সংগীত চীনের নানা সংগীত প্রতিযোগীতায় পুরস্কার পেয়েছে।
সুই পেই তোং
১৯৯০ সালে বেইজিং এশীয় গেমসের থিম সং ছিল 'এশিয়ার গতি'। এ গানের কথা লিখেছেন চাং লি, সুর করেছেন সুই পেই তোং। এ গানটি গেয়ে গায়ক লিউ হুয়ান এবং গায়িকা ওয়েই ওয়েই গানের জগতে শীর্ষস্থানে পৌঁছে যান। গানটি ১১তম 'এশীয় গেমস' শীর্ষক গান বিষয়ক প্রথম প্রচার পুরস্কার পেয়েছে। বন্ধুরা, শুনুন এ গানটি।
সুই পেই তুং ১৯৭০ সালে ফুচৌ সামরিক অঞ্চলের নৃত্যগীত দলে ভর্তি হন। ১৬ বছর বয়সে সে দলের প্রথম চেলো বাদক হন তিনি। ১৯৭৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সংগীত ইনস্টিটিউটের কম্পোজ বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে তিনি স্নাতক হওয়ার পর আবার ফুচৌ নৃত্যগীত দলে ফিরে যান। সেখানে তিনি কম্পোজ করার পাশাপাশি সংগীত পরিচালক হন।
সুই পেই তুং নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন, সুর করতে পারেন, গানের কথা লিখতে পারেন এবং গানও গাইতে পারেন। তিনি টেলিভিশনে প্রচারিত 'সম্রাট ইয়োং চাং' নামক নাটকের প্রধান গান লিখেছেন। গানটির নাম 'জনগণের মন জয় করা গেলে পৃথিবী জয় করা যায়'। এ গানটি চীনের বিখ্যাত গায়ক লিউ হুয়ান গেয়েছেন।
তবে এ আসরে আমি আপনাদের শোনাবো সুরকার শুই পেই তোংয়ের নিজের কণ্ঠে গাওয়া কয়েকটি গানটি। এ গানে বলা হয়েছে, 'প্রাচীনকালের বীরদের সাফল্য ও ব্যর্থতা প্রসঙ্গে কে স্পষ্টভাবে বলতে পারে! প্রাচীনকালের সম্রাটদের কৃতিত্ব কেবল পরবর্তীকালের লোকেরা বিশ্লেষণ ও যাচাই করে যায়। তিনি দেশ স্বশাসন করে সুনাম সংরক্ষণ করতে চাইলেও মৃত্যুর পর কারো কারো দ্বারা সম্রাটদের গালি দেওয়া এড়ানো যায় না। বন্ধুরা, শুনুন 'জনগণের মন জয় করা গেলে পৃথিবী জয় করা যায়' নামের গানটি।
১৯৯৯ সালে সুরকার সুই পেই তুং এবং লেখক চাং নান বিশেষ করে কণ্ঠশিল্পী সোং জু ইংয়ের জন্য 'মাতৃভূমির জন্য নিবেদিত গান' লেখেন। এ গানটি সোং জু ইং প্রথম নান নিং আন্তর্জাতিক লোকসংগীত শিল্পকলা উত্সবে পরিবেশনের করে ব্যাপক প্রশংসা পান। এরপর এ গানটি নান নিং আন্তর্জাতিক লোকসংগীত শিল্পকলা উত্সবের থিম সং হিসেবে সারা চীনে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানটি পরিবেশনের সুযোগ হয়। বন্ধুরা, এখন শুনুন কণ্ঠশিল্পী সোং জু ইয়ের গাওয়া 'মাতৃভূমি জন্য নিবেদিত গান' । এ গানে বলা হয়েছে, পাহাড়ে উঠে পাহাড়ী গান গাই। নদীতে মাছ ধরার সময় মাছের জন্য গান গাই। রাখালিয়া গান গাইলে গরু ও ছাগলের সংখ্যাও বাড়বে। পিয়নী ফুল ফুটলে আমরা ফুলের গান গাই। লিচু লাল হলে আমরা মিষ্টি গান গাই। আনন্দের গান গাইতে গাইতে আমাদের মৈত্রী নদীর মতো সুদীর্ঘ হবে। বসন্তের গান গাওয়ার পর শরত্কালের গান গাইবো। চায়ের গান গাওয়ার পর মদের গান গাইবো। পুরোনো গান গাওয়ার পর নতুন গান গাইবো। প্রেমের গান গাওয়ার পর সুখের গান গাইবো। বর্তমানে সবার মন ভালো। গান গাইতে গাইতে আমাদের সামনে রাস্তা আরো বিস্তীর্ণ হবে।"
'মাতৃভূমি জন্য নিবেদিত গান' চীনে জনপ্রিয় হওয়ার কারণে অনেক শিল্পী নিজের মতো নতুন করে এ গানটি গেয়েছেন। বন্ধুরা, এবার শুনুন আপাও নামে এক গায়কের কণ্ঠে গাওয়া এ গানটি।
সুই পেই তোং বিভিন্ন সময় চীনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগীত প্রতিযোগিতায় বিচারক হয়েছেন। তিনি চীনের প্রতিনিধি হিসেবে বেশ কয়েকবার অন্য দেশে গিয়ে নানা আন্তর্জাতিক সংগীত উত্সব ও পপ সংগীত প্রতিযোগিতার বিচারক হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, রোমানিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মিশর, রাশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশ সফর করেন।
১৯৮৯ সালে টেলিভিশন নাটক 'বেড়া, নারী ও কুকুর' প্রচারের পরপরই জনপ্রিয় হয়। এ নাটকের প্রধান সুর করেছেন সুই পেই তোং। বন্ধুরা, এখন শুনুন এ নাটকের প্রধান গানটি। গানের নাম 'বেড়া দেওয়া দেয়ালের ছায়া'। এ গানের কথা লিখেছেন চাং লি। গেয়েছেন সুন কুও ছিং আ এবং মাও আমিন। এ গানে বলা হয়েছে, তারা তো আগের সে তারাই। চাঁদও আগের সে চাঁদ। পাহাড়ও আগের সেই পাহাড়, বাবা-মাও নিজের আপন বাবা-মা। তবে বেড়া দেওয়া দেয়ালের ছায়া কেনো এতো লম্বা!'
সুই পেই তুং অনেক সংগীত সৃষ্টি করেছেন। তিনি ৬০টিরও বেশি টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের জন্য সুর করেছেন। তা ছাড়া আরো অনেকের জন্য একক কণ্ঠের গানও লিখেছেন। ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে সুই পেই তুংয়ের গান 'আমার প্রিয় জন্মস্থান' তৃতীয় 'এশীয় কাপ' জাতীয় তরুণ গায়কদের টেলিভিশন প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ নতুন গানের পুরস্কার পায়। বন্ধুরা, এবার শুনুন ফান লিন লিনের গাওয়া 'আমার প্রিয় জন্মস্থান' গানটি।
১৯৮৯ সালের 'বেড়া, নারী ও কুকুর' নামের টেলিভিশন নাটকের সমাপনী সংগীত চীনের পপ সংগীত জগতের একটি প্রতিনিধিত্বশীল কাজে পরিণত হয়েছে। এ গানের নাম 'জীবনে সুখ দুঃখ সকলই রয়েছে'। এ গানের কথা লিখেছেন চাং লি, সুর করেছেন জো সিয়াও ওয়েই। এ টেলিভিশন নাটক প্রচারের পর 'জীবনে সুখ দুঃখ সকলই রয়েছে' নামের গানটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। এ গানের ২ কোটি ক্যাসেট বিক্রি হয়েছে। ১৯৮৯ সালে এ গানটি চীনে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত পপ সংগীত। বন্ধুরা, এবার শুনুন লি নার গাওয়া 'জীবনে সুখ দুঃখ সকলই রয়েছে' নামের গানটি।
শুই পেই তোং টেলিভিশন নাটক বা চলচ্চিত্রের জন্য অনেক সুর করেছেন। তিনি মনে করেন, একজন ভালো সুরকার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রেরণা পায়। নাটক বা চলচ্চিত্রের গল্পের মধ্যে হারিয়ে গেলে ঠিক হবে না। তিনি সংগীত সৃষ্টি করতে ভালোবাসেন। তিনি বলেন, আমি সংগীত ছাড়া অন্য কোনো সখ খুঁজে পাই না।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ চীনের সুরকার সুই পেই তুংয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং তার কয়েকটি গান শুনলেন। আশা করি, গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে।
আজকের 'সুর ও বাণী' আসর এ পর্যন্তই। আমি বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)