বিচারক নাজমুন আরা সুলতানা : নাজমুন আরা সুলতানা দেশের প্রথম নারী বিচারক। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগেরও প্রথম নারী বিচারকের নেতৃত্ব পান তিনি। একইসঙ্গে আপিলে কোনো বেঞ্চের নেতৃত্বে থাকা প্রথম নারী বিচারক তিনি।
নাজমুন আরা সুলতানা ১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম চৌধুরী আবুল কাশেম মইনুদ্দিন। মায়ের নাম মরহুমা বেগম রাশিদা সুলতান দ্বীন।
তিনি ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬৭ সালে মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ময়মনসিংহল ল' কলেজে থেকে ১৯৭২ সালে এলএলবি ডিগ্রি নেন।
১৯৭৫ সালের আগে বিচার বিভাগে কোন নারীর চাকরির সুযোগ ছিল না। নাজমুন আরা সুলতানাই প্রথম ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর সহকারি জজ হিসেবে নিয়োগ পান। তিনিই দেশের প্রথম নারী বিচারক। নিম্ন আদালত থেকে ধীরে ধীরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে তিনি পা রেখেছেন।
১৯৯০ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০০০ সালের ২৮ মে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ২০০২ সালে তিনি হাইকোর্টের পূর্ণ বিচারক পদে নিয়োগ পান। আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী : আপিল বিভাগের মতো হাইকোর্ট বিভাগেও পিছিয়ে নেই নারী বিচারকরা। হাইকোর্টের বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী তাদের একজন। সাবেক বিচারপতি এটিএম মাসুদ ও আমিনুন নেসার বড় সন্তান তিনি। ১৯৫৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।
১৯৮১ সালের ২২ আগস্ট বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন। এরপর তিনি ১৯৯৬ সালের ১৪ মে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসাবে তালিকা ভূক্ত হন।
সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন। এর দুই বছর পর তিনি হাইকোর্টের পূর্ণ বিচারক পদে নিয়োগ পান।
সালমা মাসুদ চৌধুরী আইন চর্চা জন্য কমনওয়েলথ সচিবালয় কর্তৃক আয়োজিত মালেশিয়ার কুয়লালামপুরে আইনসভা বিষয়ক ড্রাফটিং কোর্স করেন। পাকিস্তানের লাহোরে আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সম্মেলনে তিনি তার লেখা ' মুসলিম পরিবারিক আইন ও বাংলাদেশে নারী' শিরনামের গবেষণা পত্র উপস্থাপন করেন।
বিচারক জিনাত আরা : বিচারক জিনাত আরা মরহুম এইচএমআর সিদ্দিকী ও মরহুম বেগম আয়েশা সিদ্দিকীর মেয়ে। তিনি ১৯৫৩ সালের ১৫ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় ও স্কুল আব হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ডিগ্রী লাভ করেন।
তিনি ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বরে বিচার বিভাগে মুনসেফ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে তিনি পদন্নোতি পান। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিলে তিনি হাইকোর্টের পূর্ণ বিচারক পদে নিয়োগ পান।
বিচারক ফারাহ মাহবুব : বিচারক ফারাহ মাহবুব ১৯৬৬ সালের ২৭ মে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মাহবুবুর রহমান। মায়ের নাম বেগম ফিরোজা বেগম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাশ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন।
তিনি ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টের এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপিল বিভাগে আইনজীবী হন। এরপর ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত হন। ২০০৬ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণ নিয়োগ পান।
বিচারক নাইমা হায়দার : বিচারক নাঈমা হায়দার সাবেক বিচারক মরহুম বদরুল হায়দার চৌধুরী ও বেগম আনোয়ারা চৌধুরীর মেয়ে। তিনি ১৯৬২ সালের ১৯ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কেল বিশ্ববিদ্যায়ল ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।
তিনি ১৯৮৯ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দান করেন। ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী ও ২০০৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হন। তিনি ৩০ জুন ২০০৯ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের অতিরিক্ত আইনজীবী নিযুক্ত হন। ২০১১ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের পূর্ণ বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান।
নাঈমা হায়দার দেশে-বিদেশে অন্তত ২০টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া তিনি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালী, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যরান্ড, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, তুরস্ক, চীন, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়, মালেশিয়া, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও সৌদি আরব সফর করেন।
(মান্না)