ইন্টারনেটে ডিজিটাল গ্রন্থপাঠ
  2016-04-20 10:28:14  cri



গত ১৩ এপ্রিল চীনের চে চিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাং চৌতে অনুষ্ঠিত হয় ইন্টারনেটে ডিজিটাল গ্রন্থপাঠ সম্পর্কিত দ্বিতীয় সম্মেলন। সম্মেলনে প্রকাশিত শ্বেতপত্র অনুযায়ী, ২০১৫ সালে চীনে ডিজিটাল প্রকাশনাশিল্পের আয় ৪৪,০০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। তা ছাড়া, এ বছর ডিজিটাল গ্রন্থ পাঠকের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৬০ লাখে। অন্যভাবে বললে, গত তিন বছর ধরেই বার্ষিক গড়ে ৪০ শতাংশ হারে বেড়েছে জিজিটাল গ্রন্থ পাঠকের হার।

বর্তমানে চীনে ইন্টারনেটে যারা গ্রন্থ বা প্রবন্ধ-নিবন্ধ পড়ছেন, তাদের ৯০ শতাংশের বয়সই ১৬ থেকে ৪৫ বছর। তাদের মধ্যে অধিকাংশই আবার সাধারণ অফিসকর্মী, স্নাতক ডিগ্রীধারী, এবং মধ্যম আয়ের মানুষ। অঞ্চলভেদেও এ সংখ্যা কমবেশি হয়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ইন্টারনেটে বই পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি। এ ছাড়া, চীনে যে তিনটি শহরে ডিজিটাল গ্রন্থের পাঠক বেশি সেই তিনটা শহর হচ্ছে: ছেংতু, সেন চেন ও বেইজিং।

ডিজিটাল পাঠকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল প্রকাশনা শিল্পও দ্রুত উন্নত হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১ সালে চীনে ডিজিটাল প্রকাশনা শিল্পে মোট বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১৩,৭৭০ কোটি ইউয়ান। সংবাদ ও প্রকাশনাশিল্পের মোট আয়ের ৯.৫ শতাংশ এটি। আর ২০১৫ সালে ডিজিটাল প্রকাশনাশিল্পে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪,০০০ কোটি ইউয়ানে।

প্রতিদিন সকালে বেইজিংয়ে পাতাল রেলে একটি সাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। অনেকেই মোবাইল ফোনে সংবাদপত্র পড়ছেন বা পড়ছেন কোনো বই বা প্রবন্ধ। এটা এখন অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে ডিজিটাল গ্রন্থ বা প্রবন্ধ বা সংবাদ পাঠকের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। এদের মধ্যে কম্পিউটারের মাধ্যমে পাঠকারীর চেয়ে মোবাইল ফোনে পাঠকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ। তা ছাড়া, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন চীনা মোবাইফোনের মাধ্যমে তাদের পছন্দের গ্রন্থ বা প্রবন্ধ বাছাই করে। ডিজিটাল গ্রন্থ বা সংবাদ বা প্রবন্ধ পাঠের এ অভ্যাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কী কী পরিবর্তন আনছে?

২০১৩ সালে চীনারা মাথাপিছু গড়ে ৪.৭২টি বই পড়েছে। সাম্প্রতিককালে জনগণের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে কিছু উদ্যোগও গ্রহণ করে সরকার। 'গণপাঠ' বিষয়টি ইতোমধ্যেই তিন বার সরকারি কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

এর পর থেকেই ডিজিটাল গ্রন্থ পাঠের হার ৫৮ শতাংশ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে ব্যবধানও কমে আসছে দিন দিন। চীনা সংবাদ ও প্রকাশনা গবেষণালয়ের প্রধান ওয়ে ইউয়ু সান বলেন, মুদ্রিত গ্রন্থ যেসকল মানুষ ও অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে না, সেসব মানুষ বা অঞ্চলেও ডিজিটাল গ্রন্থ পৌঁছে যাচ্ছে। তা ছাড়া, ইন্টারনেটের উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের পড়ার অভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে।

২০১০ সাল থেকে চীনে ইন্টারনেট পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে ডিজিটাল প্রকাশনার বাজার। এ খাতে মোবাইল টার্মিনালগুলোর আয়ও সম্ভবত ১০০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে। ডিজিটাল পঠনের মোট আয়ের ৯০ শতাংশই হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ও মোবাইল টার্মিনালগুলোর আয়।

মোবাইলসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মোবাইল-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সা ইউয়ু চিয়া বলেন, 'চায়না মোবাইল প্রতিষ্ঠা করে কু মি সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি কোম্পানি এক বছরের মধ্যে চীনে বৃহত্তম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। বর্তমানে এ কোম্পানির মোবাইলসেবা ব্যবহার করে ৪৫ কোটি মানুষ ইন্টারনেটে বিভিন্ন গ্রন্থ, প্রবন্ধ ইত্যাদি পড়ছে। মোবাইফোন এখন পড়ার একটি নতুন মাধ্যম এবং আমরা এ ক্ষেত্রে নতুন যুগে প্রবেশ করেছি।'

২০১৫ সালে চীনের ডিজিটাল পাঠের তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল: ১. জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলোর অধিকাংশই ফ্যান্টাসি ধরনের ও প্রেমের; ২. যদি কোনো এক ধরনের গ্রন্থ জনপ্রিয় হয়ে যায়, তবে পর পর একই ধরনের গ্রন্থ আসতে থাকে। অর্থাত নতুনত্বের অভাব; ৩. ইন্টারনেটে প্রকাশিত উপন্যাসের ভিত্তিতে টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ বাড়ায়, সংশ্লিষ্ট লেখকদের আয় বেড়েছে। ২০১৫ সালে গ্রন্থস্বত্ব থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ জন চীনা লেখকের ৬ জনই ছিলেনঅনলাইন লেখক।

ডিজিটাল প্রকাশনা লেখকদের জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি

করেছে। অনলাইনে পাঠকদের সঙ্গে লেখকদের সহজে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়। এতে লেখকরা উপকৃত হন। ৯০ শতাংশ ইন্টারনেট পাঠক জানিয়েছেন, তাদের প্রিয় ডিজিটাল উপন্যাসের ভিত্তিতে তৈরি টিভি নাটক বা চলচ্চিত্র দেখতে তারা বেশি পছন্দ করেন।

আজকাল আবার কোনো কোনো ডিজিটাল প্লাটফর্মে পাঠকদের পছন্দমতো লেখা প্রকাশ করার ব্যবস্থা আছে। এমনকি গল্পের পরিণতিও হয় পাঠকের পছন্দমতো।

আগেই বলেছি, ২০১১ সাল থেকে চীনে ডিজিটাল পঠনশিল্পের আকার দ্রুত বাড়ছে। ২০১৬ সালে ডিজিটাল প্রকাশনা শিল্পের আকার ১০১০ কোটি ইউয়ান হবে।

তবে ডিজিটাল প্রকাশনাশিল্পে বড় সমস্যা 'কপিরাইট সংরক্ষণ এবং ডিজিটাল পঠনশিল্পে উন্নয়ন'। ডিজিটাল প্রকাশনা শিল্পে পণ্য বা সেবার মান নিয়ন্ত্রণ যেমন সহজ নয়, তেমনি এসব পণ্য বা সেবার কপিরাইট নিশ্চিত করাও কঠিন। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে যেসব আইনকানুন হয়েছে, তা যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি। উন্নত বিশ্বে কপিরাইট সংরক্ষণ ব্যবস্থা খুবই কঠোর ও কার্যকর। অথচ চীনের আইন অনুযায়ী, ডিজিটাল প্রকাশনার ক্ষেত্রে গ্রন্থস্বত্ব লঙ্ঘন করলে মাত্র এক বছরের জেল ও দশ-বারো হাজার ইউয়ান জরিমানার ব্যবস্থা আছে। এতে ইন্টারনেট লেখকদের অধিকার পুরোপুরি রক্ষিত হচ্ছে না।

আশার কথা, চীনের সরকার এ দিকে নজর দিয়েছে। একটি কার্যকর ও পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরির কাজ চলছে। এ আইনটি কার্যকর করা হলে আশা করা যায় যে, ইন্টারনেট লেখকদের অধিকার সংরক্ষিত হবে।

এ ছাড়া, ইন্টারনেটে পাঠের অভ্যাস বাড়াতেও সরকার বিভিন্ন উত্সাহব্যঞ্জক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আর বৈধ ওয়েবসাইটগুলো থেকেই যেন তারা বই বা প্রবন্ধ পড়েন এবং ভিডিও ও চলচ্চিত্র দেখেন, তা নিশ্চিত করতেও সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040