দশ বছর আগে একটি কংফু স্কুল থেকে স্নাতক ডিগ্রী পাওয়ার পর ছি ইয়াং একা বেইজিংয়ে এসেছিলেন। তিনি বেইজিংয়ে একাধিক চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁয় ওয়েটার এবং সেফ হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১০ সালে ছি ইয়াং নিজের একটি কোম্পানি গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেটি ব্যবসাসফল হয়নি। ফল সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এ সম্পর্কে ছি ইয়াং বলেন, 'আসলে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো বড় ঘটনা ছিলা না, কিন্তু এতে আমার আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যায়। বরাবরই আমার ধারণা ছিল, আমি ব্যবসা করতে পারি। কিন্তু কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার সে বিশ্বাসে চিড় ধরে। আমি ব্যবসা ছেড়ে আবার চাকরি করা শুরু করি। কিন্তু ব্যবসা করার আগ্রহ আমার ফুরিয়ে যায়নি। একসময় মনে হলো বেইজিং থেকে নিজের জন্মস্থানে ফিরে গিয়ে ব্যবসা করে দেখা যেতে পারে। বেইজিংয়ে সবকিছুর দাম বেশি, কিন্তু আমার জন্মস্থানে তুলনামূলকভাবে দাম কম।'
যেই ভাবা, সেই কাজ। ছি ইয়াং ২০১৫ সালের প্রথম দিকে নিজের জন্মস্থানে গিয়ে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন।
ছি ইয়াংয়ের রেঁস্তোরা জুছেং শহরের নানকুয়ান সড়কের ১০০ নম্বরে অবস্থিত। সেজন্য 'নানকুয়ান রোড ১০০ নম্বর' নামটি তিনি রেস্তোরাঁর জন্য পছন্দ করেন। এরপর তিন মাস ধরে চলে রেস্তোরাঁর ইন্টেরিয়র ডেকোরেশানের কাজ। পরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে রেস্তোরাঁটি চালু হয়। রেস্তোরাঁয় মোট পাঁচটি ঘর রয়েছে। ঘরগুলোর নাম হল থাংলি, চাইউয়ে, ছিংগেং, ইউদু ও লুয়ানজু। ঘরগুলোর বাইরে দু'পাশে বাঁশ, পিওনি গাছ আছে। 'আমার রেস্তোরাঁয় জানালা, দরজা ও আসবাবপত্র কাঠ দিয়ে তৈরী। ঘরের মেঝেতে ইট বাসনো হলেও, বাইরের সাজসজ্জায় প্রাচীন বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমার মনে হলো, প্রাচীন বৈশিষ্ট্যময় সাজ-সজ্জা বেশি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। গ্রীষ্মকালে আমি এখানে আরো বেশি গাছ ও ফুল চাষ করতে পারবো। আমি বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য অতিথিদেরকে দেখাতে চাই। আমার স্বপ্ন হলো, তিন বছরের মধ্যে রেস্তোরাঁটিকে জুছেং শহরের সবচেয়ে ভালো রেস্তোরাঁয় পরিণত করা।'
ছি ইয়াংয়ের রেস্তোরাঁর খাবারও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। চার ঋতুতে এখানে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়। এতে রেস্তোরাঁটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। 'রেস্তোরাঁর প্রতিটি খাবারের ব্যাপারে আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিই। খাবার তৈরির বিভিন্ন উপাদান বাছাই ও রান্নার পদ্ধতিসহ প্রতিটি কাজে আমার অংশগ্রহণ থাকে। আমি বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন খাবার বিক্রয় করি।'
ছি ইয়াংয়ের মনে হয়, ক্রেতারদের চেয়ে তাঁর কর্মচারীদের মন ভালো রাখা তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, ক্রেতাদের চেয়ে আমার কর্মচারীর মন ভালো রাখা আমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কর্মচারীদের মন ভালো থাকলে, ক্রেতাদের মনও ভালো হবে। আমার কর্মচারীরা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। তারা আমার সঙ্গে থেকে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়।'
প্রথম ব্যবসা ব্যর্থ হওয়ার পর ছি ইয়াং আগের চেয়ে আরও বেশি পরিপক্ক হয়েছেন। তিনি এখন ভবিষ্যত্ পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছেন। তিনি বলেন, 'আমি প্রতিটি বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা করি। স্বপ্ন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবসম্মত হওয়া এবং তা পূরণ করার জন্য কাজ করে যাওয়া তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'