৬জন চীনা প্রবীণ নিজেরা গাড়ি চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি রাজ্যে ভ্রমণ করেন
  2016-09-03 18:27:40  cri



সু তা চুং ও জিন খ্য ইন দু'জন ভাল বন্ধু। ৭৩ বছর বয়সি সু তা চুং মূত্রাশয় ক্যান্সারের কারণে ৪ বার সার্জারির মধ্য দিয়ে গেছেন। তবে সম্প্রতি এ দুই বন্ধু অন্য চার জন প্রবীণকে নিয়ে অবিশ্বাস্য এক ভ্রমণে বের হন। তারা ৩১ দিনে ৫০ হাজার ইউয়ান ব্যয় করে নিজেরা গাড়ি চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি রাজ্যে ভ্রমণ করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এই ৬ চীনা প্রবীণ ইংরেজি বলতে পারেন না।

ভ্রমণ প্রসঙ্গে সু তা চুং বলেন ,'স্বপ্নের মতো। আমি সবার সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে চাই। বিশেষ করে, সেসব প্রবীণের সঙ্গে যারা আমাদের মতো ভ্রমণ করতে চান। '

সু তা চুং হু পেই প্রদেশের রাজধানী উ হান শহরের বাসিন্দা। তিনি অন্যান্য চীনা প্রবীণদের মতোই স্ত্রীর সঙ্গে নাতীর যত্ন নেন।

গত ডিসেম্বর মাসে, তিনি ও ৬৮ বছর বয়সি বন্ধু জিন খ্য ইন একসাথে তাইওয়ানে ভ্রমণ করেছেন। তাইওয়ানে জিন খ্য ইনের স্ত্রীর ছোট ভাই লি চিয়াং বিন অন্য কয়েক জন প্রবীণের সঙ্গে আলাপের সময় যুক্তরাষ্ট্রে গাড়িভ্রমণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাব শুনে সু তা চুং খুব আগ্রহ দেখান। তিনি ভাবলেন, নিজেরা গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করলে, ইচ্ছেমতো যেখানে ইচ্ছা যাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। সু তা চুং ও অন্য ৫ প্রবীণ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন।

৬ জনের মধ্যে সু তা চুংয়ের বয়স সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে ছোট জনের বয়স ৬৩ বছর। তারা কেউ এক বর্ণ ইংরেজি জানেন না। ছয় জনের সবারই কোনো-না-কোনো শারীরিক সমস্যা আছে। তাই তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে যাবার খবর শুনে সবাই হা হা করে উঠলেন; তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টাও চালালেন স্বজনরা।

কিন্তু তারা কোনো কথা শুনতে নারাজ। অবশেষে স্বজনদের উদ্বেগের মধ্যে রেখে ছয় প্রবীণ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি তারা সাং হাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিমানে ওঠেন।

প্রথমে তারা পৌঁছান মিয়ামিতে। বিমানবন্দরে তারা একটি গাড়ি ভাড়া করেন। ছয় জনের মধ্যে তিন জনের আছে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং তারা পালাক্রমে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। তাদের গাইড জিপিএস প্রযুক্তি। জিন খ্য ইন বলেন, জিপিএস ছাড়া, তারা নির্বোধ ব্যক্তির মতো। যুক্তরাষ্ট্রে তারা অন্যদের কথা বুঝতে পারেন না, নিজের ধারণা প্রকাশ করতে পারেন না। সবচেয়ে সহজ পথনির্দেশক চিহ্ন দেখেও তারা কিছুই বুঝতে পারেন না।

১৬ থেকে ২১ ফেব্রিয়ারি জিপিএসের সাহায্যে তারা লেখক Ernest Miller Hemingway-এর বাড়ি এবং মিয়ামি সৈকত পরিদর্শন করেন। তবে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে যখন তারা ডিজনি পার্কে যেতে চান তখন তাদের জিপিএস ব্যবস্থা কাজ করছিল না। ৭ কিলোমিটার দূরের পার্কে যেতে তাদের দুটা ঘন্টা লাগে। ভাগ্যক্রমে, তারা শেষপর্যন্ত খুঁজে পান ডিজনি পার্ক এবং সেখানে আতশবাজির অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পরে তারা নিজেদের স্মৃতির ওপর নির্ভর করে ফিরে আসেন হোটেলে।

২৩ ফেব্রুয়ারি। জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের হোটেলেই থাকতে হবে। তারা জানেন না কোথায় নতুন ডিভাইজ কেনা যায়। তখন লি চিয়ান বিন যুক্তরাষ্ট্রে তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং উনি ১০০ কিলোমিটার দূরে থেকে নতুন একটি জিপিএস ডিভাইস তাদের কাছে নিয়ে আসেন।

সু তা চুং বলেন, এ ধরণের ভ্রমণে বের হতে আসলে অন্তত দুটি জিপিএস ডিভাইজ নিয়ে বের হওয়া উচিত। কেনাকাটা, খাওয়া ও ছবি তোলার কাজ তো ইশারা-ইংগিতে সারা যায়। কিন্তু হোটেল থেকে বাইরে বেড়াতে যেতে চাইলে তাদের জিপিএস ছাড়া গতি নেই।

১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত ছয় প্রবীণ গাড়ি চালিয়ে অরল্যান্ডো, ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্কসহ ১৩টি শহর ভ্রমণ করেন।

তারা যেমন দেখেন নাসা স্পেস সেন্টারের উন্নত প্রযুক্তি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশ, তেমনি পরিদর্শন করেন জাতিসংঘ জাঁকজমকপূর্ণ সদরদপ্তর, বিশাল ও সুন্দর ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। এসব স্মৃতি সু তা চুং কখনও ভুলে যাবেন না বলে জানালেন।

হ্যা, ভ্রমণের সময় তারা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন। একবার তারা ফাঁকা পথ পেয়ে দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং আরেক বার ওভার স্পিডে গাড়ি চালিয়ে একটি স্কুলবাসকে পাশ কাটিয়ে সামনে চলে যান। তখন তারা বোঝেননি যে কাজ দুটো অবৈধ হয়েছে। এ দু'বারই পুলিশ তাদের আটকায় এবং তারা ইশারা-ইংগিতে ক্ষমা চান।

যুক্তরাষ্ট্রে এক মাস অবস্থানকালে সু তা চুং প্রতিদিন উই চ্যাটে নিজের ও গ্রুপের অন্যান্যের ছবি শেয়ার করতেন। দেশে তার বন্ধুরা ছবি দেখে তো অবাক! তারা নিজেরাও একইভাবে ভ্রমণে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। দেশে ফেরা পর, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে সু তা চুং ১০ পাতার একটি প্রবন্ধ লেখেন। তিনি বললেন, তার লেখা অন্য ভ্রমণপিপাসুদের উপকারে লাগতে পারে চিন্তা করেই তিনি এ লেখা লিখেছেন।

প্রবীণরা যারা বিদেশে ভ্রমণ করতে চান তাদের কিছু টিপস

১. পেশাদার ও বিশ্বস্ত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা, পর্যটন পরিকল্পনা, হোটেল রিজার্ভেশন, গাড়ি ভাড়াসহ নানা কাজ করিয়ে নিতে হবে।

২. ভ্রমণে বের হবার আগে নিজের একটি ওভারঅল ফিজিক্যাল চেকআপ করিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে সঙ্গে ওষুধ নিতে হবে।

৩. বিদেশি খাবারের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে একটু সময় লাগতে পারে। তাই কিছু ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও অন্যান্য শুকনো খাবার সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে।

৪. মোবাইফোনের ইন্টারন্যাশনাল রোমিং সেবা চালু করে নিতে হবে। এতে বিদেশে ভ্রমণের সময় স্বদেশে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সহজতর হবে।

৫. ভ্রমণ বীমা করাতে হবে। বিদেশে অসুস্থ হয়ে গেলে তা কাজে লাগবে। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040