0318lv
|
১৯৮৪ সালে চীনের সরকার 'ছিন হুয়াং তাও অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি উন্নয়ন এলাকা' অনুমোদন করে। এটি চীনের এ ধরনের প্রথম এলাকাগুলোর অন্যতম। এটি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বন্দরও বটে। ছিন হুয়াং তাও ক্রমবর্ধমান 'বোহাই-রিম ইকনোমিক সার্কেল'-এর কেন্দ্র। ৫৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট এই উন্নয়ন এলাকায় ২০০৬ সাল পর্যন্ত অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ৪৫৪৬টি। এগুলোর মধ্যে ৬৪৭টি বিদেশি অর্থ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত। ওই সাল পর্যন্ত এলাকায় মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৭৩ কোটি মার্কিন ডলার।
এ পর্যন্ত ছিন হুয়াং তাও ১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্বের ৫শ' সেরা প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির কুড়িটিরও বেশি এ শহরে বিনিয়োগ করেছে। শহরটি যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের কুড়িটিরও বেশি শহরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে
এদিকে, 'ছিন হুয়াং তাও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল' হোপেই প্রদেশের প্রথম ইপিজেড। ছিন হুয়াং তাও বন্দর দিয়ে দেশের সবচেয়ে বেশি কয়লা পরিবহন করা হয়। এ বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ২০৯ মিলিয়ন ম্যাট্রিক টন। চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কয়লা রফতানিকারক দেশ এবং ছিন হুয়াং তাও বন্দর দিয়েই চীনের বেশিরভাগ কয়লা বিদেশে রফতানি হয়।
ছিন হুয়াং তাও হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক নগর। বেইজিং এশিয়ান গেমস ও বেইজিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের সময় ছিন হুয়াং তাও সাহায্যকারী শহর হিসেবে কাজ করেছে। এ দুটো গেমস্ আয়োজনে রাজধানী বেইজিং কেবল এ শহরটির কাছ থেকে সহায়তা নিয়েছে।
ছিন হুয়াং তাও চীনের জাতীয় উদ্যাননগরী হিসেবে স্বীকৃত। এ শহরে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা অনেক কম। এটি চীনের বৈশিষ্ট্যময় শহরগুলোর অন্যতম। চীনে যে দশটি শহরকে অবসরবিনোদনের জন্য শ্রেষ্ঠ গণ্য করা হয়, ছিন হুয়াং তাও সেগুলোর অন্যতম। পরিবেশবান্ধব পর্যটন-ব্যবস্থার জন্যও এ শহরটি সুনাম কুড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনের দশটি শ্রেষ্ঠ শহরের একটি ছিন হুয়াং তাও। এটি চীনের সবচেয়ে সুখী শহর।
উত্তর চীন থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যাওয়ার সংযোগস্থল হচ্ছে ছিন হুয়াং তাও। এখান থেকে নৌপথ, স্থলপথ ও বিমানপথে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া যায়। শহরটির সাথে বেইজিং, থিয়ানচিন, শাংহাই ও শেন ইয়াংসহ চীনের বিভিন্ন শহর রাজপথ, রেলপথ ও বিমানপথে সংযুক্ত।
ছিন হুয়াং তাও-এর শান হাই কুয়ান বিমানবন্দর শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রতি সপ্তাহে এখান থেকে শাংহাই, নানচিং, তালিয়ান, ইয়ানথাই, থাই ইউয়ান ও শিচিয়াজুয়াংগামী ফ্লাইট আছে। কিন্তু ফ্লাইটের সময় অনিশ্চিত। নির্ধারিত সময়ের আগে বুকিং করলে ভাল হবে।
২০১২ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত হিসাব অনুসারে, ছিন হুয়াং তাও-এ মোট ৪৭টি দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে একটি ৫-এ জাতীয় পর্যায়ের, ১৫টি ৪-এ পর্যায়ের দর্শনীয় স্থান। এখানে ভালো হোটেল আছে ৫৮টি। এর মধ্যে ৫-তারা হোটেল ৩টি এবং ৪-তারা হোটেল ১৩টি।
ছিন হুয়াং তাও-এ পাহাড়, সমুদ্র, নদী, জলাভূমি ও মহা-প্রাচীরের অংশ আছে। এটি একটা পরিবেশবান্ধব শহর। চমত্কার প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিন হুয়াং তাওয়ের অনন্য পর্যটনসম্পদ।
যারা গ্রীষ্মকালে ছিন হুয়াং তাও-এ বেড়াতে যেতে চান, তাদের উচিত হবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো এড়িয়ে যাওয়া। কারণ, তখন শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা খুব বেশি হয়। বাস বা গাড়িতে প্রচণ্ড ভিড়ের পাশাপাশি, হোটেলগুলোতে পর্যটকদের লাইন লেগে থাকে। এতে হোটেলের ভাড়াও বেড়ে যায়।
শহরে সপরিবারে বেড়াতে এলে দিনচুক্তি ট্যাক্সি ভাড়া করে ঘুরে বেড়ানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। দিনে একশ' ইউয়ান খরচ হবে। এতে খরচ যেমন কম হবে, তেমনি বার বার যানবাহন পরিবর্তন করার ঝামেলাও পোহাতে হবে না।
ছিন হুয়াং তাও-এর আবহাওয়া খুবই ভাল। বসবাসের জন্য একটি চমত্কার স্থান। বিশেষ করে শহরটির পেই তাই হো অঞ্চল এ জন্য বিখ্যাত। এখানে বেড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। আর ছিন হুয়াং তাও-এর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভাল সময় জুন থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত। প্রতিবছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মে মাসের শেষ দিক পর্যন্ত এবং সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এখানে অসংখ্য পাখি দেখা যায়। পাখিপ্রেমীরা এ সময়টা বেছে নিতে পারেন।
উপকূলীয় পর্যটন শহর হিসেবে সীফুড অবশ্যই ছিন হুয়াং তাও-এর প্রধান খাবার। দর্শনীয় স্থান পেইতাইহো'র লাও হু শি বা টাইগার পাথর পার্কের দু'পাশে অনেক ছোট রেস্তোরাঁ আছে। অনেকগুলো রেস্তোরাঁর মধ্যে আপনি একটাকে বেছে নিতে পারেন টাটকা সীফুডের জন্য। রেস্তোরাঁ বাছাইয়ের পর আপনি সামুদ্রিক কোন খাবারটি খেতে চান, তা বাছাই করুন। তারপর সেটা রান্নাঘরে তাত্ক্ষণিকভাবে রান্না করে আপনার সামনে পরিবেশন করা হবে। দাম খুব বেশি না।
শহরটির পেইতাইহো অঞ্চলের রাত সাধারণত পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে। জায়গাটিকে "উপকূলীয় বিনিদ্র শহর" বলে ডাকা হয়। কারণ, এখানে সারারাত ধরে বিভিন্ন ধরনের পার্টি চলতে থাকে।
ছিন হুয়াং তাও শহরের হস্তশিল্পও বিখ্যাত। তবে, এ শিল্পের মূল উপাদান হচ্ছে সামুদ্রিক মুক্তা। এ মুক্তা থেকে নেকলেস, দুল ইত্যাদি তৈরি হয়। পেইতাইহো-এ শিথাংলু নামে সীফুডের একটি পাইকারী বাজার আছে। এখানে পণ্যের খুচরা বিক্রিও চলে। তবে কেনাকাটার সময় সাবধান থাকবেন। দরকষাকষি করতে ভুলবেন না। (প্রেমা/আলিম)