চীনের কূটনৈতিক চিন্তাধারা প্রথমবারের মতো সরকারি কর্ম রিপোর্টে লিপিবদ্ধ হয়েছে, যাতে দেশ বিদেশের ব্যাপক নজর রয়েছে।
তাহলে কেন চীনের বৈশিষ্ট্যময় কূটনীতির কথা উত্থাপন করা হয়? আসলে তা চীনের রাষ্ট্রীয় শক্তি ও প্রভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। গত ৩০ বছরের মধ্যে চীনের অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং ২০১০ সালে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক সত্তায় পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনের প্রভাবশালী শক্তি সহজেই বোঝা যায়।
আন্তর্জাতিক বিষয়ে চীন আরো বেশি ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদী আন্তর্জাতিক সমাজ।
তাই এ সময় চীনের বৈশিষ্ট্যময় কূটনীতি দাখিল করা যুক্তিযুক্ত ও যথাযথ।
তবে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে, চীনের বৈশিষ্ট্যময় কূটনীতি একটি বড় উন্নয়নশীল দেশের দায়িত্বের বিষয়, বরং আন্তর্জাতিক বিষয়ে ইচ্ছেমতো পরামর্শ দেওয়া নয়। দীর্ঘকাল ধরে চীন সমতা নীতির সমর্থক, ছোট দেশ বা বড় দেশ যাই হোক না কেন বিশ্বে সকল দেশ সমান।
চীনের বৈশিষ্ট্যময় মানে কি? তা শুধু বড় দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা নয়, বরং একটি বড় উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের নীতিমালা, চিন্তাভাবনা ও বিবেচনার পদ্ধতি বর্ণনা করা।
মূল দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে চীনের বৈশিষ্ট্যময় কূটনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও অভিন্ন স্বার্থ অর্জনের তত্ত্ব।
এর মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ অর্জন ২০১২ সালে চীন সরকারের উত্থাপিত নতুন চিন্তাধারা, তা থেকে চীনের উন্মুক্ত, সমেত ও সহযোগিতার অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং চলতি বছরের সরকারি কর্ম রিপোর্টে কূটনীতি সম্পর্কে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন। দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষা করা, গঠনমূলকভাবে বিশ্ব ও আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে পরামর্শ দেওয়া, বিদেশে চীনা নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার দক্ষতা জোরদার করা, যাতে বস্তুগতভাবে চীনা নাগরিক ও কর্পোরেটদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
২০১৫ সালে বিশ্বের মঞ্চে চীনের কূটনৈতিক নীতি ছিলো অনেক আকর্ষণীয় ও মনোযোগী।
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৮ বারের মতো বিদেশে সফর করেন, ৪২ দিন বিশ্বের ৪টি মহাদেশের ১৪টি দেশ সফর করেন। চীনের পক্ষ থেকে বিশ্বের সঙ্গে সংলাপ ও আদান-প্রদান করেন।
কেউ কেউ বলেন, প্রেসিডেন্ট সি'র সফর অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তিনি যে কোনো দেশ সফর করলেই এ চিন্তাভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
চীন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে সমস্যা মোকাবিলা করার অবস্থান প্রচার করার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যু সমাধানে চীনের অংশগ্রহণের আশাআকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে।
মধ্য-প্রাচ্যের ইস্যুকে উদাহরণ করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট সি আরব লিগের সদরদপ্তরে বলেন, মধ্য-প্রাচ্যের ইস্যুর সমাধানে চীন ন্যায়সঙ্গত অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ বৈঠক পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা চালাবে।
আন্তর্জাতিক ইস্যুর সমাধানে অংশগ্রহণ মানে বিদায়ী বছরে বিশ্বের অর্থনীতি, জলবায়ু, দারিদ্র্য বিমোচন ও ইন্টারনেট উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে চীনের প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে জি-টোয়েন্টি নেতৃবৃন্দের ১১তম শীর্ষ সম্মেলন চীনের হাংচৌ শহরে শুরু হবে, তা বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা প্রশাসন সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান।
তা ছাড়া, ইরানের পরমাণু সমস্যা, সিরিয়া ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন বিষয়ে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে চীন সরকার।
'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব, এশিয়া অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ও ব্রিকস দেশসমূহের উন্নয়ন ব্যাংকের স্থাপন থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সত্তায় চীনের অবদান ও ভূমিকাও প্রতিফলিত হয়েছে।
(সুবর্ণা/টুটুল)