'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ নিয়ে পশ্চিমাদের ভুল বোঝাবুঝির কারণ
  2016-03-11 17:13:23  cri

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং ৫ মার্চ সরকারি কার্যবিবরণী পেশের সময় বলেছেন, বাস্তবসম্মতভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাবে, যাতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ শান্তি ও মৈত্রীর মিলনসূত্র ও অভিন্ন সমৃদ্ধির প্ল্যাটফর্মে পরিণত হতে পারে। তবে পশ্চিমা জগতে চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ও সংশয় রয়েছে। চীনের এ প্রস্তাবের উদ্দেশ্য কী? এ সম্পর্কে চীনের বক্তব্য কী?

চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল উত্থাপনের পর দেশে বিদেশে কিছুটা মতভেদ দেখা যায়। যেমন ইন্টারনেটে 'চীনের মার্শাল পরিকল্পনা' ফলাও করা হয়েছে। পশ্চিমা পণ্ডিতরা মনে করেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' হচ্ছে বড় দেশ হিসেবে চীনের উত্থানের প্রদর্শনী এবং চীনের সম্পদ ও জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টা।

কিন্তু আসলে 'এক অঞ্চল, এক পথ' এর মূল উদ্দেশ্য হলো সহযোগিতার ভিত্তিতে সবার কল্যাণ সৃষ্টি করা। এর কোনো অতিরিক্ত শর্ত নেই। স্নায়ুযুদ্ধের 'মার্শাল পরিকল্পনা'র সঙ্গে এর অনেক পার্থক্য রয়েছে। চীন এ প্রস্তাবের জন্য অন্যান্য অর্থনৈতিক সত্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে চায়। কিন্তু 'মার্শাল পরিকল্পনা'র অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সহায়তা পেতে চাইলে সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। 'মার্শাল পরিকল্পনা' চীনের নয়, বরং এটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের 'গাজর ও লাঠি'র নীতি।

কিছু দেশ আশঙ্কা করে যে, চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' কৌশল কাজে লাগিয়ে বর্তমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করবে। এ দেশগুলোর আশঙ্কা আমরা বুঝতে পারি, তবে চিন্তা করুন, চীন কখনো এ ধরণের কাজ করেছে কি? এশিয়ার আর্থিক সংকটে চীন রেনমিনপির মূল্যহ্রাস না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এর ফলে এশিয়ার অনেক অর্থনৈতিক সত্তা দ্রুত পুনর্জীবিত হয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ সংকট থেকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে চীন আবারো এশিয়া তথা গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ওঠা-নামা স্থিতিশীল রাখার জন্য বিরাট অবদান রেখেছে এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।

প্রকৃতপক্ষে চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ আরো ভালোভাবে বিকশিত করতে চায়। তবে চীনের উন্নয়নের সঙ্গে নিকটবর্তী দেশগুলোর উন্নয়নের কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

কিছু উন্নয়নশীল দেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছে যে, চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় সম্পদ লুট করা এবং অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা। কিন্তু এর বিপরীতে চীনারা এ কৌশল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অর্থনীতি, রাজনীতি ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকির কথাও চিন্তা করছে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রধানত অনুন্নত অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। এ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশের সংখ্যা ৬০টিরও বেশি। এ প্রকল্প কার্যকর করা অনেক কঠিন। সত্যি কথা হলো, রেশম পথ অঞ্চল বরাবর দেশগুলোর অর্থনীতি বেগবান করতে চাইলে সামর্থ্যবান দেশের দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে এর আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য উন্নত দেশ কেন এমন পরিকল্পনা নেয়নি?

এটিই হলো মূল কারণ।

তবে চীন কেন এ প্রস্তাব দিয়েছে? চীনের অভিজ্ঞতা হলো, শক্তিশালী উন্নয়ন তত্ত্ব। অনেক সমস্যা উন্নয়নের মধ্যে সমাধান করা যায়। যদি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থনীতি ও অন্যান্য দিক বিকশিত হয়, তাহলে চীনের উন্নয়ন আরো মজবুত হবে।

আবার কেউ বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' দিয়ে চীনের উত্পাদনের উদ্বৃত্ত অন্য দেশে রপ্তানি হবে। কিন্তু চীনের প্রধান প্রাধান্য হচ্ছে অর্থনৈতিক খাত। 'এক অঞ্চল, এক পথ' এর প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যেমন কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য বিনিয়োগ করা, সড়ক, সেতু, বন্দর, বিমানবন্দরসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা, বিদ্যুত্ গ্রিড, টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও গ্যাস পাইপ ইত্যাদি আন্তঃযোগাযোগ প্রকল্প। এসব ক্ষেত্রে চীন প্রাধান্য দেয়।

'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন। চীন ও মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ এ অঞ্চল বরাবর দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে উন্মুক্তকরণ এবং সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত ও সমন্বিত বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং দেশগুলোর মানুষের কল্যাণ হবে।

(ইয়ু/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040