0311lv
|
বাংলাদেশি শ্রোতাদের অনেকেই নিশ্চয় ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ের নাম শুনেছেন। কারণ, খুনমিংই চীনের একমাত্র শহর যার সাথে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সরাসরি ফ্লাইট আছে। চীনের রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলে আসতে হলে, বাংলাদেশিদের খুনমিং হয়েই আসতে হয়। এ ছাড়া, অনেক বাঙালি খুনমিং-এ বসবাস করেন বা ব্যবসা করেন।
কিন্তু আজ আমরা খুনমিংয়ের অদূরে লি চিয়াং শহরে বেড়াতে যাবো। আসলে খুনমিং থেকে রেলপথে লিচিয়াং যাওয়া যায়। রেলপথে লিচিয়াং যাওয়া সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক। লিচিয়াং শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লিচিয়াং বিমানবন্দর। বিমানবন্দর ও শহরের মধ্যে যাতায়াতের জন্য বাস আছে। যাত্রার সময় প্রায় ৩০ মিনিট। ১৫ ইউয়ান দিয়ে শহরে অবস্থিত বেসামরিক বিমান পরিবহন টিকেট অফিসে পৌঁছানো যায়। কিন্তু লিচিয়াং প্রাচীন নগর থেকে বাকী ৩ কিলোমিটারের যাত্রা আছে। গাড়িতে করে ৬ ইউয়ান দিয়ে প্রাচীন নগরের পার্কিং-এ যাওয়া যায়। কিন্তু ট্যাক্সি করে প্রায় ১শ' ইউয়ান লাগে। আসলে বেইজিংয়ে এটুকু রাস্তা ট্যাক্সিতে যেখানে মাত্র ১৩ ইউয়ান লাগে, সেখানে কেন লিচিয়াং-এ লাগে ১০০ ইউয়ান, তা এক প্রশ্ন বটে।
লিচিয়াংয়ের আয়তন ২১,২১৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। শহরের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১২.৬ থেকে ১৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা বছর তাপমাত্রার পরিবর্তন বেশি চোখে পড়ে না। কিন্তু লিচিয়াংয়ের সকাল ও রাতের তাপমাত্রা যথাক্রমে বসন্ত ও গ্রীষ্মের মতো। এ ছাড়া জুলাই ও অগাস্ট মাস সেখানকার বর্ষাকাল। এপ্রিল, মে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে লিচিয়াংয়ে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময়। এসময় তাপমাত্রা সুবিধাজনক পর্যায়ে থাকে।
লি চিয়াং প্রাচীন নগরীর অন্য একটি নাম আছে। নামটি হচ্ছে তা ইয়ান জেন বা তা ইয়ান জেলা। চীনের অন্যান্য প্রাচীন নগরের চেয়ে লিচিয়াংয়ের বড় পার্থক্য হচ্ছে: তা ইয়ান প্রাচীন নগরটি পুরোপুরি খোলা। এ নগরটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা নয়। ১৯৯৭ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রাচীন এই নগরটি জাতিসংঘের ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান পায়। প্রাচীন নগরে প্রবেশ করতে আপনাকে গুনতে হবে জনপ্রতি ৮০ ইউয়ান। এই অর্থ নগরের পুরাকীর্তিগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয়।
দর্শনীয় স্থান
সি ফাং সড়ক
সি ফাং সড়ক হচ্ছে প্রাচীন লি চিয়াং নগরের কেন্দ্রীয় মহাচত্বর। এ চত্বরটি ধোয়ার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা কার্যকর আছে। বিশ্বের আর কোথায় এমন স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ ব্যবস্থা আছে কি না, আমরা জানি না।
ওয়ান কু ভবন
লি চিয়াংয়ের সর্বোচ্চ স্থাপনা। এখান থেকে পুরো লি চিয়াং দেখা যায়। তবে এর শীর্ষে উঠতে আপনাকে ৫০ ইউয়ান ব্যয় করতে হবে।
মু'র বাসস্থান কমপ্লেক্স
মু'র বাসস্থান কমপ্লেক্সকে না সি জাতির "নিষিদ্ধ নগর" বলা হয়ে থাকে। এর পুরো কাঠামোটা বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ নগরের মতো। এখানে ঢুকতে লাগবে ৬০ ইউয়ান। প্রাচীন নগর লি চিয়াং-এর সি ফাং সড়কের পশ্চিম দিকের ছোট নদী বরাবর প্রায় ১০ মিনিট হেঁটে আপনি পৌঁছে যাবেন মু'র বাসস্থান কমপ্লেক্সে।
ইয়ুলোং তুষার পাহাড়
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার মিটার উঁচুতে এ পাহাড়ের শৃঙ্গ। না সি জাতির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয় একে। এখানে উঠতে ১০৫ ইউয়ান লাগে। কেবলওয়ে ব্যবহার করলে ২২০ ইউয়ান ব্যয় হবে। প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ পর্যন্ত ইয়ুলোং তুষার পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দর থাকে।
শুহো প্রাচীন শহর
এটা একটি ক্ষুদ্র লিচিয়াং প্রাচীন নগর। কিন্তু লিচিয়াংয়ের চেয়ে শান্ত ও উষ্ণ। অবসর বিনোদন বা রৌদ্রস্নান করার জন্য উত্তম স্থান এটি। আগে প্রাচীন নগর চামড়াশিল্প ও বাঁশশিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখানে নাসি জাতির রীতিনীতি অনুভব করা যায়।
প্রাচীন নগরে প্রবেশের টিকিট দু'রকম আছে। দলীয়ভাবে ভ্রমণ করতে ৫০ ইউয়ান লাগে। কোনো পর্যটক একা এলে তার পয়সা লাগে না। শুহো প্রাচীন নগরটি লিচিয়াংয়ের কেন্দ্র থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
লিচিয়াংয়ের এই ছোট্ট নগরে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা আছে। পাঁচ তারা হোটেল থেকে শুরু করে ২০ ইউয়ান ভাড়ার সরাইখানা—সবই এখানে পাবেন। তবে পর্যটকদের অধিকাংশই সি ফাং সড়কে থাকতে আগ্রহী হন। কারণ, এখানে না সি পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাপন অনুভব করা যায়। (প্রেমা/আলিম)