20160310shishi.mp3
|
প্রতিবছর চীনের দুটি অধিবেশন চলাকালে বেইজিংয়ের মহা গণভবনের উত্তর হলের লাল গালিচা বিছানো করিডোরটিতে ভিড় জমান দেশি-বিদেশি সংবাদদাতারা। কারণ, সভাকক্ষে প্রবেশের আগে বা সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার পর চীনের মন্ত্রীরা এখানে তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ করিডোরটি তাই 'মন্ত্রীপথ' নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
বুধবার দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের চতুর্থ অধিবেশনের দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর দশটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ 'মন্ত্রীপথে' বেরিয়ে আসেন। তারা অবসরের বয়স বাড়ানো, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, কল-কারখানায় উত্পাদন-নিরাপত্তা জোরদার করা ইত্যাদি নানান বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বুধবার দুপুর আড়াইটায় 'মন্ত্রীপথ' খুলে দেওয়ার পর দশটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান কর্মকর্তারা একে একে বেরিয়ে আসেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তামন্ত্রী ইন ওয়েই মিন
এসময় মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তামন্ত্রী ইন ওয়েই মিন অবসরের বয়স বাড়ানো সম্পর্কে বলেন, 'আমি স্পষ্ট করেই বলছি, অবসরের বয়স বাড়ানোসংক্রান্ত প্রস্তাবের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে ইন্টারনেটে। আমি লক্ষ্য করেছি, ইন্টারনেটে অবসরে যাবার বয়স সম্পর্কে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, আমাদের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের সাথে তার পার্থক্য রয়েছে। চলতি বছরেই আমরা সংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রস্তাবটি জনগণের মতামতের জন্য পেশ করবো। তারপর তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর পর তা বাস্তবায়ন করা হবে।"
প্রতিবছরের ১৫ মার্চ চীনে ভোক্তা অধিকার রক্ষা দিবস পালিত হয়। চীনের 'মান পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত জাতীয় প্রশাসন'-এর মহাপরিচালক চি শু পিং বলেন, "আমরা বায়ু সংশোধক, রাইস কুকার, স্মার্ট টয়লেট আসন, স্মার্টফোন, শিশুদের পোশাক আর খেলনাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর গুণগত মান বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। আমরা দেশীয় পণ্যের মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার চেষ্টা করবো। তাই জাতীয় মানদণ্ডও পরিবর্তিত হবে। এতে শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনার মানও উন্নত হবে।"
গত বছর চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত কয়েকটি দুর্ঘটনা ছিল হৃদয়বিদারক। প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং সরকারি কার্যবিবরণীতে থিয়ানচিন বন্দরে সংঘটিত দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন; বলেছেন, এ থেকে আমাদের শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা পরিদর্শন ব্যুরোর মহাপরিচালক ইয়াং হুয়ান নিং বলেন, "গুরুতর নিরাপত্তা-দুর্ঘটনা ঘটার প্রবণতা কার্যকরভাবে দমন করা যায়নি। এটা জনসাধারণকে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগাচ্ছে। থিয়ানচিনের ১২ অগাস্টের দুর্ঘটনাসহ কয়েকটি দুর্ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, বন্দর, শিল্পাঞ্চল ও উন্নয়ন এলাকাসহ নানা বিশেষ অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্ব কার এবং তারা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছে কি না। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে আরও ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে।"
ভূমি ও সম্পদমন্ত্রী চিয়াং দা মিং
গতবছর সকল প্রথম শ্রেণীর শহর আর কিছু দ্বিতীয় শ্রেণীর শহরে এপার্টমেন্টের দাম হঠাত করে বেড়ে যায়। ভূমি ও সম্পদমন্ত্রী চিয়াং দা মিং জোর দিয়ে বলেন, "ভূমি ও সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কাঠামো সুবিন্যস্ত করবে, একেক অবস্থা একেকভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেবে এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে এ শহরগুলো আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, বেইজিং, শাংহাই ও শেনচেনের স্থানীয় সরকার এপার্টমেন্টের দাম অতিরিক্ত বাড়ার প্রবণতা রোধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এ কাজে ভূমি ও সম্পদ মন্ত্রণালয় যথাসাধ্য সমর্থন দিয়ে যাবে।"
হংকং ও বিদেশি তথ্যমাধ্যমগুলো হংকংয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ওপর বিশেষ নজর রেখেছে। এ সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় পরিষদের হংকং ও ম্যাকাও কার্যালয়ের পরিচালক ওয়াং কুয়াং ইয়া বলেন, "সম্প্রতি হংকংয়ে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। ফলে সবাই কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা জানতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমি দায়িত্ব নিয়ে আপনাদের জানাচ্ছি, হংকংয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, যদি হংকং ও ম্যাকাও দেশের উন্নয়নের কৌশল আর নিজের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুবিধা কাজে লাগাতে পারে, তাহলে অবশ্যই উন্নয়নের নতুন পথ খুঁজে পাবে।" (ইয়ু/আলিম)