guangying
|
সার্বীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংশ্লিষ্ট মহলের অনেক প্রশংসা পেয়েছে চলচ্চিত্রটি।
'প্রেসক্রিপশন ফর লাইফ' চলচ্চিত্রটি হলো চীনা চলচ্চিত্র ইতিহাসে সংক্রামক রোগ সম্পর্কিত প্রথম চলচ্চিত্র।
এতে চীনা গণমুক্তি ফৌজের ৩০২ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদলের নেতা ছেন চু মেইয়ের অভিজ্ঞতা অবলম্বনে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও চিকিত্সা নিয়ে অধ্যাপক ছেন চু মেইয়ের পরিশ্রম করার গল্প তুলে ধরা হয়।
চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র ছেন চু মেই অনেক বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও এখনও সংক্রামক রোগের চিকিত্সা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করে চলেছেন।
এ চলচ্চিত্রের পরিচালক ইয়াং হু মন খুলে বলেন, আসলে এমন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা খুব সহজ নয়।
তিনি বলেন, 'লিভার রোগসহ সংক্রামক রোগ গবেষণার ক্ষেত্রে অধ্যাপক ছেন চু মেই অনেক অবদান রেখে আসছেন। এই চলচ্চিত্র গড়ে উঠেছে অধ্যাপক ছেন চু মেইয়ের অভিজ্ঞতা অবলম্বনে। এমন ধরনের চলচ্চিত্রে গল্প বলার পদ্ধতি একটু কঠিন। অধ্যাপক ছেন চু মেই এখনও বেঁচে আছেন। তাই আমরা তার অতীত জীবনের বেশ কয়েকটি বাছাইকৃত ঘটনা চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছি।'
তিং লিউ ইউয়েন নামের একজন অভিনেত্রী চলচ্চিত্রে অধ্যাপক ছেন চু মেইয়ের কর্মী ও সেরা বন্ধু। তিনি চলচ্চিত্রের অন্য একজন প্রবীণ চিকিত্সক চাং সি ইউয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। যখন ছেন চু মেই নিজের কাজে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েন, তখন চাং সি ইউ তার শক্তিশালী সমর্থক হয়ে ওঠেন।
অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তারা এক সঙ্গে সংক্রামক রোগ গবেষণা ও চিকিত্সা নিয়ে কাজ করেন। এর মধ্য দিয়ে তারা চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং জীবনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সেরা বন্ধুতে পরিণত হন।
চলচ্চিত্রটিতে চাং সি ইউ চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী তিং লিউ ইউয়েন বলেন, এ চরিত্রে অভিনয়ের প্রক্রিয়ায় তিনি অনেক কিছু শিখেছেন এবং এতে তিনি দারুণ মুগ্ধ।
তিনি বলেন, 'এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করা আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। চিকিত্সকের সেই ধরনের মহান জীবন দারুণ মুগ্ধকর। আমি মনে করি, চিকিত্সকের পেশা অনেক মহান। তারা রোগীদের চিকিত্সা করেন এবং রোগীদের ব্যথা প্রশমন করতে পারেন। একজন অভিনেত্রী হিসেবে চিকিত্সকের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি খুব খুশি। আমাদের আশেপাশে এমন একদল মানুষ আছেন, হয়তো তারা অনেক সাধারণ, তবে প্রতিদিন তারা অসাধারণ কাজ করে থাকেন। আমার কাছে তারা এক একজন বীরের মতো।'
এ চলচ্চিত্র দেখার পর কোনো কোনো সার্বীয় দর্শক মনে করেন, এটি বীরের প্রশংসা করা একটি চলচ্চিত্র ছাড়াও, এতে যুগের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন চীনের আধুনিক একটি প্রেমের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
চলচ্চিত্রের গল্প অধ্যাপক ছেন চু মেই এবং স্বামী ছেন কুও শি'র বিদেশে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলার গল্প থেকে শুরু হয়। তাদের দু'জনের প্রেম এবং অভিজ্ঞতা সংস্কৃতির বিপ্লব ও রোগের পরীক্ষা অতিক্রম করে। তারা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণার ক্ষেত্রে একে অপরকে সমর্থন করেন।
চলচ্চিত্রে স্বামী ছেন কুও শি'র চরিত্রে অভিনয় করা বিখ্যাত অভিনেতা লিউ চি বিং এর আগে অনেক ধরনের পেশার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তবে এবার তিনি প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চরিত্রে ভালোভাবে অভিনয় করা চীনের বিজ্ঞানীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, 'বলা যায়, দেশের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণনীতি চালু হওয়া, দেশের অব্যাহত উন্নতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জনগণের জ্ঞান বাড়ানো বিজ্ঞানীদের পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আসলে যেসব বিষয় চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়, সেগুলো বাস্তব জীবনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন ধর্ম এবং বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই আছে। আমাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে সার্বীয় জনগণের কাছে প্রেম এবং জীবনের প্রতি সম্মানসহ চীনা জনগণের এই অনন্ত বিষয় পৌঁছে দেওয়া যাবে বলে আমরা আশা করি।'
বেলগ্রেড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে 'প্রেসক্রিপশন ফর লাইফ' চলচ্চিত্রটি প্রথমবারের মতো বিদেশের পর্দায় প্রদর্শিত হয়। চলচ্চিত্রে রোগীদের চিকিত্সা করা এবং বিজ্ঞানের গবেষণার মর্ম তুলে ধরাসহ মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ স্বাভাবিকভাবেই সার্বীয় দর্শকদের মধ্যে সাড়া জাগাতে সক্ষম।
সার্বিয়ার প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লিদিজা ওবরাদোভিজ এ চলচ্চিত্র দেখার পর বলেন, 'এই চলচ্চিত্র আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। চলচ্চিত্রে শ্রদ্ধাভাজন একজন বিজ্ঞানীর গল্প প্রদর্শন করা ছাড়াও, সুন্দর একটি প্রেমের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া, চীনের সাম্প্রতিক ৫০ বা ৬০ বছরের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে একটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের সকল উপকরণ এতে রয়েছে। এর চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্র পরিচালক, শুটিং করার উপায় এবং অভিনেতা অভিনেত্রীর অভিনয় প্রভৃতি।'
'প্রেসক্রিপশন ফর লাইফ' চলচ্চিত্র হলো ৪৪তম বেলগ্রেড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী এই চলচ্চিত্র উত্সব চলতি বছর বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের ১১০টিরও বেশি চলচ্চিত্রের অংশগ্রহণ আকর্ষণ করে। এর মধ্যে কিছু আংশিক হলো সার্বিয়া ও বলকান অঞ্চলের দেশসমূহের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক ইয়াং হু বলেন, এবারে বেলগ্রেড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে অংশগ্রহণ হলো বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে সার্বিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহযোগিতা অন্বেষণ করার একটি দারুণ সুযোগ। তিনি বলেন, 'বলা যায়, চলচ্চিত্র হলো বিনিময়ের সবচেয়ে সরাসরি উপায়। ভাষা না বুঝলেও চলচ্চিত্রের বিষয় বুঝতে পারা সম্ভব। এবার আমরা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সার্বিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে চাই। সার্বিয়ার চলচ্চিত্রাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বেইজিংয়ে আসার আমন্ত্রণ জানাই আমরা। আমরা বেলগ্রেডে চলচ্চিত্র শুটিং করতে পারি। আমাদের বিনিময় যতবেশি হবে, আমাদের গল্প ততবেশি হবে। গল্প যতবেশি হবে, চলচ্চিত্র শুটিং করার উপাদানও ততবেশি হবে।'
'আলোছায়া' পরিবেশনায় লিলি লাবণ্য ও এনামুল হক টুটুল।