চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে চীন সরকার দেশে 'দুই সন্তান নীতি' চালু করে। এ নীতি অনুসারে এখন থেকে দেশের যে-কোনো দম্পতি দুটি সন্তান নিতে পারবে। এ নীতি চালু করার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, দেশে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা বাড়ানো। চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ভবিষ্যতে অনেক বেশি কর্মক্ষম নাগরিকের প্রয়োজন হবে। কিন্তু আগের 'এক সন্তান নীতি'র কারণে বর্তমানে দেশে প্রবীণ লোকের সংখ্যা বেড়েছে এবং কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা কমেছে।
কিন্তু দু'টি সন্তান নেওয়ার অধিকার পেলেও, চীনের অনেক দম্পতিই তার প্রয়োগ করতে চান না। এর জন্য আর্থিক কারণ যেমন আছে, তেমনি আছে সামাজিক কারণ। এ সমস্যা প্রসঙ্গে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের মহাপরিচালক লি বিন মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেসের চতুর্থ অধিবেশনের এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দু'টি সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ভয় মানুষের মধ্যে কাজ করছে, তার দূর করতে আনুষঙ্গিক কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। তিনি জানান, চীনের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ ১৪৫ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। তারপর ২০৫০ সাল থেকে জনসংখ্যা কমে ১৩৮ কোটিতে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
লি বিন
লি বিন বলেন, চলতি বছর 'দুই সন্তান নীতি' কার্যকর করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মৌলিক গণসেবা বাড়ানো হবে। যেমন, বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া, স্কুলপূর্ব শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তাদের শিক্ষাদানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে গণসেবার মান বাড়ানো হবে।
লি বিন বলেন, "শিক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এ ব্যবস্থায় সরকারি কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে এবং বেসরকারি পর্যায়ে কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠাকে উত্সাহ দেওয়া হবে। তা ছাড়া, বিভিন্ন অঞ্চলে তিন বছর বয়সের নিচের শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ ত্বরান্বিত করা হবে এবং যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীর সংখ্যা বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানে ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠাকে উত্সাহ দেওয়া হবে।"
চীনে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। 'দুই সন্তান নীতি' সফল করতে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন। গেল শীতকালে হিম প্রবাহ ও ফ্লুর প্রভাবে কয়েকটি বড় শহরের হাসপাতালে শিশুচিকিত্সা ব্যহত হয়েছে এ কারণে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে শিশুচিকিত্সা ও স্বাস্থ্য সেবা জোরদারবিষয়ক কার্যক্রম প্রণয়ন করছে। আশা করা হচ্ছে, সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে শিশুচিকিত্সার ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা দূর হবে।
লি বিন বলেন, "পরিকল্পনামতে, চাহিদা অনুসারে সরবরাহ বাড়ানো হবে এবং সেবার পরিধিও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, চেষ্টা করা হবে চাহিদার চাপ কমাতে। এ জন্য রোগ প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া হবে।"
লি বিন জানান, শিশুচিকিত্সাসেবার মান উন্নয়ন ও পরিধি বাড়ানোর ওপর সরকার জোর দিচ্ছে। ৩০ লাখ জনসংখ্যার প্রতিটি নগরে অন্তত একটি শিশু হাসপাতাল থাকবে। প্রতিটি শহর ও জেলায় সরকারি মানদণ্ড অনুযায়ী একটি করে শিশু ও মাতৃমঙ্গলকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তা ছাড়া, শিশুচিকিত্সায় দক্ষ কর্মীর প্রশিক্ষণও জোরদার করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশুচিকিত্সাবিষয়ক স্নাতক কোর্স খোলা হবে এবং শিশুচিকিত্সা বিভাগের মাস্টার ডিগ্রিধারী চিকিত্সকদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়ানো হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, "শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের আয় অন্যান্য রোগের বিশেষজ্ঞদের আয়ের চেয়ে যাবে কম বা বেশি না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে।"
'দুই সন্তান নীতি'-র ফলে পরবর্তী কয়েক বছর চীনে সন্তান জন্মদানের সংখ্যা বাড়বে। কেউ কেউ আশঙ্কা করেন যে, এ নীতির দরুণ জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটবে। চীনের জনসংখ্যা সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে লি বিন বলেন, চীনে 'দুই সন্তান নীতি'র আওতায় আসবে প্রায় ৯ কোটি দম্পতি। এ নীতি চালু হওয়ার পর জনসংখ্যা কিছুটা বাড়বে। আবার ২০৫০ সাল নাগাদ কর্মক্ষম জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি বাড়বে। তখন মোট জনসংখ্যায় প্রবীণ লোকের অনুপাত কিছুটা হ্রাস পাবে। জনসংখ্যার কাঠামোতে ভারসাম্য সৃষ্টি হবে।
লি বিন বলেন, "২০১৫ সালে চীনের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ। ২০৫০ সালে হতে পারে ১৩৮ কোটি। অর্থাত্ বর্তমান জনসংখ্যার সমান। অর্থনীতি, সমাজ, জনসংখ্যা, সম্পদ ও পরিবেশের সম্পর্ক বিবেচনা করে দেখলে এ জনসংখ্যা গ্রহণযোগ্য ।" (ইয়ু/আলিম)