চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কার
  2016-02-29 09:50:30  cri

 


বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

চীনের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মি. ছিয়ান ইং ই চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন।

১৯৫৬ সালে তিনি বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি এবং হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

কেন চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কার চালু করা প্রয়োজন?

গবেষণা প্রবন্ধে অধ্যাপক ছিয়ান লিখেছেন, ব্যক্তি প্রশিক্ষিত করা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক দায়িত্ব, স্নাতকদের শিক্ষাদান ব্যক্তি প্রশিক্ষণের মূল ভিত্তি। বর্তমানে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর শিক্ষার্থী গ্রহণের সংখ্যা অনেক বেশি, যা বিশ্বের শীর্ষ স্থান অধিকার করে।

তবে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের মানের অনেক উন্নতি প্রয়োজন। এ জটিল সমস্যা সমাধানে শুধু সংস্কার চালু করতে হবে। ব্যক্তি প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার পাশাপাশি এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত সর্বপ্রথম প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গুণগতমানসম্পন্ন আধুনিক সুসভ্য মানুষ হিসেবে প্রশিক্ষিত করা, এর সঙ্গে সঙ্গে চমত্কার ব্যক্তিদের প্রশিক্ষিত করার পরিবেশ গড়ে তোলা। দুই দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের প্রশিক্ষণ কাজ সংস্কার করা হবে এ শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

চীনের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষাদানে উন্মুক্ত ও সংস্কার নীতি চালু করার পর দ্রুতভাবে উন্নত হয়েছে, তবে দ্রুত উন্নয়নের ফলে দুটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

একটি হলো লোকজন মনে করেন, কেন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় চমত্কার ব্যক্তি প্রশিক্ষিত করে না? কেন চীন বিজ্ঞানী ডক্টর ছিয়ান সুয়ে সেন-এর মতো চমত্কার ব্যক্তিদের তৈরি করতে পারে না?

বিশেষ করে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় এমন শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এমন প্রশ্ন বেশ উল্লেখযোগ্য।

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মি. চিয়াং নান সিয়াং ২০ শতাব্দীর ৫০'র দশকে বলেছিলেন, আমরা বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রশিক্ষণ করতে না পারলে আমাদের শিক্ষাদানের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। যারা নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, বিশেষ করে চীনা বিজয়ী তাদের মধ্যে অনেকে চীনের বাইরে এ পুরস্কার লাভ করেন। চীনের কয়েকজন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিয়ান সুয়ে সেন এবং চি সিয়ান লিনসহ প্রমুখ শিক্ষক মৃত্যুবরণের পর চীনের সমাজে তাদের মতো এমন বুদ্ধিমান ব্যক্তি আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

আরেকটি সমস্যা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের মান নিয়ে। শিক্ষার্থী গ্রহণের সংখ্যা বাড়ানোর পর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের মান আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও জন দক্ষতার যোগ্যতা অনেক দুর্বল হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চরিত্র সম্পর্কে আন্তরিকতা, আস্থা, ন্যায় ও সহনশীল- এমন শ্রেষ্ঠ চরিত্র এবং নিজেদের জীবনের দায়িত্ব, লক্ষ্যমাত্রা, স্বাধীনভাবে বিবেচনা করা ও দলের সঙ্গে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন দক্ষতাও দুর্বল হয়েছে।

আসলে এ সব সমস্যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত তা নয়, বরং সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গেও জড়িত।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের মধ্যে অনেকে ১৯৯০ সালের পর জন্মগ্রহণ করেছেন। ছোটবেলা থেকে তারা ভালো স্কুল ভর্তি হবার জন্য নানা ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। প্রাথমিক স্কুল থেকে নানান পরীক্ষা নিয়ে তারা অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছেন। শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করার উদ্দেশ্যে লেখাপড়া করেন, এমন অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা অবশ্যই দুর্বল হয়ে যায়।

তা ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

প্রশাসনিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের চেয়ে কিভাবে আরো বেশি টাকা বা স্বার্থ অর্জন করতে পারবে এ বিষয়ে বেশ মনোযোগ দিয়েছে। শিক্ষাদান একটি দীর্ঘকালীন কার্যকর কর্তব্য, তাতে স্বল্পকালের মধ্যে কোনো সাফল্য দেখা যায় না।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্যতা কেবল ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকরা কি ধরনের চাকরি খুঁজে পেয়েছে তা দিয়ে বিবেচনা করা উচিত নয়, বরং স্নাতক হওয়ার ২০ বা ৪০ বছর পর এ শিক্ষার্থী কি ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে তা দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

চীনে উন্মুক্ত ও সংস্কার নীতি চালু করার ৩০ বছর পর দেশের অর্থনীতি ও সমাজ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। জিডিপির পরিমাণও বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে দাঁড়িয়েছে।

সমাজের নতুন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান শুধু জ্ঞান বুঝিয়ে দেওয়া নয়, বরং শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও মানের উন্নতিতে মনোযোগ দেওয়া। তাদের মধ্যে কারো কারো বিভিন্ন শিল্পের চমত্কার প্রতিনিধিতে পরিণত হওয়া উচিত।

বিদেশের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা সংস্থার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান সংস্কার। বিদেশের শ্রেষ্ঠ গুণগতমানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চীনের অনেক শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে থাকে। বিশেষ করে উপকূলীয় উন্নত শহরের শিক্ষার্থীরা উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং হংকংসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে যান।

জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করা চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সংখ্যার চেয়ে বেশি। এই সংখ্যা গত ৩০ বছরে কখনো এতো বেশি দেখা যায় নি।

চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল চীনের মূলভূভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট বৃত্তি প্রদানসহ স্নাতক হওয়ার পর বিভিন্ন ইন্টার্নশিপ, হংকংয়ে দীর্ঘকালীন বসবাসের সুযোগ এবং বিদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বিনিময়ের সুযোগ প্রদান করে থেকে। যদি চীনের মূলভূভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কার না করা হয়, তাহলে খুব সম্ভবত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা হারিয়ে যাবে।

চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কার চালু করার আরেকটি জরুরি কারণ হলো চীনের অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান প্রযুক্তি উদ্ভাবনী ব্যক্তি ও বিশ্বের শীর্ষ পথনির্দেশকদের প্রয়োজন।

চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের লক্ষ্যমাত্রা চীনের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষাদান ও সমাজের উন্নয়নের ভবিষ্যত দিক বিবেচনা করে করা উচিত।

বিশেষ করে গবেষণার ভিত্তিতে স্থাপন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গুণগতমানের আধুনিক সভ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দিতে হবে, এভাবে চমত্কার ব্যক্তি গড়ে তোলা যায়।

এ লক্ষ্যমাত্রা থেকে বোঝা যায়, একজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে একজন ভালো মানুষ হতে হবে, তারপর জ্ঞান অর্জন বা গবেষণায় সাফল্য অর্জন করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বও একই।

চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জু রোং জি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। ১৯৯২ সালে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিনি তার অভিনন্দনবার্তায় লিখেছিলেন, লেখাপড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কঠোর মানদণ্ডে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। ভালো মানুষ হতে হলে তার চরিত্রে ন্যায় যোগ্যতা বজায় রাখতে হবে।

তার কথা থেকে বোঝা যায়, আধুনিক সভ্যতাসম্পন্ন মানুষ গড়ার প্রশিক্ষণ হবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণের ভিত্তি। মানুষ সরঞ্জাম নয়, শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য সরঞ্জাম তৈরি করা নয়, বরং মানুষের চরিত্র গঠন করা।

যদিও সবাই মনে করেন, বেশি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বিচার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, তবে শুধু শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা ঠিক নয়। তা শিক্ষাদানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

সাধারণ শিক্ষাদানের তাত্পর্য বোঝা

শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের কার্যকর পদ্ধতি হবে সাধারণ শিক্ষাদান এবং বৈশিষ্ট্যময় চরিত্রের প্রশিক্ষণ যৌথভাবে চালু করা।

সাধারণ শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান নয় বরং শিক্ষার্থীদের সারা জীবনের কল্যাণকর ব্যবস্থা। সাধারণ শিক্ষাদান পেশাগত শিক্ষাদানের ভিত্তি ও পরিপূরক নয়, তা শিক্ষার্থীদের চরিত্র গড়ে তোলার জন্য চালু হয়। যদিও সাধারণ শিক্ষাদান পেশাগত শিক্ষাদানের জন্য সহায়ক, তবে দুটি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা আলাদা।

স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা কি করবে এবং সমাজে কি অবদান রাখতে পারবে এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষাদানে কোনো পার্থক্য নেই। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণ শিক্ষাদান প্রযোজ্য। কারণ সাধারণ শিক্ষাদান শিক্ষার্থীদের চরিত্রের গঠনে ভূমিকা পালন করে, তবে পেশাগত দক্ষতা অর্জনে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে না।

২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চীনের অর্থনীতিতে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে, চীনের শিক্ষাদান ব্যবস্থায়ও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

স্নাতক শিক্ষার্থী ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাদানের চিন্তাধারাও উন্নত করতে হবে। স্নাতক শিক্ষাদানের চিন্তাধারায় সাধারণ শিক্ষাদান ও পেশাগত দক্ষতার প্রশিক্ষণ একসাথে চালু করা ভালো।

স্নাতক শিক্ষার্থীদের প্রথম ও দ্বিতীয় বছরে সাধারণ শিক্ষাদান দেওয়া হবে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে পেশাগত শিক্ষাদান দেওয়া হবে।

সাধারণ শিক্ষাদানের তাত্পর্য কি?

বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক স্কুলের সাধারণ শিক্ষাদানের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের মান ও আওতা আরো গভীর ও বিস্তৃত।

মূল্যবোধ সৃষ্টি করা, দক্ষতার প্রশিক্ষণ ও মানবজাতির সবচেয়ে কেন্দ্রীয় জ্ঞান অর্জন করা হলো সাধারণ শিক্ষাদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূল্যবোধ সৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক আইন প্রশাসন, অবাধ ও সমতা, ন্যায়সঙ্গত সচেতনতা, সত্ ও সহনশীল চরিত্র গড়ে তোলা এবং আদর্শবাদী ও দায়িত্বশীল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দক্ষতার প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল, কল্পনা ও সমালোচনামূলক চিন্তার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

এ সম্পর্কে মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন, নিয়মিত শিক্ষাদান ব্যবস্থায় কৌতূহল কঠিনভাবে থাকতে পারে, কারণ কৌতূহল হলো মানুষের নতুন জিনিস আবিষ্কারের মূল উত্স। কল্পনা জ্ঞানের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ। যা আমরা বুঝি ও জানি সেই সব বিষয় জ্ঞান বলা যায়, তবে কল্পনা সারা বিশ্বজুড়ে।

এখন চীনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল, কল্পনা ও সমালোচনার দক্ষতার অভাব রয়েছে। তারা ভালোভাবে বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষায় পাস করতে সক্ষম, তবে একটি বিষয় নিয়ে নিজেদের প্রশ্ন দাখিল করতে পারে না। এটি শুধু শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত করা যায়।

একটি বিষয় শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে যে, কম সময়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি প্রশিক্ষণের কাজ সম্পন্ন করা যায় না, সেটি জরুরি ব্যাপারও নয়। চীনের একটি প্রবাদে বলা হয়, গাছ বড় হতে দশ বছর সময় প্রয়োজন, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রশিক্ষণে কমপক্ষে একশো বছর সময় দরকার। তা থেকে বোঝা যায়, সাধারণ শিক্ষাদানে কমসময়ের মধ্যে কার্যকর সাফল্য দেখা যায় না, তবে তা গোটা জাতি ও দেশের জন্য কল্যাণকর।

ব্যক্তিগত চরিত্র সৃষ্টির তাত্পর্য ও পদ্ধতি

বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের চেয়ে চীনা শিক্ষার্থীদের গড়পড়তা মান ভালো অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চমত্কার ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সংখ্যা বেশি নয়।

চীনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তা কোনো সমস্যা নয়, তবে শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমস্যা। শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো চমত্কার ব্যক্তি তৈরি করা। একটি শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান পর্যালোচনা করার সময় কত জন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ করা হয়েছে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত হয়।

শিক্ষার্থীদের চরিত্র সৃষ্টিতে কি কি পরিবেশ ও শর্ত প্রদান করা হয় তা চমত্কার ব্যক্তির প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাহলে ব্যক্তিগত চরিত্র সৃষ্টির কার্যকর পদ্ধতি কি? সাধারণত আমরা শিক্ষার্থীর প্রাধান্য অনুসারে প্রশিক্ষণ দেই। যারা বেশি বুদ্ধিমান, তাদের আরো কঠিন ও বিস্তার জ্ঞান জানানোর প্রচেষ্টা চালাই। আসলে এমন অবস্থায় বুদ্ধিমান শিক্ষার্থী শুধু অন্যান্য শিক্ষার্থীর চেয়ে একটু আগে অন্য জ্ঞান গ্রহণ করে থাকে। তা বুদ্ধিমান শিক্ষার্থীদের কল্পনা ও আগ্রহের প্রশিক্ষণে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে না।

সেজন্য শিক্ষার্থীকে আরো আরামদায়ক পরিবেশ ও স্বাধীন কল্পনার সুযোগ প্রদান করা এবং তাদের কৌতূহল আর সমালোচনামূলক চিন্তার দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ব্যক্তিগত চরিত্র সৃষ্টির মূল বিষয়।

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মি. ছিয়ান ইং ই'র চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানব্যবস্থার সংস্কারবিষয়ক গবেষণামূলক প্রবন্ধের মূল বিষয় এবং তা নিয়ে আমাদের কিছু আলোচনা শুনলেন।

আসলে সময় দ্রুত চলে যায়। আর এজন্য আমাদের আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানও শেষ করতে হবে। তবে এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিও'র মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে আমাদের বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারবেন।

আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali@cri.cn

এবার তাহলে বিদায়। আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবারো আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। যাইচিয়ান।

'বিদ্যাবার্তা' পরিবেশনায় ছাওইয়ানহুয়া সুবর্ণা ও এনামুল হক টুটুল।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040