পুবের জানালা ০২২৪
  2016-02-24 09:00:34  cri



সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) পরিচালিত গণমাধ্যমগুলোতে ইতিবাচক রিপোর্টিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বেইজিংয়ে আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

প্রেসিডেন্ট বলেন, তথ্য ও জনমত পার্টির কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি দেশ প্রশাসন ও দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় পার্টি কর্তৃক পরিচালিত গণমাধ্যমগুলোকে কঠোরভাবে সিপিসি'র নেতৃত্ব মেনে চলতে হবে এবং পার্টির নীতি ও আদর্শকে তুলে ধরতে হবে।

এর আগে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পিপলস ডেইলি, সিন হুয়া বার্তা সংস্থা ও চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

সিম্পোজিয়ামে প্রেসিডেন্ট সি সাংবাদিকতার নীতি ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, একজন তথ্যমাধ্যমকর্মীর উচিত চীনের প্রকৃত চিত্র আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে তুলে ধরা এবং পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানো।

সিম্পোজিয়ামে দেওয়া চীনের প্রেসিডেন্টের ভাষণ দেশি গণমাধ্যমগুলোর পাশাপাশি বিদেশি গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পায়। গ্রিসের চীনা ভাষার সংবাদপত্র চীন-গ্রিস টাইমস-এর সম্পাদক ওয়াং পেং বলেন,

"প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সাংবাদিকদের বাস্তবাদী হতে বলেছেন। তিনি তাদেরকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রচার করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, সত্য ও বাস্তব অবস্থাকে তুলে ধরাই সাংবাদিকদের কাজ। তিনি সাংবাদিকদের কাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বসন্ত উত্সবের পর অর্থাত্ চীনা নতুন বছরের শুরুতে একাধিক গণমাধ্যম কার্যালয় পরিদর্শন করে প্রেসিডেন্ট সি প্রমাণ করেছেন, তিনি সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।"

প্রেসিডেন্ট সির ভাষণের একটি অংশ জাপানে প্রকাশিত চীনা ভাষার সংবাদপত্র 'jnocnews'-এর সম্পাদক চিয়াং ফেংকে প্র্রভাবিত করেছে। প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন সাংবাদিকদের 'Down to earth' তথা বাস্তববাদী হতে হবে, প্রকাশিত সংবাদকে 'Down to earth' তথা বাস্তবসম্মত ও সত্য হতে হবে।

চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমাধ্যম চীন আন্তর্জাতিক বেতার। এই বেতার বিদেশের সাথে চীনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি বিদেশে চীনের জানালায় পরিণত হয়েছে বলা চলে। ৬৪টি ভাষায় এখান থেকে অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে নিয়মিত। বিশ্বের বহু দেশের মানুষ এ বেতারের মাধ্যমে প্রকৃত চীন সম্পর্কে জানতে পারছে, চীনের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করছে। এ কথা সত্য যে, বর্তমান যুগের যুবসমাজ তথ্য জন্য মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর মূলত নির্ভর করে। আর এ বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েই চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বিভিন্ন বিভাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, বেতারের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ছাং ওয়েন ওয়েন বলেন,

"দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মোবাইলফোন খুব জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবেশ করতে মোবাইলফোনের সাহায্য গ্রহণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তাদের তথ্য সংগ্রহের মূল উত্সে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে, ২০১৪ সাল থেকে 'নিউ মিডিয়া'-র ওপর আমরা জোর দিতে শুরু করি। ২০১৫ সালে আমরা চীনা পর্যটন, সংস্কৃতি ও জীবনরীতিসহ নানা বিষয়ের ৯টি 'নিউ মিডিয়া' পণ্য বা সেবা উপহার দিয়েছি।"

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ইংরেজি বিভাগের উপ-পরিচালক কুয়ান ছুয়ান ছুয়ানও নিজের বিভাগের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন

"সি আর আইর ইংরেজি ভাষার অনুষ্ঠানের ইতিহাস ৬৯ বছরের। বিগত কয়েক বছরে চীনের সাথে বিশ্বের যোগাযোগ বাড়াতে এ বিভাগের প্রচেষ্টা আরও জোরদার হয়েছে। যেমন, আমরা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছবি, ছোট ভিডিও ক্লিপ ও কার্টুন প্রকাশ করছি; স্থানীয় মানুষের সাথে ব্যক্তি পর্যায়ের যোগাযোগ বাড়িয়েছি এবং এভাবে চীন সম্পর্কে তারা আরও বেশি জানতে পারছেন। আসলে বেতারের সনাতন পদ্ধতি থেকে আমরা বেড়িয়ে এসেছি, আমাদের অনুষ্ঠানেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।"

ছাং ওয়েন ওয়েন মনে করেন, বিদেশিদের সামনে চীনকে তুলে ধরতে, চীনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে: সহজ উপায় অবলম্বন; বিদেশিদের মাধ্যমে বিদেশিদের সামনে চীনকে তুলে ধরা; এবং নিউ মিডিয়া বা নতুন গণমাধ্যম ব্যবহার করা।

কুয়ান চুয়ান চুয়ানের মতে, যেসব বিষয়ে বিদেশি শ্রোতাদের আগ্রহ বেশি, সেসব বিষয়ে বেশি বেশি অনুষ্ঠান প্রচার করা উচিত। এ ব্যাপারে শ্রোতাদের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করা জরুরি।

চীনের সাথে অন্যান্য দেশের মৈত্রী জোরদার করার পাশাপাশি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের আরেকটি কাজ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমাজে চীনের অবস্থান তুলে ধরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই ভুল তথ্য প্রচার করা হয়। সেসব ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হওয়া এবং প্রকৃত চিত্র তুলে ধরাও বেতারের কাজ। সি আর আই পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক সিয়া ইউয়োং মিন বলেন,

"পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকা বিভাগের শ্রোতাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মানুষ। এ অঞ্চলগুলোতে সবসময় ঘটছে বিশ্বব্যাপী আলোচিত সব ঘটনা। বিগত বছরগুলোতে বিদেশে পূর্ব তুর্কিস্তান গোষ্ঠী কর্তৃক প্রকাশিত চীন-বিরোধী মিথ্যাচারের আমরা যথাযথ জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছি।"

সি আর আই জাপানি বিভাগের সাংবাদিক লিও রুই মনে করেন, বিদেশি সাংবাদিক হিসেবে প্রেসিডেন্ট সি'র কথা তাকে উত্সাহিত করেছে। তিনি তার দায়িত্ব সম্পর্কেও একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। তিনি বলেন,

"সি আর আই জাপানি বিভাগের কাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে চীনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। বেতার ও টেলিভিশন ছাড়াও আমরা নিউ মিডিয়া নিয়েও কাজ করছি। আমরা নিজেদের তৈরি করা বিভিন্ন অনুষ্ঠান নানা মাধ্যমে প্রচার করি। জাপানে চীন সম্পর্কে অনেক খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যা একতরফা। এ প্রেক্ষাপটে প্রকৃত চীনকে জাপানিদের সামনে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিশ্বাস করি, বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান সম্পর্কে জানার সুযোগ পেলে শ্রোতা ও পাঠক নিজেরাই কোনো ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040