0223topic
|
১৯৫২ সালের এই দিনে অর্থাত্ ৮ ফাল্গুন, ১৩৫৯ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এ অঞ্চলে বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে ভাষা বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে।
ঐদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম এবং রফিক নিহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাভাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে সমবেত হতে শরু করে। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরেরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুন:রায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রঙ্গণে গড়ে তোলেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা তৎকালীন সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুড়িয়ে দেয়।
একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তখন থেকে প্রতিবছর এ দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
২১শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এসময় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি..... গানের করুণ সুর বাজতে থাকে।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যে চেতনায় উদ্দীপিত হয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়ে মার্তৃভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো, আজ তা দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
দিদারুল ইকবাল
চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)
বাংলাদেশ।