ভারতের কোচিনে স্থানীয় জেলেদের ঐতিহ্যবাহী চীনা জাল ব্যবহার
  2016-02-27 19:35:57  cri

চীন-ভারত যোগাযোগ প্রাচীনকাল থেকে রয়েছে। এখনো ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চীনের মাছ ধরার জাল ব্যবহৃত হচ্ছে। কয়েক শ' বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানীয় জেলেরা চীনের এ জাল ব্যবহার করে আসছেন। কেরালা রাজ্যের কোচিনে এ জাল 'চীনা জাল' নামে পরিচিত।

চীনা জাল সম্পর্কে বহু কিংবদন্তী ছিল। কোচিনের স্থানীয় নাগরিক জোসেফ কালাথিল আমাদেরকে জানান, 'কিংবদন্তী অনুযায়ী, ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ সালের মধ্যে কোনো এক সময় চেংহো নামক একজন চীনা মানুষ এ ধরণের জাল কোচিনে এনেছিলেন। তার মানে, এ জালের ৬ শতাধিক বছরের ইতিহাস রয়েছে।'প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তটরেখায় জেলেদের ডাক শোনা যায়। এরা ছোটবেলা থেকেই 'চীনা জাল'-এ মাছ ধরে আসছেন। এখন অবশ্য অনেক জেলে গভীর সমুদ্রেও মাছ ধরেন। তবে চীনা জাল তাঁদের প্রথম পছন্দ। কারণ, এ জাল দিয়ে অনেক ধরনের মাছ ধরা যায়। জেলে মানু খান বলেন, 'এখানে বহু ধরণের মাছ পাওয়া যায়। যেমন বিভিন্ন জাতের পোনা, মাগুর ইত্যাদি। কোনো কোনো সময় স্ন্যাপার ও হোয়াইট ট্রাউট'ও ধরা পড়ে জালে।'

চীনা জাল দিয়ে মাছ ধরতে হলে এর ব্যবহার পদ্ধতি জানতে হবে। বিলাল নামের স্থানীয় এক যুবক জানালেন, 'চীনা জাল ব্যবহার করতে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ জন জেলে প্রয়োজন। প্রথমে জাল সমুদ্রের জলে ফেলা হয়। এর দশ মিনিট পর সে জাল টেনে তোলা হয়। এর পর জাল থেকে মাছ সংগ্রহ করা হয়।'

শুনতে যত সহজ মনে হচ্ছে, চীনা জাল ব্যবহার করা তত সহজ আসলে নয়। চীনা জাল ব্যবহারের জন্য শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। ৬১ বছর বয়সী স্থানীয় নাগরিক সামুয়েল ভালভাবে জালটি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু অধিকাংশ যুবক তার মতো জাল ব্যবহার করতে পারেন না। এ সম্পর্ক সামুয়েলের সঙ্গে সিআরআই সাংবাদিক কথোপকথন ছিল এমন,

সামুয়েল: 'আমার বয়স ৬১ বছর, এখানে মাছ ধরি ৩৩ বছর ধরে।

সাংবাদিক: 'আপনার সন্তানরাও মাছ ধরে?'

সামুয়েল: 'না, তাঁরা বাইরে কাজ করে।'

সাংবাদিক: 'শহরে কাজ করে?'

সামুয়েল: 'হ্যাঁ, শহরে। মাছ ধরা অনেক কঠিন ও ক্লান্তিকর।'

মাছ ধরার আধুনিক প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায় একসময় হয়তো চীনা জাল হারিয়ে যাবে। স্থানীয় নাগরিক জোসেফ কালাথি বলেন, 'আমি মনে করি, চীনা জাল দিয়ে মাছ ধরা খুবই মজার বিষয়। অবশ্য পাশাপাশি এটি কঠিন কাজও বটে। প্রায় প্রতিটি জেলেই চায়, তাদের সন্তানদের যেন এই কঠিন কাজ করতে না-হয়। তাঁরা আশা করেন, শিশুরা স্কুলে লেখাপড়া করবে এবং ভবিষ্যতে অন্য কোনো পেশা গ্রহণ করবে।'

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকের স্বপ্ন দেখার ও সুন্দর জীবন অন্বেষণ করার অধিকার রয়েছে। ঐতিহ্য দিয়ে মানুষের হাত-পা বেধে দেওয়া যায় না।

বিকেল তিনটার দিকে জেলেরা তাদের দিনের কাজ শেষ করেন। তাদের ব্যবহৃত চীনা জাল চীন ও ভারতের জনগণের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রীর প্রতীক যেন। যদি আপনি কখনও কোচিন আসেন, তবে আশা করি চীনা জালে মাছ ধরার চমত্কার দৃশ্য দেখতে পাবেন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040