জলবায়ু উদ্বাস্তু নারীদের দেখার কেউ নেই
  2016-03-13 18:48:42  cri

জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে এখন আলোচিত এক শব্দ। আর এর নির্মম শিকারের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকারে পরিণত আমাদের প্রান্তিক নারী ও শিশুরা।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল; তার চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ হবে। সে ক্ষেত্রে বলা যায় নারী ও শিশুরা আরো বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে।

ফ্রান্সে জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে জার্মানির বন শহর ভিত্তিক জলবায়ু পরামর্শক গোষ্ঠী 'জার্মান ওয়াচ' প্রকাশিত 'বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক-২০১৬'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে সারা বিশ্বে দুর্যোগে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়ে।

জলবায়ু উদ্বাস্তুরা সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নেয় অজানা জায়গায়। সেখানে অতিকষ্টে চলে তাদের জীবন। সেই জীবন সংগ্রামীদের একজন গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার শাহিনা আকতার। ১৫ বছর আগে নদীতে বাড়ী ভেঙ্গে যাওয়ার পর রংপুরের পীরগঞ্জের চতরায়। যখন এসেছেন তখন সবকিছু নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। জন্মস্থান ভিটে বাড়ী ছেড়ে অজানা এক জায়গায় আশ্রয় নেয়।

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এরমধ্যে বাংলাদেশে এর প্রভাব অনেক বেশি। জলবায়ু উদ্বাস্তু হওয়ার ফলে একদিকে যেমন তারা ভিটে হারা হয়ে নতুন আবাসনের দিকে ঝুঁকছে অপরদিকে জীবন বাঁচানোর জন্য নতুনভাবে জীবিকা নির্বাহের পথ তৈরির কথা চিন্তা করতে হচ্ছে। জলবায়ু উদ্বাস্তু নিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তু বিষয়ক সংগঠন এসিআর'র প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন,'জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা আশি লাখের বেশি'।

তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন রকম সংখ্যা বলছে। সেগুলো মোটামুটি ষাট থেকে সত্তর লাখের মধ্যে। কিন্তু আমরা যে জরিপগুলো চালাচ্ছি, তাতে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ইতিমধ্যে আশি লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।'

প্রতিবার জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিয়ে আলোচনা হলেও ঠিকভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের একশ বিলিয়ন ডলারের মত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ডারবানে এই বিষয়ে আলোচনা তেমন একটা এগোয়নি। এছাড়াও খুলনা এবং সাতক্ষীরায় ইউরোপীয় কমিশনসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু উদ্বাস্তুদের কয়েকমাস ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই ত্রাণ বন্ধ রয়েছে।'

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কী করতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির অ্যাসিটেন্ট কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশিদ আলম বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তু কথাটিতে আমার আপত্তি আছে। মূলতঃ তিনটি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।

প্রথমত; জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোর কাজ করার দক্ষতা বাড়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন ঝুঁকিতে না পড়ে।

দ্বিতীয়ত: অভিবাসী হয়ে যখন তারা অন্য জায়গায় যায় সে সময় তাদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে। তাদের শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দিতে হবে।

তৃতীয়ত: শহরে আসলে তাদের শহরে যে ধরণের সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন সেগুলোর নিশ্চিয়তা বিধান করতে হবে। সেই সাথে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য সেভাবে নগর পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

খুরশিদ আলম জোর দিয়ে বলেন, দুর্যোগে মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে ব্যবস্থা রেখে কাজ করতে হবে। তবে আশার কথা হলো জাতিসংঘ বাংলাদেশে যতগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করে তার সিংহভাগই দুর্যোগ মোকাবেলা ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের নিয়ে। আগামী ৫ বছরে আরো ১০টি প্রকল্প দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য আসবে বলেও জানান তিনি।(মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040