বাংলাদেশের রাজপথ সামলাচ্ছেন নারী সার্জেন্টরা
  2016-02-28 19:13:43  cri

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাজপথে নারী সার্জেন্ট দেখে চমকে উঠবেন না। এক মাস ধরে পুরুষের পাশাপাশি তারাও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে এই প্রথম সার্জেন্ট পদে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হলো।

পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে নারী সদস্যরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা কাজের প্রতি আন্তরিক। এবার সার্জেন্টের মতো কঠিন পরিশ্রমের কাজে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে সফল হলে সার্জেন্টের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়োগ শাখা থেকে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীতে নারী পুলিশের নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৪ সালে। সর্বশেষ সার্জেন্ট পদে নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নেন ১ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন ৪৬ জন। সব প্রক্রিয়া শেষে নিয়োগ পান ২৮ জন। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে তারা প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে হাইওয়ে পুলিশ দুজন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দুজন এবং খুলনা মেট্রোতে দুজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন।

বাকি ২২ জন নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশে।

গত সোমবার রাজধানীর কাকলি ক্রসিং, মহাখালী সিগন্যাল, মোহাম্মদপুরের আড়ংয়ের সামনের সিগন্যালে শিক্ষানবিশ নারী ও পুরুষ সার্জেন্ট এবং ট্রাফিক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। টেলিফোনে কথা হয় রংপুর বিভাগের একমাত্র নারী সার্জেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পলি রানী রায়ের সঙ্গে। তিনি সারদায় প্রশিক্ষণের সময় ৬১৯ জনের মধ্যে অস্ত্র চালনা ও প্যারেডে প্রথম হয়েছিলেন।

মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণে থাকা নারী সার্জেন্টরা আপাতত নিজে মামলা করতে পারবেন না। নিজের ব্যবহারের জন্য অস্ত্রও পাবেন না। মোটরবাইক পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। প্রায় এক মাসে কাজের অভিজ্ঞতায় পলি রানী রায় জানালেন, ওয়াকিটকির ব্যবহার, গাড়ি জব্দ অথবা জরিমানা করার পদ্ধতি আয়ত্তে এনেছেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তির শরীর তল্লাশির পদ্ধতিও শিখে ফেলেছেন।

সাংবাদিকদের কথা হয় কাকলি ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত রাবেয়া আখতারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখানে কাজ করার ক্ষেত্রে অন্য যারা আছেন, সবাই খুব সহযোগিতা করছেন। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি থামানোর কাজটি একটু বেশি চ্যালেঞ্জের মনে হয়। রাবেয়ার সঙ্গে সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন আরও দুজন নারী। গতকাল একজন পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্যারেডে অংশ নিতে যান। আরেকজন ছুটিতে ছিলেন।

রাবেয়া বললেন, তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। মহাখালী ও আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন চুয়াডাঙ্গার মৌসুমি আহমেদ ও পঞ্চগড়ের জিনাত রেহানা। তারা দুজনই পড়েছেন ইডেন মহিলা কলেজে। ঢাকায় বসবাসের অভিজ্ঞতায় তারা জানালেন, সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে মহাখালী দিয়ে যাতায়াতের সময় জ্যাম দেখে তিক্ত অভিজ্ঞতা হতো। এতক্ষণ জ্যাম কেন? ট্রাফিক কী করছে? এসব প্রশ্নও মাথায় আসত। তবে এখন তারা বুঝতে পারছেন, মানুষ আইন মানে না বলেই জ্যাম হচ্ছে।

দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কোনো মন্তব্য করে কি না জানতে চাইলে দুজনই বললেন, একজন গাড়ি থেকে মাথা বের করে বলেছে, আরে, দিনে দিনে আর কত কী দেখব, আরেকজন বলেছে, ম্যাডাম, আমরা আছি। মৌসুমি হাসতে হাসতে বলেন, 'সার্জেন্ট হওয়ার পর বাড়ি গেলে লোকজন 'নারী পুলিশ' দেখার জন্য এসেছেন। তাঁরা ভেবেছেন, আমিও শুধু লাঠি হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকব। অথবা পুলিশের দারোগা হয়েছি।'

গুলশান ট্রাফিক জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, নারী চালক, নারী যাত্রী বা গাড়ির নারী মালিকদের মুখোমুখি হতে নারী সার্জেন্টরা অনেক বেশি সহায়তা করতে পারবেন। তবে পলি রানী রায়ের কথায়, 'মানুষের সেবা করতে পারছি ভেবে খুব ভালো লাগে।'(মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040