কিডনী রোগের লক্ষণ
  2016-03-13 18:47:57  cri


লক্ষণ বুঝতে না পারার জন্য ক্রনিক কিডনি রোগে ভুগছেন এমন অনেকেই জানেন না যে তার এই রোগটি আছে। কিডনি রোগের যেকোন স্টেজের জন্যই কিডনি রোগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনই হচ্ছে এই রোগ নিরাময়ের মূল শক্তি।

কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা থাকলে সেই অনুযায়ী নিরাময়ের ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়। আপনার অথবা আপনার পরিচিত কারো যদি কিডনি রোগের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হোন। কারণ কিডনি রোগের উপসর্গগুলোর সঙ্গে অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার উপসর্গের মিল আছে। আসুন জেনে নেই কিডনি রোগের উপসর্গগুলো সম্বন্ধে।

এনার্জি কমে যাওয়া,অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা অথবা মনোযোগের সমস্যা হওয়া : কিডনির কর্মক্ষমতা যখন মারাত্মক ভাবে কমে যায় তখন রক্তে অপদ্রব্য হিসেবে টক্সিন উতপন্ন হয়। এর ফলে আপনি দুর্বল ও ক্লান্ত অনুভব করেন এবং কোন বিষয়ে মনোযোগ দেয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আরেকটা জটিলতা দেখা দিতে পারে, আর তা হচ্ছে এনেমিয়া। রক্তস্বল্পতার কারণেও দুর্বলতা বা অবসাদ গ্রস্ততার সমস্যা হতে পারে।

ঘুমের সমস্যা হওয়া : যখন কিডনি রক্ত পরিশোধন করতে অপারগ হয় তখন রক্তের টক্সিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বাহির হতে পারেনা বলে রক্তেই থেকে যায়। যার কারণে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়। অবেসিটি বা স্থূলতার সাথে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের যোগসূত্র আছে। এবং নিদ্রাহীনতা ক্রনিক কিডনি ডিজিজের একটি সাধারণ উপসর্গ।

ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও ফেটে যাওয়া : সুস্থ কিডনি অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কাজ করে থাকে। কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল বাহির করে দেয়, লাল রক্ত কণিকা তৈরি করে, হাড়কে শক্তিশালী করে এবং খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। শুষ্ক ও ফেটে যাওয়া ত্বক খনিজ ও হাড়ের অসুখের জন্য ও হতে পারে যা অ্যাডভান্স কিডনি রোগের সহগামী হিসেবে থাকতে পারে যখন কিডনি রক্তের পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনা।

ঘন ঘন প্রস্রাব করা : যদি আপনার প্রায়ই মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হয় বিশেষ করে রাতের বেলায় তাহলে এটা কিডনি রোগের লক্ষণ। যখন কিডনির ছাঁকনি গুলো নষ্ট হয়ে যায় তখন প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি পায়। ঘন ঘন মূত্রত্যাগ ইউরিন ইনফেকশনের ও লক্ষণ হতে পারে, পুরুষের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট গ্লেন্ড বড় হয়ে গেলেও এই উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে : সুস্থ কিডনি সাধারণত ব্লাড সেল গুলোকে শরীরের ভিতরে রেখে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ মূত্র হিসেবে বাইর করে দেয়। যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন ব্লাড সেল বের হতে শুরু করে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার এই লক্ষণটির কিডনি রোগের সাথে সাথে টিউমার, কিডনি পাথর বা ইনফেকশনেরও ইঙ্গিত হতে পারে।

প্রস্রাবে বেশি ফেনা হলে : প্রস্রাবে অনেক বেশি ফেনা দেখা দিলে বুঝতে হবে যে, প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন যাচ্ছে। ডিমের সাদা অংশ ফাটানো হলে যেমন ফেনা বা বাবেল হয় প্রস্রাবের এই বুদবুদ ও ঠিক সেই রকম। প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নামক প্রোটিনের উপস্থিতির জন্যই এমন হয়। কিডনির ফিল্টার ড্যামেজ হয়ে গেলে প্রোটিন লিক হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয় বলে প্রস্রাবে ফেনা দেখা দেয়।

চোখের চারপাশে ফুলে গেলে : যখন কিডনি অনেক বেশি লিক করে তখন প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায় বলে চোখের চারপাশে ফুলে যায়।

পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে গেলে : কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে পা এবং গোড়ালি ফুলে যায়। পায়ের নীচের অংশ ফুলে যাওয়া হার্ট, লিভার এবং পায়ের শিরার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।

ক্ষুধা কমে গেলে : এটা খুবই সাধারণ সমস্যা কিন্তু শরীরে টক্সিনের উতপাদন বৃদ্ধি পেলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ফল স্বরূপ ক্ষুধা কমে যায়।

মাংসপেশীতে খিঁচুনি হলে : কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা এবং মাংসপেশিতে খিল লাগার সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা কমে গেলেও মাংসপেশিতে খিল লাগার সমস্যা দেখা দেয়।

এ ছাড়াও বমি বমি ভাব,বমি হওয়া,নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হওয়া,শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া,সব সময় ঠাণ্ডা অনুভব করা,মাথা ঘোরা,কোমর ও পায়ে ব্যাথা হওয়া ইত্যাদি উপসর্গগুলোও দেখা দিতে পারে। যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিমপল ইউরিন টেস্ট (ACR) এবং ব্লাড টেস্ট (eGFR) করিয়ে আপনার কিডনির কোন সমস্যা আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে পারেন। (ওয়াং হাইমান উর্মি/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040