পাহাড়ি অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য নিংসিয়া 'দ্বাদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা' গ্রহণ করেছে। এ অঞ্চল থেকে তখন ব্যাপক হারে নাগরিকরা স্থানান্তরিত হতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭৮ হাজার আটশ' বাড়ির তিন লাখ ৪৬ হাজার মানুষ সে সময় স্থানান্তরিত হয়। এরপর তারা নতুন নির্মিত বাড়িতে বসবাস করেন এবং তাদের আগের কষ্টকর জীবনধারা একদম বদলে যায়।
এ অঞ্চলের অধিবাসী চাং স্যুয়ানকে ২০১১ সালের নভেম্বরে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বর্তমানের গুইয়ান শহরের লংদে জেলার ছিংছুয়ান গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। আগের বসবাসের পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন,
'আগের বাড়িঘর ছিল মাটি দিয়ে তৈরি। বৃষ্টিতে তা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল। আগে আমাদের বাড়িতে ব্যবহারের জন্য পানি ছিল না। প্রতিদিন সকালে আমরা অনেক দূরে গিয়ে পানি নিয়ে আসতাম। সেখানে পানির খুব অভাব ছিল।'
সেখানে জীবনযাত্রা যেমন কঠিন তেমনি পরিবহন ব্যবস্থাও ছিল আরো কষ্টকর। তাই সেখানকার নাগরিকদের জীবনযাত্রা উন্নত হতো না। গুইয়ান শহরের লংদে জেলার ফেংলিং থানার মেয়র চাং হুইমিন বলেন, 'ওই অঞ্চলে তখন বসবাসের পরিবেশ অনেক কঠিন ছিল। যাতায়াতের ভালো কোনো সড়ক ছিল না এবং খাবার পানির সংকট ছিল ভীষণ। সেখানকার মানুষ গাধা দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহন করতেন। কারণ সাধারণ গাড়ি চলাচলের সড়ক সেখানে ছিল না।'
নিংসিয়া'র নাগরিক স্থানান্তর পরিকল্পনা বিশেষ করে পাহাড়ি নাগরিকের জন্য অনেক কার্যকরী হয়েছে। এর মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলে নাগরিকদের সুন্দর পরিবেশ স্থানান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিটি পরিবারকে ৫৪ বর্গ মিটারের বাসা তৈরি করে দিয়েছে। নতুন এসব বাসাবাড়িতে পানি, বিদ্যুত্ সুবিধা রয়েছে। প্রতিটি জনবসতিতে স্কুল, হাসপাতাল, মহাচত্বর, সুপারমার্কেট, কৃষি যন্ত্রপাতি, দোকান ও কর্মসংস্থান সেবা স্টেশনসহ ধারাবাহিক অবকাঠামো ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব কারণে নতুন এ এলাকায় জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। নিংসিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন কার্যালয়ের পরিচালক চাং স্যুউ এ সম্পর্কে বলেন, 'পানির কাছাকাছি, শহরের কাছাকাছি ও সড়কের কাছাকাছি থাকা হলো উন্নত জীবনযাপনের তিনটি প্রয়োজনীয় শর্ত। এর মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনযাত্রা আরো সুবিধাজনক হয়ে ওঠে।'
নাগরিকরা নতুন বাড়িতে স্থানান্তরিত হবার পর নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সে বাড়িঘর সম্প্রসারণ করতে পারে। স্থানীয় সরকার নাগরিকদের নতুন বাড়িতে স্থানান্তর করার প্রথম দুই বছর প্রতিটি বাড়িতে খাবার পানি ও তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাবদ এক হাজার ইউয়ান দিয়েছে। খাবার পানি ও বিদ্যুত্ নিয়ে কোনো সমস্যা হলে, মেরামত সেবাও দেওয়া হবে। এ অঞ্চলের নাগরিক চাং স্যুয়ান এ সম্পর্কে বলেন, 'এখন আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। শিশুদের স্কুল ও খাওয়ার পানির পর্যাপ্ত সুবিধা রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভিন্নভাবে আমাদের সুন্দর জীবনের জন্য অনেক সেবা দিয়েছে।'
চংনিং জেলার ছুখৌথাইইয়াংলিয়াংয়ের নাগরিক জিন লুরেন আগে হাইইউয়ানের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করতেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আগের জীবন বর্তমান জীবনের চেয়ে অনেক সুন্দর। সত্যি অনেক ব্যবধান রয়েছে, অভাবনীয়। আগের জীবন ছিল অনেক কঠিন, কিন্তু এখন আমাদের জীবন অনেক সুন্দর, সহজ ও সুবিধাজনক হয়েছে।'
এত বড় জনগোষ্ঠীর স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনেকে কঠিন ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন বিষয়টি ছিল আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কোনো কোনো বড় পরিবারকে পর্যাপ্ত আয়তনের বাড়ি সরবরাহ করা যায়নি। তবে স্থানীয় সরকার অব্যাহতভাবে নাগরিকদের বসবাসের ব্যবস্থা উন্নত করে যাবে। নিংসিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন কার্যালয়ের অভিবাসী পরিচালনা অফিসের পরিচালক চাং ইয়ইয়ান বলেন, 'ধীরে ধীরে আমাদের এ অঞ্চলে শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। যে বাড়িতে লোকসংখ্যা বেশি, আমরা তাদের বাড়ির সমস্যা সমাধান করব। আমরা তাদের সুষ্ঠু জীবনযাপন নিশ্চিত করবো।'