সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ন্যাটোর মহাসচিব ইয়ান্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটো বর্তমানে বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করছে। ইউক্রেন পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে বৃহত্তম শরণার্থী সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্ব আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে অনিরাপদ। এ ব্যাপারে ন্যাটোকে যথাযথ সাড়া দিতে হবে। তিনি বলেন, "সর্বমুখী হুমকি মোকাবিলার জন্য আমরা ন্যাটোর প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হবার পর স্পষ্টভাবেই সামষ্টিক প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা কার্যকর করছি। ইউরোপের মিত্রদেশ ও কানাডা দীর্ঘ কয়েক বছর পর প্রতিরক্ষা-বাজেট হ্রাসের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তা ছাড়া, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং ইউরোপে দেশটির সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।"
আলোচনার পর অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা ন্যাটোর সামরিক ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হন। সম্মেলনের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা পূর্বাঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়াতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেন, "এটা হবে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা। কোনো মিত্রদেশ হামলার শিকার হলে, গোটা ন্যাটো হামলার শিকার হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে জোট সামগ্রিকভাবে সাড়া দেবে।"
মহাসচিব আরও বলেন, ন্যাটোর সামরিক পরিকল্পনাকারীরা চলতি বছরের বসন্তকালে পূর্বাঞ্চলে সামরিক অগ্রবর্তী ফ্রন্টের শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা পেশ করবে। সদস্য দেশগুলো এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। চলতি বছরের জুলাই মাসে পোল্যান্ডের রাজধানী ভারশাভা'তে (ওয়ারশ) অনুষ্ঠেয় ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে এ ব্যাপারে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, ন্যাটো ইন্টারনেট নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে ইইউ'র সঙ্গে একটি প্রযুক্তিগত চুক্তিতে পৌঁছেছে। ন্যাটোর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যাটো ও ইইউ'র ইন্টারনেট নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য প্রযুক্তিগত চুক্তির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এ চুক্তির আওতায় দু'পক্ষ ইন্টারনেটসক্রান্ত জরুরি তথ্য বিনিময় করবে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করবে।
ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশান সার্ভিস (ইইএএস)-এর উপ-মহাসচিব পেড্রো সেরানো এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ন্যাটোর সাথে ইন্টারনেট নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা হচ্ছে ইইউ'র ইন্টারনেট প্রতিরক্ষানীতির পাঁচটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়ের অন্যতম। স্বাক্ষরিত চুক্তিটি দু'পক্ষের সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিও বটে।
এদিকে, ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্মেলনে ইউরোপের শরণার্থী সংকট নিয়েও আলোচনা হবার কথা। শরণার্থী সংকট মোকাবিলা সম্পর্কে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, "তুরস্কের মতো মিত্রদেশগুলো যখন শরণার্থী ও অভিবাসী সংকট মোকাবিলা করছে, তখন ন্যাটো তাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে তা ভেবে দেখতে হবে। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করবো এবং নীতি ঠিক করার চেষ্টা করবো।" (প্রেমা/আলিম)