উইগুর ভাষায় 'আলমা' অর্থ 'আশা'। ২০ বছর ধরে আলমা মুসলমানদের উপযোগী খাদ্য বাজারজাত করে আসছে। শুরু হয়েছিল ছোট পরিসরে। কিন্তু বর্তমানে এটি ৩৮ কোটি ইউয়ানের একটি বড় প্রতিষ্ঠান। আমিতি এশা 'আলমা খাদ্য গোষ্ঠী'র উরুমুচিতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি গর্বিতভাবে আমাদেরকে বলেন, 'আমাদের তিন ধরণের ব্যবসা রয়েছে। এক, মুসলিম খাদ্য উত্পাদন, দুই, সুপারমার্কেট চেইন এবং রেস্তোরাঁ চেইন। আমাদের উরুমুচিতে মোট ১৬টি নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র এবং গোটা চীনে ৪ হাজারেরও বেশি স্টোর রয়েছে।'
আলমা'র সম্পর্কে তুরস্কের অর্থনীতিবিদ এর্তান আকসোই বলেন, 'আলমা'র খাবার সুস্বাদু। কিন্তু আমার মনে হয়, গোষ্ঠীটির সাফল্যের আসল কারণ ভোক্তাসেবার উন্নত মান এবং গ্রামাঞ্চলে বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।'
আলমা'র সামনে সবচে' বড় চ্যালেঞ্জ খাদ্যের মান বজায় রাখা। আলমা খাদ্যের মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। ২০০০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন পেয়েছে। আলমা গোষ্ঠীর উরুমুচি খাদ্য কারখানার উপ-পরিচালক সাইলিমান এ সম্পর্কে বলেন, 'আমরা খাদ্যের মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিই। উত্পাদনের সকল প্রক্রিয়ায় মান ঠিক রাখা হয়। বসের অনুমতি না-পাওয়া পর্যন্ত আমাদের খাদ্যের কোনো উপকরণ পরিবর্তন করা হয় না। মানের ব্যাপারে এখানে সবাইকে সতর্ক থাকতে হয়।'
আলমা গোষ্ঠীর খাদ্যপণ্য ২০১৪ সালে 'চীনের বিখ্যাত্ ব্রান্ড'-এর মর্যাদা পায়। সিনচিয়াংয়ে মুসলিম খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলমা'ই প্রথম এ মর্যাদা পায়। আলমা অন্যান্য ইসলামি দেশের সঙ্গেও সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। এটি তুরস্কের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে আদিলি খাদ্য কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারখানা প্রধানত চকোলেট উত্পাদন করে। এ আন্তঃদেশীয় কারখানা সম্পর্কে তুরস্কের প্রতিনিধি মুরাত তানসার বলেন, 'আমরা কিরগিজস্তানের সঙ্গে ২০ বছর ধরে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছি। আগে আমরা তুরস্কে এ ধরণের খাদ্য উত্পাদন করতাম। তবে সিনচিয়াং মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চল এবং আলমা'র পণ্যের মানও উন্নত। তাই আমরা এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছি।'
আলমা তুরস্কের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ-কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু মুরাত আলমা'র ব্রান্ডকে তুরস্কে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল সিনচিয়াংয়ের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করা। তারপর চীনের অন্যান্য স্থানেও এ সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে হবে। ভবিষ্যতে আলমা'র পণ্য তুরস্কের বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে আমাদের।'
তুরস্কের একজন সাংবাদিক গোখুম গোকমেন আলমা'র উত্পাদিত খাদ্য খাওয়ার পর তার প্রশংসা করেন। তিনি মনে করেন, আলমা'র খাদ্যের সাথে তুরস্কের খাবারের কিছু পার্থক্য রয়েছে। তবে আলমার খাবার অনেক ভাল। তিনি তাঁর বন্ধু ও পরিবারের জন্যও কিছু খাবার কিনতে চান।
এখন আলমা সিনচিয়াংয়ে বেসরকারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্যের প্রতীক। সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জেলার ৮৩০টি থানার ৬ হাজারেরও বেশি গ্রামে প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে।