বিদেশি ডিগ্রি লাভ করা চীনা শিক্ষার্থীদের দেশে কর্মসংস্থানের অবস্থা
  2016-02-08 19:26:06  cri

 


চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের প্রবণতার কারণে বিদেশে অধ্যয়ন করা চীনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে লেখাপড়া শেষ করে স্বদেশে ফিরে আসেন।

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বিদেশে লেখাপড়া করা চীনা শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা প্রায় ৪.৬ লাখ, এদের মধ্যে ফিরে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার, যা ২০১৩ সালের চেয়ে অনেক বেশি।

২০১৪ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বিদেশে অধ্যয়ন করা চীনা শিক্ষার্থীদের স্বদেশে ফিরে কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সম্পর্কিত একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বিদেশে অধ্যয়নরত ৭০ শতাংশ চীনা শিক্ষার্থী স্নাতক হওয়ার পর স্বদেশে ফিরে আসতে চান। বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুসারে আগামী ৫ বছরে চীনে ফিরে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর চেয়ে বেশি হবে।

তুমুল প্রতিযোগিতার কারণে বিদেশ থেকে স্নাতক হওয়ার পরও চীনা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সংবাদ বিষয়ক কোর্সের শিক্ষার্থী লিউ রান অভিযোগ করে বলেন, আমার লেখাপড়ার বিষয় দিয়ে চীনে একটি সন্তোষজনক চাকরি খুঁজতে পারি না। আমি ভিডিও খবর তৈরি করতে আগ্রহী, তবে কয়েকটি ওয়েবসাইটে চাকরির আবেদন করার পর বুঝতে পারি তারা দেশ বিদেশের রাজনৈতিক খবরের ওপর বেশি মনোযোগী, যার সম্পর্কে আমার আগ্রহ তেমন বেশি নয়।

চীনের শিক্ষাদান সংস্থা 'নিউ ওরিয়েন্টাল'-এর ২০১৫ সালে প্রকাশিত বিদেশে চীনা শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন সংক্রান্ত শ্বেতপত্র থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের প্রশাসকদের চোখে বিদেশে অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আরো বিস্তার, চিন্তাভাবনা আরো প্রাণবন্ত। তাদের ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষার দক্ষতা আরো ভালো এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর দক্ষতাও অনেক চমত্কার। তবে এর পাশাপাশি তাদের কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। যেমন আত্মবিশ্বাস অতি বেশি, দলকে সহযোগিতা করার সামর্থ্য দুর্বল এবং সহজেই এক কোম্পানি ত্যাগ করে অন্য একটি কোম্পানিতে যোগ দিতে চায়।

পেইচিংয়ের একটি উদ্ভাবনী ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান ম্যাডাম চাং ইউয়ে সংবাদদাতাকে জানান, বিদেশে স্নাতক হওয়া চীনা শিক্ষার্থীরা চমত্কার কর্মসংস্থানের প্রতি বেশি আশাবাদী। নিয়মিত ও সাধারণ চাকরির প্রতি তাদের আগ্রহ একেবারেই কম। তারা নিম্ন শ্রেণির মৌলিক চাকরি নিতে চায় না। তবে তাদের বুঝতে হবে যে, অনেক সিনিয়র বা প্রশাসনিক স্তরের চাকরির জন্য প্রচুর অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন। লিউ রানকে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি প্রতি মাসে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার ইউয়ান বেতন প্রত্যাশা করেন। সেই সঙ্গে প্রতি বছর ১৫ মাসের বেতন পাবেন বলে আশা করেন তিনি। তার ভাবনায় এমন পরিমাণের বেতন দিয়ে পেইচিং শহরে ভালো জীবনযাপন কাটানো সম্ভব।

লিউ রানের মতো অনেক শিক্ষার্থী বিদেশ থেকে একটি চিন্তাভাবনা নিয়ে চীনে ফিরে আসেন। এ সম্পর্কে চাং ইউয়ে বলেন, একবার একজন বিদেশ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করা শিক্ষার্থী আমাদের কোম্পানিতে চাকরির আবেদন করেন। ইন্টারনেট সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা তেমন ভালো নয়, তবে অনেক আগ্রহী।অফিসের প্রশাসনিক পদ বেশ পছন্দ করেন তিনি। তার প্রত্যাশা তিনি ২ লাখ ইউয়ান বার্ষিক বেতন পাবেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাওয়া সত্ত্বেও যদি শিক্ষার্থীদের চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় কোনো অভিজ্ঞতা না থাকে তবে তারা বেশি বেতন পেতে পারেন না।

বিদেশ থেকে ডিগ্রি লাভ করা চীনা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, স্বদেশে ফিরে এসে চাকরি করাদের মাসিক বেতন অধিকাংশরই ১০ হাজার ইউয়ানের চেয়ে কম। তা থেকে বোঝা যায়, চীনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করাদের চেয়ে বিদেশ থেকে ডিগ্রি লাভ করা চীনা শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য তেমন বেশি নয়।

এ সম্পর্কে চাং ইউয়ে বলেন, গত কয়েক বছরে যারা বিদেশ থেকে ডিগ্রি লাভ করে চীনে চাকরি পেয়েছেন তাদের বেতন সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি,তবে কয়েক বছর পর এমন দৃশ্য আর দেখা যায় নি। কারণ বিদেশ থেকে ফিরে আসা চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে এবং অনেক কোম্পানি চায় তাদের কর্মীরা তাদের কোম্পানিতেই থাকুক।

চীনের বিদেশে অধ্যয়ন সংক্রান্ত শ্বেতপত্রের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ৫৩.৮ শতাংশ চীনা শিক্ষার্থী বিদেশ থেকে চীনে ফিরে আসার পর দেশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না।

২০১৫ সালে বিদেশে চীনা শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিদেশ থেকে চীনে ফিরে আসা স্নাতকরা ৩২.৭ শতাংশ দেশে ফিরে আসার পর কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না এবং ১২.৯ শতাংশ দেশের পরিবেশ সহ্য করতে পারে না।কারণ বিদেশে অধ্যয়নের জন্য তাদের সামাজিক সম্পর্ক যেমন বন্ধুত্ব বা সহপাঠীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, সেই অবস্থায় একটি ভালো ও সন্তোষজনক চাকরি খুঁজে পাওয়া দারণ কঠিন ব্যাপার বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

শ্বেতপত্রে আরো বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে ডিগ্রি লাভ করাদের ৮৬ শতাংশ দেশে ফিরে আসার ৬ মাসের মধ্যে চাকরি পান। তাদের মধ্যে ৫৭.৮ শতাংশ নিম্ন স্তরে এবং ২৭.৪ শতাংশ মাঝারি স্তরে চাকরি করেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রথম বছরে তাদের গড় আয় ৮৩ হাজার ইউয়ান, দ্বিতীয় বছরে ১.৩ লাখ ইউয়ান এবং তৃতীয় বছরে ৩.২ লাখেরও বেশি।

বিদেশে স্নাতক করা শিক্ষার্থীদের জরিপ থেকে জানা গেছে, ৪৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের চাকরি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, ৩৬.৪ শতাংশ মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং মাত্র ১.২ শতাংশ খুবই সন্তুষ্ট।

জরিপের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেদের বেতন পূর্ব পরিকল্পনার চেয়ে কম হয়েছে বলে মনে করেন। ৭৬.৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরে আসার পর এক কোম্পানি থেকে চাকরি ছেড়ে অন্য একটি কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এ সম্পর্কে মানবসম্পদ বিভাগের প্রশাসক চাং ইউয়ে বলেন, বিদেশের বিখ্যাত ও শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের অভিজ্ঞতা থাকলে আমরা এ ধরনের আবেদনকারীদের যত দ্রুত সম্ভব একটি সাক্ষাতকারের সুযোগ দেই। তবে তিনি চাকরি পাবেন কিনা অথবা বেশি বেতন পাবেন কিনা তা আবেদনকারীর বহুমুখী দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত। যারা বিদেশের বিখ্যাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করেন বা আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের কর্ম অভিজ্ঞতা আমাদের বেশ আকর্ষণ করে।

ম্যাডাম চাং ইউয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিদেশ থেকে স্নাতক হয়ে স্বদেশে ফিরে আসার পর অবশ্যই নিজের চাকরি নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। মৌলিক পদ থেকে মাঝারি বা উঁচু পদে উন্নীত হওয়া যায়। চমত্কার দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে চমত্কার কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে অনেক প্রস্তুতির প্রয়োজন।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠান এখানেই শেষ। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn,

সময় মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করণে আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা bengali.cri.cn,সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহে একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে।যাই চিয়ান।

'বিদ্যাবার্তা' পরিবেশনায় ছাওইয়ানহুয়া সুবর্ণা ও এনামুল হক টুটুল।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040