চীনা মানুষের ভ্রমণবিলাস
  2016-02-10 18:13:41  cri



চীনের জাতীয় পর্যটন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ১২ কোটি চীনা পর্যটক বিদেশে ভ্রমণ করেছেন এবং তারা ব্যয় করেছেন ১০ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০১৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ১২ শতাংশ ও ১৬.৭ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া, বিদেশে ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা ও ব্যয়ের দিক থেকে চীনা পর্যটকরা বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করেছেন।
চীনের জাতীয় পর্যটন ব্যুরোর কর্মকর্তা লি চিন চাও সম্প্রতি জাতীয় পর্যটনসংক্রান্ত সম্মেলনে বলেন, চীনের অভ্যন্তরে ৪০০ কোটি বার ভ্রমণ করেছেন স্থানীয়রা। এর মানে দেশের ভেতরে বড় একটি পর্যটন-বাজার তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দেশে ও দেশের বাইরে যাওয়া মানুষের মোট সংখ্যা ২৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। জিডিপি ও কর্মসংস্থানে পর্যটনের অবদান ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।
মার্কিন জাতীয় পর্যটন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকারী চীনা মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ, যা ২০১৪ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। তারা মাথাপিছু ৬/৭ হাজার ডলার ব্যয় করেছেন সেখানে, যা অন্য সময়ের তুলনায় বেশি।
২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা পর্যটকরা মাথাপিছু ২২০০ ডলার ব্যয় করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপির ১.৬ শতাংশের উত্স এটি। এ ছাড়া, অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেছেন ১০ লাখ চীনা মানুষ এবং তাদের খরচের পরিমাণ ৩৫৫০ কোটি ডলার।
গ্লোবাল ট্যুরিজম এসোসিয়েশনের ধারণা অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যবসা ও ভ্রমণ বাজারে পরিণত হবে চীন।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সর্বশেষ এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্বে চীনা পর্যটকের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া, ২০১৪ সালের তুলনায় বিশ্বে পর্যটকের সংখ্যা ৪.৪ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাত ১১৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেছেন। নিজ দেশের বাইরে এক রাত থাকা পর্যটকের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৫ কোটি বেশি ছিল। ২০০১ সাল থেকে টানা ছ'বছর এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের বেশি ছিল।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়েছে, চীন হলো বিশ্ব পর্যটকের প্রধান উত্স দেশ। এরপর রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। চীনের পর্যটকরা মূলত জাপান ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ঘুরতে পছন্দ করেন।
২০১৬ সালের বসন্ত উত্সবেও বরাবরের মতোই চীনারা এক সপ্তাহের ছুটি পায়। পয়লা অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া  জাতীয় দিবসের ৭ দিনের ছুটি এবং বসন্ত উত্সবের ৭ দিনের ছুটি—এ দুটো সময় চীনাদের কাছে 'সোনালী সপ্তাহ' নামে পরিচিত। চীনা মানুষের জন্য বসন্ত উত্সব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও পছন্দের একটি উত্সব। চলতি বছরের বসন্ত উত্সবে বিদেশে ভ্রমণ-করা চীনা পর্যটকের সংখ্যা ৫৭ লাখ ৬০ হাজার এবং এর মধ্যে ২৬ লাখ ৫০ হাজার  জন বিদেশে বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন অর্থাত্ 'ছু সি'কাটায়।
 
যদিও প্রতিবছর বিদেশে বসন্ত উত্সব উদযাপনকারী চীনা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তবে চলতি বছর বৃদ্ধির গতি কমেছে। বসন্ত উত্সবে চীনা মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য প্রতিবেশি এশীয় দেশগুলো।
 
বিগত কয়েক বছরে, বিদেশে ভ্রমণ চীনাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছরের বসন্ত উত্সবে বিদেশে-যাওয়া চীনা পর্যটকের সংখ্যা একটানা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ৩০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ১২.৫ শতাংশ বাড়ে।
একদিকে ডলারের তুলনায় চীনা মুদ্রা রেন মিন পি'র মূল্য হ্রাস পেয়েছে এবং অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা বাড়ায়, পর্যটকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্ক। তা ছাড়া, চীনে দুর্নীতিদমন কার্যক্রমে অগ্রগতির কারণেও পর্যটনের ব্যাপারে অনেকে নিরুত্সাহিত হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

২০১৫ সালে ২৬ লাখ ৫০ হাজার  চীনা বিদেশে চীনের ঐতিহ্যিক উত্সব বসন্ত উত্সবের প্রথম দিন কাটায় এবং  ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৪০ হাজার।২০১৬ সালে চীনা পর্যটকদের প্রধান ৫ গন্তব্য হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া,  থাইল্যান্ড, জাপান, হংকং ও তাইওয়ান।  তারপর ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া ও রাশিয়ার স্থান। বিদেশে ভ্রমণ-করা চীনা পর্যটকের ৮০ শতাংশ এশীয় দেশ ও অঞ্চলে বেড়াতে পছন্দ করে। ২০১৬ বসন্ত উত্সবে ইউরোপ চীনা পর্যটকদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্যে পরিণত হয়।
 
সাধারণ দিনের তুলনায় বসন্ত উত্সব চলাকালে ভ্রমণের খরচ বেশি। যেমন ৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ দিন ৩ রাতের জন্য একজন চীনাকে অন্তত ৩৫৩৯ ইউয়ান খরচ করতে হয়েছে। অথচ ১৫ ফেব্রুয়ারি এ খরচ হবে মাত্র ১৮১৮ ইউয়ান।
(শিশির/আলিম)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040