চীনের 'দুই সন্তাননীতি' নিয়ে ছোট শিক্ষার্থীদের ভাবনা
  2016-02-01 19:21:12  cri











আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের 'দুই সন্তাননীতি' নিয়ে ছোট শিক্ষার্থীদের ভাবনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য জানাবো।

 খবরটি একটু মজার; যেটি চীনের দুই সন্তাননীতির সঙ্গে সম্পর্কিত।

আপনারা জানেন যে, চীন সরকার ২০১৬ সাল থেকে দেশটিতে এক পরিবারে 'দুই সন্তাননীতি' চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এ নীতিমালা চালুর পর চীনের সমাজে নানান প্রতিক্রিয়া শোনা যায়।

কুয়াংচৌ শহরের একটি প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শীতকালীন সেমিস্টারের চীনা ভাষার পরীক্ষায় পরিবারে 'দ্বিতীয় সন্তান' নেওয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মতামত সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন করা হয়। এরপর স্কুলের শিক্ষার্থীদের উত্তর চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাট ও ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার বিষয়ে বাবা মা কিভাবে বড় বাচ্চার সঙ্গে আলাপ করে এবং এ বিষয়ে কিভাবে বড় বাচ্চার মানসিক চিন্তা নির্মূল করা যায় সে সম্পর্কে কুয়াংচৌ শহরের ইউয়েসিউ এলাকার তুংশান রোড পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিচালক ম্যাডাম শি ইউ শিং বলেন, "আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বাচ্চা নিতে আগ্রহী পরিবারের সুখ ও স্থিতিশীলতার জন্য এ বিষয়ে বড় বাচ্চার মানসিক সমস্যা সমাধান করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ"।


একটি প্রাথমিক স্কুলের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ১৩০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ নিজের পরিবারে একজন ছোট ভাই বা বোন নেওয়ার আশা প্রকাশ করেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক দ্বিতীয় বাচ্চার নির্দিষ্ট লিঙ্গের প্রতি বিশেষ আশা প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র ৩০ শতাংশের চেয়ে কম শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বাচ্চা না নেওয়ার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছে।

যারা পরিবারে দ্বিতীয় বাচ্চা না নেওয়ার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছে, তাদের প্রশ্নের উত্তরে নানান কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছে, মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দ্বিতীয় বাচ্চা না নেওয়া ভালো।

আবার কেউ কেউ মুখে দ্বিতীয় বাচ্চার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরে লিখেছে যে, যদি বাবা মা দ্বিতীয় বাচ্চা নেন,তাহলে তাদের জীবন অনেক ক্লান্ত হবে, খরচও অনেক বেড়ে যাবে। দ্বিতীয় বাচ্চার যত্ন নেওয়ার কাজ শুধু দাদা দাদীকে করতে হবে। বাবা মাকে চাকরিতে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়, তাই তাদের পক্ষে দ্বিতীয় বাচ্চাকে দায়িত্বশীলভাবে যত্ন নেওয়া অনেক কঠিন।

কেউ কেউ আবার বাবা মার ভালোবাসা নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে। তারা লিখেছে, "যদি পরিবারে দ্বিতীয় বাচ্চা হয়, তাহলে বাবা মা অবশ্যই তাকে বেশি ভালোবাসবেন। আর আমার কোনো সমস্যা থাকলেও তারা চিন্তা করবেন না। কারণ যদি আমি মারা যাই, তাদের তো অন্য একজন বাচ্চা আছে"।

উল্লেখ্য, চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এবং ওয়েবসাইটে এই উত্তরটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে।

কেউ কেউ আবার উত্তরে বাচ্চা ও মায়ের সংলাপকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে। যেমন,

মা: তোমার জন্য ছোট ভাই নেবো, কেমন?'

বাচ্চা: না! লাগবে না।

মা: কেন?

বাচ্চা: তা কেনো বলার দোরকার আছে? ছোট ভাই নিলে আপনাকে তাকে দুধ,ভাত দিতে হবে,তার সঙ্গে ঘুমাতে হবে। বাসার বিভিন্ন কাজ কিভাবে করবেন?

মা: তাহলে আমি নেবো না।

বাচ্চা: মা, খুবই ভালো সিদ্ধান্ত, ধন্যবাদ আপনাকে! চিরদিন আপনাকে ভালোবাসবো!

যারা দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করেছে, তারা সাধারণত দ্বিতীয় বাচ্চার লিঙ্গের প্রতি আশা প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ ছোট বোনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে, কারণ তারা মনে করে ছোট ভাই বেশি শব্দ করে। অন্যদিকে, ছোট বোন খেলনার জন্য তার সঙ্গে যুদ্ধ করবে না, ঝগড়া করবে না এমন শব্দ উল্লেখ করেছে।

কেউ কেউ ছোট ভাইয়ের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করেছে, দুই ভাই একসঙ্গে খেলতে পারবে, ছোট ভাই বেশি টাকা অর্জন করতে পারবে, দেশের জন্য বেশি অবদান রাখবে। এছাড়া, ছোট ভাই ছোট বোনের চেয়ে আরো শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেছে তারা।

এসব উত্তরের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর উত্তর সবাইকে ভীষণ মুগ্ধ করেছে। সে লিখেছে, "ছোট ভাইকে আমি যত্ন নিতে চাই, কারণ এর মাধ্যমে আমি বুঝতে পারবো যে, বাবা মা আমার ছোটবেলায় আমাকে যত্ন নেওয়ার সময় কত কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন"।

অপর একজন শিক্ষার্থী তার উত্তরে লিখেছে, "বাবা মা আপনাদের ভালোভাবে স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হবে, বেশি ক্লান্ত হবেন না"। বিশেষ করে মাকে বলেছে, "স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব না দিলে দ্বিতীয় সন্তান নিতে পারবেন না। যত দ্রুত সম্ভব আমার জন্য একজন ভাই বা বোন নেওয়ার প্রত্যাশায় রয়েছি আছি"।

এ বিষয় নিয়ে চীনের শহরাঞ্চলের যুবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। 'দ্বিতীয় সন্তান নীতি' চালু করার পর অনেক দম্পতি দ্বিতীয় সন্তান নিতে চান।

তারা মনে করেন, এক সন্তানকে একাই অনেক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় এবং বৃদ্ধকালে এই এক সন্তানকে বাবা মায়ের যত্ন নিতে অনেক চাপের সম্মুখীন হতে হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে একটি অনলাইন শপিং ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, তাদের জরিপে ৮০ শতাংশ পরিবার প্রতি মাসে বাচ্চার জন্য গড়ে ৩০০০ ইউয়ানেরও বেশি ব্যয় করেন, ১০ শতাংশের মাসিক খরচ ৭০০০ ইউয়ানেরও বেশি। দ্বিতীয় সন্তান নিলে এ পরিবারের মাসিক ব্যয় আরো বাড়বে বলে বড় অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হতে হবে ৬২ শতাংশ চীনা পরিবারকে।

কেউ কেউ বলেছে, সন্তানের স্বাস্থ্যকর খাবার, কাপড়চোপড় ও চিকিত্সার ব্যয়সহ প্রত্যেক মাসে এর খরচ কমপক্ষে ৩০০০ ইউয়ান। দ্বিতীয় বাচ্চা নিলে অবশ্যই বড় বাড়িঘর প্রয়োজন এবং তাদের শিক্ষাদান ও বসবাসের ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য আরো বেশি অর্থনৈতিক ভিত্তি প্রয়োজন।

আরেকটি বিষয় হল চীনে যারা প্রথম সন্তান নেন, তার যত্ন নেওয়ার বিষয়ে সন্তানের দাদা দাদী সবসময় সাহায্য করে থাকেন। তবে দ্বিতীয় বাচ্চার সময় ছোট বাচ্চার যত্ন নেওয়ার জন্য ৫১ শতাংশ মাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে, কারণ দাদা দাদীকে বড় বাচ্চার যত্ন নিতে হবে।একসাথে দু'জন সন্তানকে দেখাশোনা করা অসম্ভব বলে মাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। এর ফলে শুধু বাবাকে চাকরি করে সারা পরিবারের অর্থনৈতিক ব্যয় বহন করতে হবে। দ্বিতীয় বাচ্চা নেওয়া পরিবারের ৮০ শতাংশ মনে করেন, দুই বাচ্চা নেওয়ার পর জীবনযাপনের মান আগের চেয়ে হ্রাস হয়েছে।(সুবর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040