কলম্বিয়া কফির আকর্ষণীয় শক্তি
  2016-01-26 11:35:38  cri

সম্প্রতি পেইচিংয়ে কলম্বিয়ার দূতাবাসের সহায়তায় এবং প্রো-কলাম্বিয়া (ProColombia), ও কলাম্বিয়া ক্যাফে ফেডারেশনের (Federacion Nacional de Cafeteros de Colombia) যৌথ উদ্যোগে 'কলম্বিয়া কফির স্বাদ'-বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে দেশি-বিদেশি কফি-ভক্তদের জন্য কয়েক ডজন কলম্বিয়া কফির ব্র্যান্ড পরিবেশন করা হয়।

ব্রাজিল কফির চেয়ে কলম্বিয়া কফির স্বাদ একটু হালকা ধরনের হয়। কলম্বিয়া কফি পান করার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুরা এর স্বাদে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। ফুল বা রেড ওয়াইনের (red wine) স্বাদও এতে পাওয়া যায়, সঙ্গে আছে চকোলেটের মিষ্টি স্বাদ। কিন্তু এর অম্ল ও মিষ্টতার পেছনে আবার কিছুটা তিক্ত স্বাদও রয়েছে।

কলম্বিয়ার রপ্তানি বাণিজ্য প্রচারবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হুয়ান পাবলো কারিল্লো (Juan Pablo Carrillo) বলেন, কলম্বিয়া কফির বিশেষ স্বাদের রহস্য হলো দেশটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ।

"কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরে অবস্থিত। এর চার দিকে ক্যারিবীয় সাগর, প্রশান্ত মহাসাগর এবং আন্দিজ পর্বতমালা অবস্থিত। সেজন্য কলম্বিয়ার চারটি ঋতু বসন্তকালের মত আরামদায়ক। আর এখানকার বৃষ্টিপাত কফির জন্য বেশ উপযুক্ত। তা ছাড়া কলম্বিয়া হলো পর্বতের দেশ। স্থানীয় কৃষকরা প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। তা ছাড়া এ বিশেষ পদ্ধতিটি এ অঞ্চলে পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কারণ।"

চীনে নিযুক্ত কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত কারমেনযা কারামিল্লো (Carmenza Caramillo) বলেন,

"২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষ কলম্বিয়ার কফির প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী। তারাও স্থানীয় পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখেন। আমরা কলম্বিয়া কফির স্বাদ আস্বাদন আয়োজনের মাধ্যমে কলম্বিয়াকে বিশ্বের বুকে পরিচিত করে তোলা ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময় ও সমঝোতা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করি। কেউ কেউ জানতে চায় কফিতে চিনি বা দুধের ব্যবহার সম্পর্কে। এ কৌতূহল অনেকটা কলম্বিয়াকে জানার কৌতূহলের মতো। পরে মানুষ জানতে পারে যে কফি ছাড়া কলম্বিয়ায় সঙ্গীত, সালসা নাচ (salsa dance), রত্ন এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনও খুবই আকর্ষণীয়।"

বর্তমানে অনেক মানুষ কলম্বিয়া কফি পছন্দ করে। কলম্বিয়ার ক্যাফেটেরিয়া ফেডারেশনের (Federacion Nacional de Cafeteros de Colombia) চীনা প্রতিনিধি উ চিয়া হাং বলেছেন,

"১৫ বছর আগে চীন-কলম্বিয়া কফিবাণিজ্য শুরু হয়। প্রথমে প্রথম কয়েক বছরে উন্নয়নের গতি ছিল খুব ধীর। এরপর ২০০৬ সালে আমরা চীনে অফিস চালু করি। তারপর ৪-৫ বছরের মধ্যে কলম্বিয়া কফি ধীরে ধীরে চীনের বাজারে জনপ্রিয় হতে থাকে এবং দু'দেশের বাণিজ্য উন্নত পর্যায়ে প্রবেশ করে। আমরা আশা করি, চীনা ভোক্তাদের জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন স্বাদের কফি উপহার দিতে পারবো। আমরা আশা করি চীনা বন্ধুদের আমরা উন্নত মানের কফি উপহার দিতে পারবো"

বন্ধুরা প্রবন্ধটি এখানে শেষ। এখন শুনুন ব্রাজিলের শিল্পের ইতিহাস সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন। এ প্রতিবেদনে আমি শিল্পী ক্রিস্টাস নোগ্রেগার সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।

সম্প্রতি চীনের সাংস্কৃতিক একাডেমির লেকচার হলে 'ব্রাজিলিয়ান শিল্পের ইতিহাস' নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে হলের কোনো আসন খালি ছিল না। সব পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ব্রাজিলের শিল্পী ক্রিস্টাস নোগ্রেগা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন।

"সবকিছু শুরু হয়েছে ১ হাজার ৫'শ বছরের আগে। পর্তুগালের সমুদ্রচারী মানুষরা ব্রাজিলে পৌঁছায়। ব্রাজিলে তাদের উপনিবেশবাদ শুরু হয়।"

পর্তুগালের নাবিকদের সঙ্গে ছিল আফ্রিকান দাস-দাসী। তাদের ধর্মবিশ্বাস হলো ক্যানডোম্বল (Candomble)। এটি হলো বহু-দেবতায় বিশ্বাসের একটি ধর্ম। দিনের বেলা তাদের অনুষ্ঠানে সংগীত বাজানো হতো, ঢোল বাজিয়ে দেবতাকে পূজা দেওয়া হতো। ঢোলের ছন্দ হলো ব্রাজিলের সাম্বা (Samba) নাচের প্রেরণা। কিন্তু আফ্রিকান দাসদের বয়ে আনা সংস্কৃতি তখন মৃতপ্রায়। তাদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোর জন্য নোগ্রেগা বিশেষ একটি ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ছবিতে লাল গাছের পাতা রয়েছে। কিন্তু অভাবনীয় একটি বিষয় হলো সে লাল গাছের পাতাগুলো রক্ত দিয়ে মাখানো।

তিনি বলেন,

"দু'বছর ডাক্তার ও প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় একটি রক্তের মতো রং তৈরি করেছি। যা গাছের পাতায় মাখানো হয়েছে। এই পাতাগুলো ক্যানডোম্বল অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত আফ্রিকান উদ্ভিদের পাতা।"

প্রাচীনকাল থেকেই শিল্পীরা বিভিন্ন অনুভূতি বোঝানোর জন্য রক্তের মতো রং বা রক্ত ব্যবহার করে থাকেন। নোগ্রেগা আশা করেন রক্তের মতো রং ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি হারানো সংস্কৃতিকে আবার শুরু করতে পারবেন, সেদিকে সবার দৃষ্টি তুলে ধরতে পারবেন।

ব্রাজিলে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিজনিত বন আছে। সেজন্য সে অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কও শিল্পীদের কর্মের একটি বিশেষ অনুপ্রেরণা। নোগ্রেগা ও তার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এক মাস ধরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গলে বড় বড় পাতা খুঁজে বেড়িয়েছে। তারপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছে। যা অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

নোগ্রেগা বলেন, শিল্প হলো নিজেকে খোঁজার মাধ্যম। নিজেকে জানতে পারলে সারা বিশ্বকে জানা যায়।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমৎকার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com।

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান (জিনিয়া/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040