20160128yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিংয়ের শীতল বাতাসের মধ্য থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমি ঢাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে সেখানের সূর্যালোক ভীষণ মিস করছি বন্ধুরা। এখন বেইজিংয়ে প্রচণ্ড শীত। বাইরে গেলে প্রবল বাতাস কাপড়ের ভিতরে ঢুকতে চায়। সঙ্গে রয়েছে হাড় কনকনে শীতের হানা। ভীষণ কঠিন অবস্থা।
প্রিয় শ্রোতা, একটু উষ্ণতার জন্য আমি গরম জায়গায় যেতে চাই। আমি ভ্রমণ করতে চাই। বন্ধুরা, আজকের 'সুর ও বানী' আসরে আমরা ভ্রমণের তাত্পর্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবো। আপনাদের সঙ্গে আমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আশা করছি ভালো লাগবে সকলের।
শ্রোতাবন্ধুরা, তবে গল্প শোনার আগে প্রথমে একটি গান শুনুন। এ গানের নাম 'আমি ভ্রমণ করতে চাই'। গেয়েছেন ফান ইউয়ে ইয়ুন।
তিনি গেয়েছেন, 'আমি বাতাসের সাহায্যে ভ্রমণ করতে চাই। বাতাসে ভেসে আমি নিউ ইয়র্ক যেতে পারি, টোকিও যেতে পারি, মরুভূমিতেও যেতে পারি। মোবাইল ফোন রেখে দিবো। সব ঝামেলা রেখে দিবো। রোমান্টিক ছুটি কাটবো'।
প্রিয় শ্রোতা, অনেক সময় কয়েক দিন ছুটি নিয়ে অন্য দেশ বা অন্য শহর ভ্রমণ করলে মনের মুক্তি মেলে। পানির নিচের মাছের যেমন বজ্রপাতের আগে বিরক্তি লাগে। তাড়াতাড়ি পানির ওপর ভেসে দীর্ঘ শ্বাস নিতে চায় সে। অআমাদেরও মাঝে মাঝে এমন লাগে। যেন দম বন্ধ হয়ে যেতে চায়। ক্লান্তি চলে আসে মনে-প্রাণে। এমর অবস্থায় নিজের পরিচিত শহর ছেড়ে অন্য এক অপরিচিত শহরে গিয়ে কিছু নতুন বিষয় জানার আগ্রহ থাকলে দূরে কোথাও ভ্রমণে যাওয়া ভালো। অচেনা বিশ্বের প্রতি শিশুদের মতো আমরা সবসময়ই কৌতুহল রয়েছে। ভ্রমণের মাধ্যমে এ কৌতুহল মিটাতে চাই আমি। কিন্তু ভ্রমণের তাত্পর্য কী? এ নামে একটি গান শুনুন।
গায়িকা চেন ঈ চেন গেয়েছেন, 'তুমি অনেক সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখেছো। তুমি অনেক সুন্দর মেয়েদের সাথে মিলিত হয়েছো। তুমি প্যারিসের রাতের দৃশ্য দেখেছো। তুমি বেইজিংয়ের তুষারপাত দেখেছো। তুমি অনেক দূরে ভ্রমণ করেছো। তুমি যত্ন করে প্রতিটি জায়গার স্মারকচিহৃ বাছাই করেছো। কিন্তু তুমি ভ্রমণের তাত্পর্য বলতে পারো না। তুমি আমাকে বিদায় করে দিয়েছো। এটা কী তোমার ভ্রমণের তাত্পর্য?'
বন্ধুরা, এর আগে আপনি কোথায় ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন? কোন জায়গাটি আপনার বেশি ভালো লেগেছে? কার সঙ্গে ভ্রমণ করতে সবচেয়ে আনন্দবোধ করেন? এ সব প্রশ্ন আপনি কখনো চিন্তা করেছেন?
আমি প্রথম উত্তর দিই। তারপর আপনারা ইমেইলে আপনাদের উত্তর আমাকে জানাবেন, কেমন?
আমি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করেছি। আমার সবুজ-শ্যামল, শান্তিপূর্ণ জায়গায় যেতে বেশি ভালো লাগে। মা ও সন্তানের সঙ্গে ভ্রমণ করতে সবচেয়ে আনন্দবোধ করি।
ভ্রমণের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টির আরেকটি জানালা খুলে যায়। কিন্তু চাকরির কারণে আমরা ইচ্ছা করলেই সব সময় সব জায়গায় যেতে পারি না। তবে যখন কয়েক দিনের জন্য ছুটি পাই, কোথাও ভ্রমণের সুযোগ পাই, মনে হয়, নিজের সাধারণ জীবনে এক চিলতে শান্তির জানালা খুলে গেছে। এ জানালার ফাঁক দিয়ে সবুজ ঘাস ও টাটকা ফুলের সুগন্ধ আসে। চলুন, আমরা 'একসাথে ভ্রমণ করতে চলুন' নামের একটি গান শুনি।
শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা জানেন, চীন একটি বড় দেশ। এ দেশের বিভিন্ন প্রদেশের ভিন্ন ধরণের সৌন্দর্য আছে। আমি ইয়ুননান, কুয়াং তোং, ফু চিয়ান, লিয়াও নিং, হেই লোং চিয়াং, শান তোং ও ছিংহাইসহ নানা জায়গায় গিয়েছি। এ জায়গাগুলোর মধ্যে ইয়ুননান আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছি। আমি চারবার ইয়ুননানে গিয়েছি। কিন্তু আবারো যেতে চাই। ওই প্রদেশে অনেক সংখ্যালঘু জাতি বাস করেন। এক একটি জাতির জীবনযাপনের রীতিনীতি একেক রকম। ফলে এ প্রদেশটি বৈচিত্রময়। ইয়ুননানের আবহাওয়াও চমত্কার। সারা বছর বসন্তকালের মতো আরামদায়ক। আসুন, আপনারা গায়িকা শু চিয়ান ইয়ার গাওয়া 'রঙিন মেঘের দক্ষিণাঞ্চল' নামের গানটি শুনুন। এ গানের তালে তালে অনুভব করুন, ইয়ুননান প্রদেশের সৌন্দর্য।
বন্ধুরা, ২০১৩ সালের গ্রীষ্মকালে আমি মাধ্যমিক স্কুলের কয়েকজন সহপাঠির সঙ্গে চীনের ছিংহাই প্রদেশে গিয়েছিলাম। সেখানকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০০ মিটার। সেখানে পৌঁছানোর পর প্রথমে একটু মাথা ব্যথা হয়। শ্বাস নিতেও একটু কষ্ট হয়। তবে সেখানকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ক্যানোলা ফুল দেখে মুগ্ধ হতে হয়। চোখ জুড়িয়ে যায়। সেখানকার নীল আকাশ ও সাদা মেঘের নিচে দাঁড়িয়ে আত্মহারা হয়ে যায় হৃদয়। ছিংহাই হ্রদের পানি আয়নার মতো স্বচ্ছ। শান্তভাবে বয়ে যাওয়া নীল জল দেখে মনে পরম শান্তির অনুভূতি হয়। ছিংহাই প্রদেশ যেন পৃথিবীর স্বর্গ। সত্যি বলছি, সুযোগ থাকলে আমি আবার যেতে চাই সেখানে।
বন্ধুরা, শুনুন শু ছিয়ান ইয়ার গাওয়া 'ছিংহাই হ্রদ' নামের অদ্ভূত সুন্দর গানটি।
সুপ্রিয় শ্রোতা, আমার এমন দুয়েকজন বন্ধুও আছেন, যারা কাজের ব্যস্ততায় বা বাচ্চাদের দেখাশোনার কারণে কোথাও যেতে পারেন না। তারা বলেন, ভবিষ্যতে সুযোগ থাকলে যাবো। অবসর নেওয়ার পর যাবো। কিন্তু অবসর নেওয়ার পর হয়তো আবার কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
বন্ধুরা, মনে রাখবেন আমাদের জীবন একবারের জন্য। সময় চলে গেলে আর ফিরে আসে না। আমি বিশ্বাস করি, ৩০ বছর বয়সে আমার চোখের দৃষ্টি আর ৫০ বছর বয়সে আমার চোখের দৃষ্টি একই রকম হবে না। ফলে আমি সময় নষ্ট না করে রওনা হই নতুন পথের সন্ধানে। তাই তো আগামীকাল আমি তাইওয়ান যাবো। শুনেছি আগামী কয়েক দিন সেখানে বৃষ্টি হবে। অসুবিধা নেই। আমার ছাতা আছে।
বন্ধুরা, আপনার আমার সঙ্গে তাইওয়ানের গায়িকা মেং টিং ওয়েইয়ের গাওয়া 'শীতকালে তাইপেই এসে বৃষ্টি দেখো' নামের একটি গান শুনুন। আমি তাইওয়ান থেকে ফিরে এসে আপনাদের জানাবো, কেমন জায়গা তাইওয়ান।
প্রিয় বন্ধুরা, প্রিয় মানুষের হাতে হাত রেখে জীবনের সুদীর্ঘ পথে এগিয়ে যান এই আমার কামনা।
আজ 'সুর ও বানী' আসর এ পর্যন্ত। এ অনুষ্ঠান শোনার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন। কল্যাণে থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু/মান্না)