মোবাইল অ্যাপ 'উই চ্যাট'
  2016-01-19 10:49:57  cri



চীনের ভোক্তা-বাজারে সম্প্রতি কেনাকাটার ধুম পড়েছিল, যার রেশ এখনও রয়ে গেছে। এর কারণ, ক্রিসমাস ও নববর্ষ। প্রতিবছরই এসময়টায় চীনের বিভিন্ন শপিং মলে ক্রেতাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়; পণ্যের বিক্রি বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে।

আসলে টেনসেন্ট কোম্পানি ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বিনামূল্যের মোবাইল অ্যাপ 'উই চ্যাট' বাজারে ছাড়ে। এটি একটা অত্যন্ত কার্যকর স্মার্ট ফোন অ্যাপ। ব্যবহারে সহজ বলে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। বিগত ৫ বছরে এশিয়ায় উইচ্যাট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের ৯০ শতাংশের বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী উইচ্যাট ব্যবহার করেন। অন্যভাবে বললে, সে বছর চীনের উইচ্যাট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৪ কোটি ৯০ লাখ।

২০১৪ সালে উইচ্যাট 'গিফট্‌ মানি' সেবা দেওয়া শুরু করে। এটা আসলে একটি মোবাইল পেমেন্ট পদ্ধতি। ২০১৫ সালের বসন্ত উত্সব চলাকালে ব্যবহারকারীরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে ১০১ কোটি বার। অন্যভাবে বললে, প্রায় ৭০ শতাংশ চীনা বসন্ত উত্সবে উইচ্যাটের মাধ্যমে 'গিফ্ট মানি' বিনিময় করেছে। আর এর কয়েক মাস পর, ২০১৫ সালের ২০ অগাস্ট, চীনের ভালোবাসা দিবস এবং ছি সি উত্সবে উইচ্যাটের মাধ্যমে ১৪২ কোটি ৯০ লাখ বার গিফট্‌ মানি বিনিময় করা হয়, যা একটা নতুন রেকর্ড।

২০১৫ সালের ক্রিসমাস ও ২০১৬ সালের নবর্বষের সময় কতজন উইচ্যাটের গিফ্ট মানি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, সে হিসাব এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছায় নি। তবে, আশা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা আরও বেশি হবে।

উইচ্যাটের নিয়ম অনুসারে, একজন ব্যবহারকারী একবার উইচ্যাটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০০ ইউয়ান গিফ্ট মানি পাঠাতে পারে। চীনা মানুষের কাছে গিফ্ট মানি মানেই সৌভাগ্য ও আনন্দ। আগে উত্সবের সময় উপহার বিনিময় করতে হতো সশরীরে উপস্থিত থেকে। উইচ্যাট এখন কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। এখন স্মার্ট ফোনের স্মার্ট বাটন টিপে মুহূর্তের মধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া যায় গিফ্ট মানি।

ওয়াং চিয়াও একজন ব্যস্ত মানুষ। তিনি এবার ক্রিসমাসে কেনাকাটা না-করে বাড়িতে স্বজনদের কাছে গিফ্ট মানি পাঠিয়েছেন। আবার বন্ধুদের কাছ থেকেও পেয়েছেন গিফ্ট মানি। চ্যাট গ্রুপেও গিফ্ট মানি পাঠানো যায়। তখন গ্রুপের ভাগ্যবান যে-কেউ সেই টাকা পেতে পারে। এটা একটা খেলার মতো। ওয়াং চিয়াও জানালেন, তার বন্ধুদের অনেকেই এই খেলা পছন্দ করেন। তিনি বলেন, "ক্রিসমাসে আমি উইচ্যাটের মাধ্যমে গিফ্ট মানি পেয়েছি। আমার অফিসের পরিচালক এবং আমার বন্ধু আমাকে দু'তিনশ ইউয়ান পাঠিয়েছে। আমিও বাবা-মা, সহপাঠি ও বন্ধুদের গিফ্ট মানি পাঠিয়েছি। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব মজার মনে হয়। এর মাধ্যমে কত টাকা পাওয়া গেল, সেটা বড় বিষয় নয়। গোটা বিষয়টাই আনন্দের।"

গত ৫ বছরে উইচ্যাট চীনা মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। উইচ্যাট আমাদের পারস্পরিক যোগাযোগকে সহজতর ও সস্তা করেছে। মোবাইল ইন্টারনেটের উন্নয়ন ও ৪জি প্রযুক্তি চালু হবার ফলে উইচ্যাট এখন আরও কার্যকর হয়েছে।

লিউ পিং একটি মিডিয়া কোম্পানিতে কাজ করেন। টিভির পরিচালক হিসেবে প্রতিদিন অনেকের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে হয়। তিনি মনে করেন, এ কাজে উইচ্যাট তাকে অনেক সাহায্য করছে। তিনি বলেন, "একটি যোগাযোগ অ্যাপ হিসেবে উইচ্যাট আমার কাজ অনেক সহজ ও সস্তা করে দিয়েছে। বিশেষ করে ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর উইচ্যাটের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান এখন সহজতর ও দ্রুততর হয়েছে।"

চীনে শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণ পর্যন্ত—বলতে গেলে সবাই উইচ্যাট ব্যবহার করেন। কারণ, বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সেবা দিচ্ছে উইচ্যাট। যেমন, অনেক প্রবীণ মোবাইলফোনে টাইপ করতে পারেন না। তাই তারা উইচ্যাটে 'ভয়েজ মেইল' পাঠাতে পারে। এ সুবিধাটি অবশ্য সব বয়সের মানুষই ব্যবহার করছেন।

মিসেস চু বেইজিংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কয়েক বছর আগে তার মেয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে যান। সেখানেই তার সন্তান হয়। বেইজিংয়ে বসে উইচ্যাটের মাধ্যমে মিসেস চু তার কন্যা ও নাতি-নাতনির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। তিনি বলেন, "ভয়েজ ম্যাসেজ আমি বেশি ব্যবহার করি। প্রবীণদের জন্য এটা সহজ ও সুবিধাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অধ্যাপকদের সঙ্গে আমার একটি উইচ্যাট গ্রুপও আছে। সে গ্রুপে বিভিন্ন গবেষণা নিয়ে আমরা আলাপ করি, তথ্য শেয়ার করি। ছাত্র-ছাত্রীরাও উইচ্যাটের মাধ্যমে আমার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখে।"

উইচ্যাটের একটি জনপ্রিয় অংশ 'মোমেন্টস'। এর মাধ্যমে আপনি ছবি আপলোড করতে পারে, কোনো গান বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন, বা দিতে পারেন কোনো ভিডিওর লিঙ্ক। ফেসবুকের মতো, নিজের কোনো মতামতও এখানে আপনি পোস্ট করতে পারেন। সে পোস্টে আপনার বন্ধুরা কমেন্টস্‌ করতে পারে, লাইক দিতে পারে। চীনের অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই ঘুম থেকে উঠে প্রথমে মোমেন্টস্‌ চেক করেন এবং সেখানে বন্ধুদের বিভিন্ন ছবি, লিঙ্ক বা পোস্টে লাইক দেন এবং নিজে কমেন্টস্ করেন। তবে লিউ পিং-এর মতো কেউ কেউ 'মোমেন্টস্‌' পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, "উইচ্যাট ব্যবহারের শুরুতে আমিও 'মোমেন্টস্' ব্যবহার করতাম। কিন্তু কিছু দিন পর মনে হলো এখানো প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ বিভিন্ন ছবি পোস্ট করেন, মতামত লেখেন, লিঙ্ক শেয়ার করেন। এসব দেখে সেগুলোর ওপর মত দেওয়া অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই আমি 'মোমেন্টস্' ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি।"(শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040