শীতে ত্বকের যত্ন
  2016-01-17 19:39:20  cri


শীতকালে শুষ্ক শীতল হাওয়া ও বাতাসে বেড়ে যাওয়া ধুলাবালির কারণে ত্বক হয়ে যায় খসখসে ও মলিন। এর ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা। যেমন, ত্বক ফেটে যাওয়া, ত্বকে চুলকানি প্রভৃতি। তাই শীতকালে ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় দরকার বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা।

ত্বকের শুষ্কতা :

শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য ত্বক স্বাভাবিক আর্দ্রতা দ্রুত হারিয়ে ফেলে। তাই শীতকালে গোসলে সাবান কম ব্যবহার করুন। আর করলেও ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করুন। এতে ত্বকে খসখসে ভাব কমে আসবে।

রাতে ঘুমানোর আগে ও গোসলের পর নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ফলে চুলকানিও হবে না এবং ত্বকও ফাটবে না। ত্বকের আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে রোজ গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল অথবা লিকুইড প্যারাফিন মাখতে পারেন।

চুলের যত্ন :

শীতের সময় চুলে খুশকির উপদ্রব বেড়ে যায়। খুশকিমুক্ত থাকতে নিয়মিত সপ্তাহে দুই দিন কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

হাতের তালু ও পায়ের তলার যত্ন :

এ সময় ১০ ভাগ ইউরিয়া, ভেসলিন লাগালে হাতের তালু অনেকটা মসৃণ হয়ে আসে। শীতে অনেকের পায়ের তলা ফেটে যায়। ৫ ভাগ সেলিসাইলিক অ্যাসিড অয়েন্টমেন্ট অথবা ভেসলিন নিয়মিত মাখতে পারেন।

মুখের যত্ন :

ভালো ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে, তারা ক্রিমের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে নিতে পারেন।

শীত আসছে বলে ভাববেন না যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজনীতা কমে গেছে। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

ঠোঁটের যত্ন :

ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট বারবার ফেটে যায়। কখনো এতটাই ফেটে যায় যে চামড়া উঠে আসে ও রক্ত বের হয়। কখনোই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়।

কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ঠোঁটে হালকা করে তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর ভেসলিন বা গ্লিসারিন পাতলা করে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটের জন্য ভালো কোনো প্রসাধনী ব্যাগে রাখুন এবং দিনে তিন-চারবার লাগাতে পারেন।

এবার জেনে নিন শীতে কোন ধরনের ত্বকে কেমন যত্ন নিবেন।

যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত তারা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এক্ষেত্রে টমাটোর রস খুব কার্যকর। ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুস পাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

শুষ্ক ত্বকের প্রধান কাজ হল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখা। ভিটামিন-ই অয়েল ১/২ চামচ, ১/২ চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে প্রতিদিন লাগাতে পারেন। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ডিমের কুসুম, ১ চা-চামচ মধু, আধা চামচ অলিভ অয়েল ও গোলাপজল মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ মি. রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করতে পারেন।

মিশ্র ত্বকের যত্নে প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সিদ্ধ করা মিষ্টি কুমড়ো চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণ মতো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

এ ছাড়া ত্বকের যত্নে আরো কিছু কাজ করতে পারেন। শীতে ত্বকের যত্নের শুরুতে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। বাজার থেকে বাদাম তেল বা এভাকাডো সম্বৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার কিনুন। এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন অন্তত দুবার অথবা যতবার ত্বক শুষ্ক মনে হবে ততবার ব্যবহার করুন।

শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মাঝে মাঝে মুখে পানির ঝাপটা দিন। তাহলে সহজে ত্বক শুষ্ক হবে না।

গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হয়। গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোটা জোজোবা বা বাদাম তেল দিয়ে নিলে তা ত্বককে আর্দ্র এবং মসৃণ করতে সহায়তা করে।

গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ভেজা ‍অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

কখনোই ‍জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিৎ নয়। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট কখনোই ফেটে যাবে না।

শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে মাথার ত্বকেও এর প্রভাব পড়ে। এজন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে হবে। আমলকীগুঁড়া, হরীতকীগুঁড়া, বহেরাগুঁড়া, মেথিগুঁড়া, ব্রাহ্মিগুঁড়া, হেনাগুঁড়া, ডিমের সাদা অংশ, টক দই, পানি একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে আধা ঘণ্টা মেখে পরে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং খুশকি দূর হবে।

চুল এবং মাথার তালুর আর্দ্রতা ধরে রাখতে হ্যাট পরুন। তবে হ্যাটটি যাতে বেশি টাইট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।

হাত এবং পায়ের আর্দ্রতা ধরে রাখতে যতবার প্রয়োজন ততবার লোশন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। রূপচর্চার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত খাবারের প্রতিও।

বন্ধুরা, শীতকালে সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন। অআমাদের দেশে এখনো সস্তায় ভালো ভালো ফলমূল ও শাক-সবজি পাওয়া যায়। এ ছাড়া শরীরের ভেতরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রচুর পানি পান করুন। #

এখান আমরা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে 'বন্ধ নাকের সমস্যা দ্রুত দূর করার উপায়' নিয়ে আলোচনা করবো।

শীত পড়েছে। ঠান্ডা লাগার সময় এখন। সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো এ সময় সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে থাকে। সারাক্ষণ সবার সামনে নাক টানা আর নাক মুছতে থাকাটা ভীষণ বিরক্তিকর। নাক বন্ধ হয়ে অস্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে তো সমস্যা হয়ই, অনেকের শরীরের পাশাপাশি মেজাজটাও খারাপ হয়ে থাকে। নাকের এই সর্দি দূর করার জন্য আপনি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। কিছু পদ্ধতিতে নাক দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

চটজলদি কয়েক মিনিটের মধ্যেই নাক পরিষ্কার করে ফেলার দুটি পদ্ধতি আজ আপনাদের জানিয়ে দেবো বন্ধুরা।

জিভের ডগা দিয়ে চাপ দিন আপনার ওপরের পাটির দাঁতের গোড়ায়। এরপর জিভ সরিয়ে নিন এবং সঙ্গে সঙ্গেই আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন কপালে দুই ভুরুর মাঝে। ২০ সেকেন্ড ধরে এই কাজটি বারবার করতে থাকুন। জিভ দিয়ে চাপ দিন এবং এর পর পরই কপালে চাপ দিন। এতে নাক বন্ধ ভাবটা কেটে যাবে। কারণ এই কাজটি করলে একটি হাড়ে নাড়া পড়ে। ফলে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কেটে যায়।

মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে দিন। এরপর নাক চেপে ধরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখুন যতক্ষণ সম্ভব। যখন দেখবেন আর পারছেন না,তখন নাক ছেড়ে মাথা সোজা করে বড় একটা নিঃশ্বাস নিন। নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখলে আমাদের শরীর বুঝতে পারে বাতাসের অভাব হচ্ছে। ফলে সে নিজে থেকেই নাক পরিষ্কার করে ফেলে।

এছাড়াও বেশকিছু পদ্ধতিতে আপনি সর্দিতে আটকে থাকা নাক থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

স্যালাইন ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে পারেন। গবেষণায় দেখা যায়,বাচ্চাদের জন্য এটা খুব কার্যকরী

পর্যাপ্ত পানি পান করুন। নাক ঝেড়ে ফেলুন,সর্দি আটকে রাখবেন না। নাক এবং কপালে গরম সেঁক দিন,তবে ত্বক যেন পুড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

গরম চা এবং স্যুপ পান করুন। ঝাঁঝালো মেনথল মলম ব্যবহার করুন। গরম পানিতে গার্গল করুন। কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।

আপনার নাক যদি অ্যালার্জির কারণে বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে অবশ্যই চিকিতসকের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। (ওয়াং হাইমান উর্মি/মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040