পেইচিংয়ের বায়ুদূষণ এবং তা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা
  2016-01-15 09:23:20  cri



পেইচিং পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরো প্রকাশিত সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পেইচিংয়ের বাতাসে দূষণকারী পদার্থ 'পিএম ২.৫'-এর গড় পরিমাণ ছিল ৮০.৬ মাইক্রোগ্রাম/ ঘনমিটার, যা জাতীয় মানদন্ডের চেয়ে ১.৩ গুণ বেশি। 'পিএম ২.৫' পেইচিংয়ের বাতাসের মূল সমস্যা।

এদিকে, পেইচিং পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন এবং সেটি ২০১৬ সালের প্রথম দিকে প্রকাশ করা হবে। নয়া পরিকল্পনা অনুসারে, ২০৩০ সালে পেইচিংয়ের বাতাসে 'পিএম ২.৫'-এর গড় পরিমাণ জাতীয় মানদন্ডের সমান হবে।

২০১৬ সালের প্রথম সকালে আমরা পেইচিংয়ে নীল আকাশ ও সাদা মেঘ দেখেছি। পেইচিংয়ের সাম্প্রতিক বায়ুদূষণ সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই, তারা এই নীল আকাশ দেখলে বিভ্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু কিছুদিন পেইচিংয়ে অবস্থান করলেই তারা হয়তো অর্জন করবেন তিক্ত অভিজ্ঞতা। কারণ, যে-কোনো দিন পেইচিংয়ের আকাশ ধোঁয়াশায় ঢেকে যাবে। আসলে পেইচিংয়ের মানুষ এ আশঙ্কায় থাকেন সবসময়। তাদের অনেকের মনেই যে প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসছে সেটি হচ্ছে: নতুন বছরে পেইচিংয়ের বাতাস কেমন থাকবে?

পেইচিংয়ের বাসিন্দা মিস তাই বললেন, "শুনেছি, গত বছর পেইচিংয়ের বায়ুদূষণ পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু যতদূর মনে পড়ে, ৩রা সেপ্টেম্বরের কুচকাওয়াজের আগে-পড়ে কয়েকদিনই কেবল পেইচিংয়ের বায়ু দূষণমুক্ত ছিল। বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে তো গুরুতর বায়ুদূষণের কারণে ঘরের বাইরেই যেতে পারিনি। আশা করি, চলতি বছর বায়ুদূষণ পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং আমরা আরও বেশি নীল আকাশ দেখতে পাবো।"

পেইচিং পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর সূত্র অনুসারে, ২০১৫ সালের ১৮৬ দিন পেইচিংয়ের আবহাওয়ার মান ভালো ছিল। এ বছর ২০১৪ সালের চেয়ে অতিরিক্ত ১৪ দিন দূষণমুক্ত ছিল। আর ২০১৫ সালে গুরুতর দূষণযুক্ত দিনের সংখ্যা ছিল ৪৬, যা ২০১৪ সালের চেয়ে একদিন কম। তা ছাড়া, বায়ুতে 'পিএম ২.৫'-এর গড় পরিমাণও ২০১৫ সালে ২০১৪ সালের তুলনায় ৬.২ শতাংশ কম ছিল।

পেইচিং পরিবেশ সংরক্ষণ তত্ত্বাবধান কেন্দ্রের পরিচালক ছাং তা ওয়ে বলেন, 'পিএম ২.৫'-এর একাধিক উত্স রয়েছে। ৩০ শতাংশ 'পিএম ২.৫' পেইচিংয়ের বাইরে থেকে আসে।

তিনি বলেন, "পেইচিংয়ের বাতাসে যে পরিমাণ 'পিএম ২.৫' থাকে তার ৩০ শতাংশই আসে বাইরে থেকে। পেইচিংয়ের বিভিন্ন কল-কারখানা ও গাড়ি বাকি ৭০ শতাংশ 'পিএম ২.৫' নিঃসরণ করে। এই ৭০ শতাংশের মধ্যে দশ ভাগের তিন ভাগ মোটরগাড়ি থেকে নিঃসৃত হয় এবং দুই ভাগ কয়লা জ্বালানোর ফলে সৃষ্টি হয়।"

গেল বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পেইচিংয়ের বায়ুদূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছায়। এসময় চীনে প্রথমবারের মতো রেড অ্যালার্টও জারি করা হয়। ছাং তা ওয়ে জানান, শীতকালে কয়লার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, "শীতকালে পেইচিংয়ের ঘরবাড়িগুলো গরম রাখার জন্য হিটিং সিস্টেম চালু করা হয়। এসময় কয়লার ব্যবহার বাড়ে। এতে বায়ুতে 'পিএম ২.৫'-এর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ খুব গুরুত্বপূর্ণ।"

২০১৩ সালে চীনের সরকার বায়ুদূষণ মোকাবিলায় পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রকাশ করে। পেইচিং পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর প্রধান প্রকৌশলী ইউয়ু চিয়ান হুয়া জানান, গত বছর পেইচিংয়ে কঠোরভাবে বায়ুদূষণ মোকাবিলায় গৃহীত পাঁচশালা পরিকল্পনার ৮৪টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য পূরণ করা হয়। তিনি বলেন, "২০১৫ সালের শেষ নাগাদ পেইচিংয়ের তুং ছেং জেলা ও সি ছেং জেলাকে কয়লামুক্ত করার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হয়। এসময় পেইচিংয়ের কেন্দ্রীয় ৬টি জেলায় কয়লাভিত্তিক বয়লারগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়। এ বছর পেইচিংয়ের ৩২৬টি শিল্প-প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া, বায়ুদূষণ মোকাবিলার অংশ হিসেবে এ বছরই প্রথম পেইচিংয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়।"

২০১৬ হচ্ছে পেইচিংয়ের বায়ুদূষণ মোকাবিলায় গৃহীত পাঁচশালা পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। পেইচিং পরিবেশ সংরক্ষণ ব্যুরোর উপ-পরিচালক ফাং লি জানান, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ কমানো হচ্ছে আসল কাজ এবং এর জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, "গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমণ কমানো দীর্ঘ ও জটিল একটি প্রক্রিয়া। পেইচিংয়ে শীতকালে কয়লার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বছরের অন্য সময় মোটরগাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দেব আমরা। মোটরগাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণে তিন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে: পুরাতন মোটরগাড়ি রাস্তা থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া; নতুন গাড়ি থেকে ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গমণের মাত্রা কমিয়ে আনা; মোটরগাড়ির ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনা।"

ধোঁয়াশা নিয়ন্ত্রণে পেইচিংয়ের লক্ষ্য হচ্ছে: ২০১৭ সালের মধ্যে গোটা শহরের বায়ুতে 'পি এম ২.৫'-এর গড় পরিমাণ, ২০১২ সালের চেয়ে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা। তা ছাড়া, ২০২০ সালের মধ্যে পেইচিং, থিয়ান চিন ও হে পেই প্রদেশের বায়ুতে 'পি এম ২.৫'-এর গড় পরিমাণ ২০১৩ সালের চেয়ে ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যও ঠিক করা হয়েছে।

ধোঁয়াশা রেড অ্যালার্ট: ২০১৫ সালেই চীনে প্রথমবারের মতো ধোঁয়াশা রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। ৭ ডিসেম্বর পেইচিংয়ে ঘোষিত সেই রেড অ্যালার্টের মেয়াদ ছিল ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭ টা থেকে ১০ ডিসেম্বর (বেলা) ১২টা পর্যন্ত। ২০১৩ সালে বায়ুদূষণ সতর্কতা ব্যবস্থা চালুর পর এটিই ছিল প্রথম সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্কতা ঘোষণা। রেড অ্যালার্টের পাশাপাশি পেইচিংয়ে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কিছু ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে:

১. জোড় সংখ্যার প্লেটধারী গাড়ি যেদিন রাস্তায় চলবে, সেদিন বিজোড় সংখ্যার প্লেটধারী গাড়ি চলতে পারবে না।

২. মালবাহী ভারী যানবাহন সাময়িকভাবে রাস্তায় চলাচল করবে না।

৩. বিভিন্ন নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

৪. রাস্তায় পানি ছিটানোর পরিমাণ বাড়ানো হবে।

৫. সকল ধরনের আতশবাজি পোড়ানো এবং ঘরের বাইরে বারবিকিউ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

আলিম: প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমরা শিশিরের মুখ থেকে পেইচিংয়ের বায়ুদূষণ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন শুনলাম।

'পিএম২.৫' কী?

প্রিয় শ্রোতা, আপনাদের অনেকেই হয়তো 'পিএম ২.৫' সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। 'পিএম' হচ্ছে 'পার্টিকুলেট ম্যাটার' বা শুধু 'পার্টিকুলেটস্‌'। এসব ম্যাটার বা বস্তু অনুবিক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখা যায় না। 'পিএম ২.৫' হচ্ছে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া সেসব ক্ষুদ্র বস্তু যেগুলোর ব্যাস ২.৫ মাইক্রো মিটার বা তার চেয়ে কম। এ ক্ষুদ্র বস্তুগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। যখন বাতাসে এ বস্তুর পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন ভালো মাস্ক না-পরে ঘরের বাইরে যেতে না করেন বিশেষজ্ঞরা। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040