চীনের হাই নান প্রদেশের সান ইয়া ইয়া লং উপসাগর রোজ ভ্যালি
  2016-01-15 09:23:37  cri


"খুবই সুন্দর, এখানকার দৃশ্য অনেক অনেক দারুণ"

"খুবই বড় একটি রোজ পার্ক এবং এখানকার বাতাস সুগন্ধযুক্ত ও পরিষ্কার। অনেক সুন্দর। আগে আমি কখনও এতো গোলাপ একসাথে দেখিনি। এখান থেকে যেতে মন চাইছে না।"

পর্যটকদের মন-জয়-করে-নেওয়া রোজ পার্ক চীনের হাই নান প্রদেশের সান ইয়া শহরে অবস্থিত। পার্কটির পুরো নাম ইয়া লং উপসাগর আন্তর্জাতিক রোজ ভ্যালি। নীল আকাশ ও সাদা সৈকত ইয়া লং উপসাগরের প্রতীক এবং হাই নান প্রদেশে সবচেয়ে হট ও জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান। তবে তার অদূরে, সান ইয়া শহরের পো হো গ্রামে বসবাস করে লি জাতির মানুষ এবং ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাদের উত্পাদনপদ্ধতি পশ্চাত্পদ ছিল। সাগরের পাশে ভূমিতে লবণাক্ততার কারণে গ্রামে ধান চাষে তেমন ফসল পাওয়া যেত না। যুবক-যুবতীরা তাই অর্থ উপার্জনের জন্য গ্রাম ছেড়ে বাইরে যাওয়া শুরু করে। অন্যদিকে, প্রবীণরা ম্যান্ডারিন জানেন না বিধায় এবং তাদের শারীরিক শ্রম দেওয়ার ক্ষমতা কম থাকায় তাদের কোনো আয় বলতে ছিল না। ধান চাষ করে তারা বছরে মাত্র কয়েক হাজার ইউয়ান আয় করতে পারে। ইয়া লং উপসাগরে আপনি যেমন দেখেন লাক্সারি হোটেল তেমন দেখতে পাবেন দরিদ্র গ্রাম।

তবে ২০০৯ সালের পর রোজ ভ্যালির কারণে পো হো গ্রামের চেহারা এবং মানুষের জীবন পুরোপুরি পাল্টে গেছে।

 

আপনারা হয়তো জানেন, গোলাপ শীতপ্রধান অঞ্চলে বেশি জন্মায়। অথচ হাই নান প্রদেশের জলবায়ু গ্রীষ্মমন্ডলীয়। ২০০৮ সালের আগে হাই নান প্রদেশে গোলাপ চাষ খুবই কম হতো। ২০০৮ সালে বিশেষজ্ঞরা সান ইয়া শহরে প্রথম গোলাপ চাষ করতে সক্ষম হন। তার মানে হাই নানে এখন গোলাপ চাষ সম্ভব। পো হো গ্রামের অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য সরকার সাংহাই থেকে একটি গোলাপ চাষ ও সংশ্লিষ্ট পণ্য উত্পাদকারী একটি কোম্পানিকে সান ইয়াতে নিয়ে আসে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইয়া লং উপসাগর আন্তর্জাতিক রোজ ভ্যালি। তখন থেকে হাজার একর লবণাক্ত ভূমি গোলাপ চাষের কারণে আবার জীবনীশক্তি ফিরে পায় এবং পো হো গ্রামের অধিবাসীদের জীবনের ওপর সুখের রঙ লাগে।

গ্রামবাসীরা নিজেদের ২৭৫৫ একর ভূমি কোম্পানির কাছে ভাড়া দেয় এবং প্রতি একর ভূমির জন্য বছরে তারা ৩৩০০ ইউয়ান করে ভাড়া পেতে থাকে। এর পাশাপাশি গ্রামবাসীরা কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে চাকরিও করে। তারা গোলাপ চাষ, ব্যবস্থাপনা ও বাছাইসহ নানা কাজ করতে পারে। গ্রামে ৫০ বছর বয়স্ক এবং ম্যান্ডরিন না-জানা প্রবীণও এ কোম্পানিতে কাজ করেন।

সু পিং লান পো হো গ্রামের একজন বাসিন্দা। ২০১০ সাল থেকে তিনি রোজ ভ্যালিতে কাজ করছেন। প্রথম দিকে তিনি গোলাপ চাষের সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি গোলাপ বিক্রির কাজ করবেন। কাজের ধরন পরিবর্তনের সাথে সাথে তার আয়ও ক্রমাগত বাড়ছে। সু পিং লানের মুখে সুখের হাসি। তিনি আমাদের বললেন,

"দেখুন, আমি এখানে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি। আগে আমি ধান চাষ করতাম। এতে কষ্ট বেশি অথচ আয় কম ছিল। এখন গোলাপ চাষে আমার কষ্ট কম অথচ আয় বেশি। এখানে কাজ করে আমি আনন্দিত।"

সু পিং লান ঠিক-ই বলেছেন। গোলাপ চাষ তাদের আয় বাড়িয়েছে। বর্তমানে গ্রামের প্রতিটি পরিবার বছরে গড়ে আয় করছে ৭০ হাজার ইউয়ানের বেশি। সান ইয়া অধিকাংশ লি জাতির গ্রামের চেয়ে পো হো গ্রামবাসীর আয় বেশি।

২০১২ সালে, গোলাপ চাষ ছাড়া, রোজ ভ্যালিতে স্থাপিত হয় পরিদর্শন কেন্দ্র। গোলাপ চাষ যুক্ত হয় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে। গ্রামবাসীরা নিজেদের ভূমির অনুপাতে একর প্রতি ৮০০ ইউয়ান করে বাত্সরিক পর্যটন ভাতা পান। এতে তাদের আয় আরও বাড়ে। এর পাশাপাশি কোম্পানির সাহায্যে গ্রামবাসীরা নিজেদের দোকান, গেস্ট হাউসসহ বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত হন। দরিদ্র এই গ্রাম এখন একটি সুন্দর গোলাপ স্বর্গে পরিণত হয়েছে। গ্রামবাসীর আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামের পরিবেশও ভাল হয়েছে। তারা নিজেদের বাড়ির আশেপাশেও গোলাপ চাষ করে। তারা ফুলের নানান ব্যবহারও শিখেছে।

সান ইয়া লানে আন্তর্জাতিক রোজ ভ্যালি কোম্পানি কার্যালয়ের পরিচালক সু ওয়েন মাও বলেন,

"আমরা পো হো গ্রামে আসার পর ৬ বছর কেটেছে। ৬ বছরে গ্রাম ও গ্রামবাসীর পরিবর্তন দেখেছি। পরিবহনব্যবস্থা, পরিবেশ এবং গ্রামবাসীর আধ্যাত্মিক জীবনসহ সবকিছুই আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।"

সুন্দর পো হো গ্রাম শুধু পর্যটক আকর্ষণ করে, তা নয়। গ্রামের যুবক-যুবতীও নিজেদের জন্মস্থানে ফিরছে। গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ধারায় তারা নিজেদের উন্নয়নের সুযোগও খুঁজে পেয়েছে। লিও হং সিয়া এখন রোজ ভ্যালির একজন গাইড। তার বাবা-মাও এখন রোজ ভ্যালিতে কাজ করছেন। লিও হং সিয়া অন্য শহরের কাজ ছেড়ে বাবা-মার কাছে ফিরে এসেছেন। পো হো গ্রামের পরিবর্তন তাকে আপ্লুত করে। তিনি বলেন,

"আমার জীবন অনেক বদলে গেছে। আমার পরিবার দরিদ্র ছিল। এখন আমরা অনেক সচ্ছল।"

সান ইয়া লানে আন্তর্জাতিক রোজ ভ্যালি কোম্পানি কার্যালয়ের পরিচালক সু ওয়েন মাও বলেন, ভবিষ্যতে রোজ ভ্যালির ভিত্তিতে তারা একটি গোলাপ শৈলী নগর নির্মাণ করবেন। চীনের ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, গোলাপ শৈলী নগর প্রকল্প পো হো গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করবে। সু ওয়েন মাও বলেন,

"ভবিষ্যতে আমরা তৈরি করব একটি গোলাপ শৈলী নগর এবং গোলাপ শিল্প ছড়িয়ে পড়বে গোটা গ্রামে।"

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রোজ ভ্যালি পরির্দশন করেছিলেন। তখন তিনি বলেন, সচ্ছল সমাজ গঠন গ্রামবাসীর ওপর নির্ভর করে। পো হো গ্রামের উন্নয়ন প্রমাণ করেছে যে, গ্রামীণ পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন গ্রামবাসীর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন তাদের জীবনমান উন্নত করতে পারে। বলা বাহুল্য, তার পরিদর্শনের পর রোজ ভ্যালির কার্যক্রমে আরও গতি আসে।(শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040