নারীকণ্ঠ
  2016-01-03 19:19:53  cri


প্রথম পর্ব : প্রধান প্রতিবেদন : মুসলিম উত্তরাধীকার আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পায়

বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) আজ থেকে ১৪শত বছর আগেই বলে গিয়েছেন, "উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো ও অপরকে শেখাও, সকল জ্ঞানের অর্ধেক হল এই জ্ঞান"। মুসলিম হাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অনেকেরই উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।

কিন্তু এটা প্রত্যেক মুসলিমের জানা প্রয়োজন। মুসলিম আইনে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ওপর ভিত্তি করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়ে থাকে। এভাবে বণ্টন করাকে ফারায়েজ বলা হয়।

এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসাতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে জানা উচিত। এতে কোন মুসলমান পুরুষ বা নারী উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তাঁর ভাগে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন সেই সম্পর্কে জানতে পারবে।

এখানে শুধু আমরা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যার উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অংশ নিয়ে আলোচনা করব।

তবে কোন মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। চলুন আগে জেনে নেই কী সেই সব আনুষ্ঠানিকতা।

১. মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে।

২. তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে।

৩. তাঁর স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে।

৪. মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে।

উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে।

এবার জেনে নিই কি অনুপাতে বা কীভাবে এই সম্পত্তি বণ্টন হবে।

১. স্বামীর অংশ : স্বামী ২ ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্বামী কখনো তাঁর মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে।

২. স্ত্রীর অংশ : স্ত্রীও ২ ভাবে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে থাকে। বিধবা স্ত্রী কোন ভাবে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা তাঁদের পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে। যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে তবে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও সবাই মিলে ১/৪ অংশ সমান ভাগেই পাবে।

৩. বাবার অংশ : বাবা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ৩ ভাবে হয়ে থাকে। যদি মৃত সন্তানের পুত্র, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যতই নিচের হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত সন্তানের পিতা পাবেন সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ।

যদি মৃত সন্তানের শুধু মাত্র কন্যা সন্তান বা তাঁর পুত্রের কন্যা সন্তান থাকলে তবে পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন।

এই ক্ষেত্রে কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট যে সম্পত্তি থাকবে তাও পিতা পাবেন। আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র-কন্যা বা পুত্রের সন্তান কিছুই না থাকে তাবে বাকী অংশীদারদের তাঁদের অংশ অনুযায়ী দেয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকবে তার সবটুকুই বাবা পাবেন।

তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান ও বাবা কেউ না থাকলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর জীবিত ভাই বা ভাইরা পাবে। আবার ভাই না থাকলে তাঁর ভাইয়ের সন্তানরা পাবে।

৪. মায়ের অংশ : মা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি পেয়ে ৩ ভাবে পেয়ে থাকে। - মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নেরই হোক থাকলে অথবা যদি মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইবোন থাকলে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।

মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।

৫. পুত্র সন্তানের অংশ : মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি পায়। যেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ছেলে বা ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাতাপিতা ও স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরাই পাবে।

৬. কন্যা সন্তানের অংশ : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতাপিতার সম্পত্তি পেতে পারে। একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ বা (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমানভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ বা (২/৩) অংশ পাবে। যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। যাহোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না।

পিতা মারা গেলে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যে সম্পত্তি পেতেন তা তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর উত্তরাধিকারীরা পাবে।

১৯৬১ সালের আগে এই নিয়ম ছিল না। পরে একটি আইন পাস করে এই নিয়ম চালু করা হয়। কারণ এতিমরা যাতে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেই সম্পর্কেও ইসলামে নির্দেশ দেয়া আছে। আবার মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ধরা হয় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকেও বঞ্চিত করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান আর সম্পত্তি পাবে না। সত ছেলে-মেয়ে, সত বাবা বা সত মায়ের সম্পত্তি পায় না।

একই ভাবে সত বাবা বা সত মা, সত ছেলে-মেয়ের সম্পত্তি পায় না। কেউ কাউকে হত্যা করলে হত্যাকারী তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। জীবিত থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারো সম্পত্তি পাবে না। জারজ সন্তান তার মা ও মায়ের আত্নীয়দের থেকে সম্পত্তি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পাবে (মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে)।

মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তা তিনি জীবিতকালে কাউকে না দেয়ার ব্যবস্থা করে গেলে সরকার তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে। উত্তরাধিকার সম্পর্কে উপরোক্ত সাধারণ কয়েকটি বিষয় মনে রাখলে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের জটিলতা দূর হবে।

দ্বিতীয় পর্ব : আলোকিত নারী : রোববার রাবেয়া খাতুনের ৮০তম জন্মোত্সব

রোববার ২৭ ডিসেম্বর ছিলো কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের ৮০তম জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের এই দিনে তিনি ঢাকার বিক্রমপুরে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে,তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত ষোলঘর গ্রামে৷ তার বাবা মৌলভী মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মা হামিদা খাতুন। আরমানিটোলা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা (বর্তমানে মাধ্যমিক) পাস করেন ১৯৪৮ সালে। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিদ্যালয়ের গন্ডির পর তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।

দেশের অন্যতম এই কথাসাহিত্যিকের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যায় হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজন করা হচ্ছে একটি ভিন্ন ধারার 'জন্মোৎসব'। এটি আয়োজন করছে চ্যানেল আই। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, যে উৎসবে উপস্থিত থাকবেন শিল্প-সংস্কৃতির শীর্ষ ব্যাক্তিরা।

কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন এক সময় শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তার নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো 'অঙ্গনা' নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে তার লেখা অসংখ্য নাটক। তার গল্প উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি। রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের প্রধানতম লেখকও।

ছোটগল্প দিয়ে শুরু হলেও লেখকপরিচয়ে প্রথমত তিনি ঔপন্যাসিক। প্রথম উপন্যাস মধুমতী (১৯৬৩) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি পান। ক্ষয়িষ্ণু তাঁতি সম্প্রদায়ের জীবনসংকট ও নাগরিক উঠতি মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার মধ্যে ব্যক্তিকে আবিস্কার করেছিলেন রাবেয়া খাতুন এই উপন্যাসে।

রাবেয়া খাতুন সাহিত্যচর্চার জন্য পেয়েছেন একুশে পদক(১৯৯৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার(১৯৭৩), নাসিরুদ্দিন স্বর্ণ পদক(১৯৯৫), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার(১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার(১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার(১৯৯৪), শের-ই-বাংলা স্বর্ণ পদক(১৯৯৬), ঋষিজ সাহিত্য পদক(১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার(১৯৯৯) ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার(১৯৯৯)। ছোট গল্পের জন্য পেয়েছেন নাট্যসভা পুরস্কার(১৯৯৮)। সায়েন্স ফিকশন ও কিশোর উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন শাপলা দোয়েল পুরস্কার(১৯৯৬), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার(১৯৯৮), ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার(২০০৩)।

এদিকে ছোটগল্প ও উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে প্রেসিডেন্ট(১৯৬৬), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি(২০০৩), মেঘের পরে মেঘ(২০০৪), ধ্রুবতারা এবং মধুমতি(২০১০)।

টিভি নাটকের জন্য টেনাশিনাস পুরস্কার(১৯৯৭), বাচসাস(বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টাস এসোসিয়েশন মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড(২০০০), টেলিভিশন রিপোর্টাস অ্যাওয়ার্ড(২০০০)-সহ এ যাবত অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখির কাজে নিবেদিত।

তৃতীয় পর্ব : বিশ্ব নারীর টুকরো খবর :

শ্রোতাবন্ধুরা, টুকরো খবর বিভাগে প্রথমেই আলোচনা করবো বোকো হারামের একটি খবর নিয়ে...।

১. বোকো হারামের জন্য স্কুলে যেতে পারছে না ১০ লাখ শিশু ২২ ডিসেম্বর বোকো হারাম জঙ্গিদের কারণে ১০ লাখেরও বেশী শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। এর ফলে শিক্ষার অভাবে নাইজেরিয়ায় ও এর চারপাশে জঙ্গিবাদ আরো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে এমন আশংকা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা মঙ্গলবার একথা জানায়।

ইউনিসেফ জানায়, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, শাদ ও নাইজারে দুই হাজারের বেশী স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে বোকো হারাম জিহাদিরা একটি স্বাধীন ইসলামিক স্টেট কায়েমের লক্ষে আরো কয়েকশ' শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালায় বা আগুন ধরিয়ে দেয়।

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ বুহারি তার সামরিক কমান্ডারদের বোকো হারামের সহিংসতা দমনে এ মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে বিজয় অর্জিত হলেও শিশুরা স্কুলে যেতে না পারায় শিক্ষা ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে এতে সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি হতে পারে যা তার সরকারকে মোকাবেলা করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।

ইউনিসেফের পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে তাদেরকে স্কুলে যেতে দেয়া না হলে তাদের নির্যাতন, অপহরণ ও সশস্ত্র গ্রুপে কাজে লাগানোর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

বোকো হারামের যোদ্ধারা ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় চিবোক শহরের একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ২৭৬ অল্পবয়সী মেয়েকে আটক করে। এরা বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ অপহরণের ঘটনায় সারা বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে নাইজেরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই বোকো হারাম বিভিন্ন স্কুলকে লক্ষ্যকরে হামলা চালায়। বোকো হারামের অর্থ পশ্চিমা শিক্ষা নিষিদ্ধ।

মডার্ন সিকিউরিটি কনসালটিং গ্রুপের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ ইয়ান সেন্ট পি য়েরে বলেন, বোকো হারামকে নির্মূল করা হলেও এ অঞ্চলে শিক্ষাখাতে যে ইতোমধ্যে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা আর পূরণ করা সম্ভব না। এএফপি।

২. মিস ইরাককে আইএসের হুমকি ২৪ ডিসেম্বর

সুন্দর জিনিসকে ধ্বংস করে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী বুঝিয়ে দিয়েছে সুন্দরের কদর তারা বোঝে না। এবার ইরাকের 'সবচেয়ে সুন্দর' মহিলাকে অপহরণের হুমকি দিয়ে বুঝিয়ে দিল সৌন্দর্যের কদরও তারা বোঝে না। ১৯৭২ সালের পর এবছরই প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইরাকের সুন্দরী প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতায় দেশের সুন্দরীতম ম হিলার মুকুট পরেছিলেন শায়মা আবদেল রহমান। ২০ বছর বয়সী সেই শায়মাকেই অপহরণের হুমকি দিল আইএস।

সুন্দরীর মুকুট মাথায় পরার পর শায়মার কাছে প্রায় প্রতিদিন নানা হুমকি ফোন আসছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ানক হুমকি ফোনটা এল আইসিস জঙ্গি হিসেবে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকে। হুমকির সুরে ফোনে শায়মাকে বলা হল, আইসিস-এর দলে নাম না লেখালে, যে কোনও দিন তাকে বাড়ি থেকে তুলে পণবন্দি করে রাখা হবে। শায়মা অবশ্য বলছেন, এসব হুমকিতে তিনি ভয় পান না। সঙ্গে বলেছেন, "আমি কোনও অন্যায় কাজ করিনি তাই ভয় পাওয়ার প্রশ্নই নেই। সময় এসেছে এটা প্রমাণ করার ইরাকি সমাজে মহিলাদের এক নিজস্ব অস্তিত্ব আছে।"

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের এক হোটেলে আয়োজিত হয়েছিল সুন্দরী প্রতিযোগিতা। গত চার দশকের মধ্যে প্রথমবার অনুষ্ঠিত মিস ইরাক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন দেশের অনেক মহিলা। কিন্তু এই সুন্দরী প্রতিযোগিতাকে ইসলাম বিরোধী বলে দেশের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়।

৩. যেখানে পুরুষ নিষিদ্ধ ২২ ডিসেম্বর,

বিশ্বের অনেক জায়গা কিংবা প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে নারীরা প্রবেশ করতে পারেন না। কিন্তু পুরুষরা নিষিদ্ধ এমন কাহিনী হয়তো আমাদের কাছে অজানা এবং অবিশ্বাস্যও।

তবে এটাই সত্যি যে, পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার উমোজা তেমনই একটি গ্রাম যেখানে শুধুই নারীদের বসবাস। অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে নারীরা একে অপরের দেখভাল করে থাকেন।

উমোজা কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় সামবুরু অঞ্চলে অবস্থিত। এ সম্প্রদায়ের প্রধান রেবেক্কা ললোসলি। তবে উমোজায় পুরুষদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি নেই। ১৯৯০ সালে ১৫ জন নারী মিলে গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত করেন। এদের সবাই ব্রিটিশ সৈন্য দ্বারা ধর্ষণের পর বেঁচে যান।

এখন সেখানকার জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গ্রামটিতে প্রায় ২০০ শিশুর বসবাস। -দ্য গার্ডিয়ান

৪. মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্যে মিস পুয়ের্তো রিকো বরখাস্ত ২১ ডিসেম্বর,

মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্য করায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত হলেন মিস পুয়ের্তো রিকো। টুইটারে পেজে ডেসটিনি ভেলেজ কয়েকটি মুসলিম বিরোধী মন্তব্য করেছেন বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্যের প্রতিবাদে চলচ্চিত্র নির্মাতা মাইকেল মুর একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেন। সেখানে 'উই আর অল মুসলিম' লেখা প্লাকার্ড হাতে নিয়ে ছবি তুলে তা পোস্ট করা হয়। এর বিরুদ্ধে টুইট করেছেন ডেসটিনি ভেলেজ।

একটি টুইটি ডেসটিনি বলেছেন,'যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কার্মকান্ড করতে ও গ্যাস স্টেশন স্থাপন করতে মুসলিমরা আমাদের সংবিধান ব্যবহার করছে।' অন্য একটি টুইটে লিখেছেন, 'যিশু, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের সসঙ্গেস তুলনা হতে পারে না। যিশু ও খ্রিস্টানদের পবিত্র বইয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কোনো বিষয় নেই। কিন্তু মুসলি তেল ব্যবহার করে এই দেশসহ অন্য দেশগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে।

ডেসটিনির এই টুইটারের বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে মিস পুয়ের্তো রিকো সংস্থা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে,ডেসটিনি ভেলেজ সাম্প্রতিক কাজ ও আচরণ আমাদের প্রোগাম,বোর্ডের সদস্য, স্পন্সর ও অংশীদার বা জাতীয় সংস্থার ন্যায়পরায়ণতা ও সততার সঙ্গে যায় না।

বিবৃতিতে বলা হয়,ভেলেজের কাজ সংস্থার সাথে বিরোপূর্ণ। তার কাজের জন্য তাকে মিস পুয়ের্তো সংস্থা থেকে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।

তবে তার মন্তব্য অর্গানাইজেশনের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ভেলেজকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, মিস পুয়ের্তো রিকো অর্গানাইজেশন বিতর্কিত কোনো আচরণ সহ্য করবে না। এতে ডেসটিনি ভেলেজ এর ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিও অন্তভুক্ত করা হয়।

মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছিলেন ডেসটিনি ভেলেজ। সংস্থাটিও তার মন্তব্যে তাদের কোনো দায় নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে।

পুয়ের্তো রিকো থেকে নির্বাচিত ২০১৬ সালে ডেসটিনি ভেলেজ মিস আমেরিকা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

চতুর্থ পর্ব : সাম্প্রতিক : মৃত সন্তানরা ফিরে এলো এক বছর পর!

সে দিন ছিল ছোট্ট কাইলির পাঁচ বছরের জন্মদিন। মা লোরি, দাদু সিন্ডি, দুই ছোট বোন কেটি ও এমার সঙ্গে গাড়িতে কার্নিভালে যাচ্ছিল ছোট্ট কাইলি। চিড়িয়াখানা, ফেয়ারগ্রাউন্ডে রাইড, বার্থডে বয় কাইলির দিনটা হতে চলেছিল স্বপ্নের মতো। হঠাৎ জীবন্ত বিভীষিকার মতো ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় গাড়ি। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় স্বপ্ন।

বাবা ক্রিস যখন ফোন পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছান, ততক্ষণে সব শেষ। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে কেটি, এমা। ধীরে ধীরে ওঠানামা করছিল কাইলির বুক। বাঁচার কোনো আশা নেই। করুণ হাতে নিজেরাই লাইফ সেভিং মেশিন বন্ধ করেছিলেন মা-বাবা। ছোট্ট তিনটে কফিনের সামনে বসে ক্রিস-লোরি একে অপরকে প্রমিস করে যাই ঘটুক, তারা আত্মহত্যা করবেন না।

এর পর থেকে দিনগুলো বন্ধ ঘরেই কাটছিল। আশেপাশের বাচ্চাদের কলকল, হাসি, খেলার আওয়াজ শুনলেই বুকের ভিতর যেন শুরু হয়ে যেত রক্তপাত। ইচ্ছা, স্বপ্ন সম্বল করে বছর খানেক পর আবার তারা পা বাড়ান ফার্টিলিটি ক্লিনিকের দিকে।

দৈব যেন অপেক্ষা করেই ছিল। একটা নয়। লোরি-ক্রিসের কোল আলো করে এল তিনটি সন্তান। আবারও দুই মেয়ে, এক ছেলে। অ্যাশলে, এলি ও জেককে নিয়ে আবার ভরা সংসার লোরি-ক্রিসের। তারা জানেন কোনো দিনই ফিরবে না কাইলি, কেটি, এমা। তাই ক্রিসমাস উদযাপনে তারা পিকনিকে গেলেন গোরস্থানে। একমাত্র ওখানেই যে এক সঙ্গে হতে পারে গোটা পরিবার। সূত্র : আনন্দবাজার

জুয়ার দায় মেটাতে শিশু বিক্রির বিজ্ঞাপন! ২৬ ডিসেম্বর, ইসরায়েলে জুয়ার দায় মেটাতে গিয়ে নিজের তিন মাসের শিশু সন্তানকে বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে দম্পতি। অনলাইনে নিজের সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছিল তারা।

অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে একজন পুলিশ বেনামে কয়েকবার ওই শিশুর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং দেখা করে। তদন্তে দেখা যায় শিশুটির বাবা পাড় জুয়াড়ি এবং সব মিলিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তার পাঁচ লক্ষ ডলার দেনা রয়েছে। শিশুটির বাবা ১ লাখ শেকেল বা ২৬ হাজার ডলার মূল্যে বিক্রি করতে সম্মত হয়। গত বুধবারে শিশুটি সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে আসে আর তখনই পুলিশ তাকে আটক করে। এর কিছুক্ষণ পরে তার স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়। এই দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

তিন মাসের শিশুটির বিজ্ঞাপনে সুস্থ ও সবল উল্লেখ করা হলেও মেডিকেল চেক আপের পরে দেখা গেছে যথেষ্ট অযত্নের শিকার হচ্ছিল সে। বর্তমানে শিশুটি দেশটির রাজধানীর সমাজকল্যাণ কর্তৃপক্ষের জিম্মায় রয়েছে। আরটি।

(মান্না)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040