v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-04-04 23:28:25    
চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৩০ বছরে জাতীয় গণ কংগ্রেস ব্যবস্থার বিশেষ ভূমিকা

cri

    ২০০৮ সালের বসন্তকালে পেইচিংয়ে চীনের বার্ষিক দুটি অধিবেশন চলছিলো। এ বছর ঠিক চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চালু হওয়ার ত্রিশতম পূর্তি বছর। ফলে এ বছরের দুটি অধিবেশনের ওপর চীনের জনগণের রয়েছে আরো বেশি আশা ও অনুরোধ। এর মধ্যে স্মৃতি, তুলনা, বিবেচনা ও প্রত্যাশার দিকটিই বেশি। চীনের বিভিন্ন অঞ্চল, শিল্প ও জাতি থেকে নির্বাচিত ৫০০০ এরও বেশি জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি আর গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য হচ্ছেন চীনের ১৩০ কোটি জনগণের প্রতিনিধি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হচ্ছেন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের অংশগ্রহণকারী কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী। কেউ কেউ হচ্ছেন সংস্কারের উত্স স্থানের অগ্রদূত। তারা অনুভব করেছেন যে, গত ৩০ বছরের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের কারণে চীনের আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ দ্রুততর হয়েছে। এই ৩০ বছর জাতীয় কংগ্রেস সবসময় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের জন্য আইন ও নিয়মবিধি ক্ষেত্রে দৃঢ়তার সঙ্গে নিশ্চয়তা দিয়ে এসেছে। বন্ধুরা, আজকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে আমি --- আপনাদের এই সম্পর্কে কিছু তথ্য দেবো।

   'সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ' হচ্ছে ১৯৭৮ সাল থেকে চীনের গৃহীত দুটি নীতির সংক্ষিপ্ত নাম। এর অর্থ হচ্ছে অভ্যন্তরের অর্থনৈতিক নীতি সংস্কার এবং বৈদেশিক উন্মুক্ত নীতি চালু করা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে উত্পাদনের শক্তিকে উন্মুক্ত করে উন্নয়ন সাধন, দেশের আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন এবং চীনা জনগণকে সমৃদ্ধ হতে সহায়তা করা।

    পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ চালু হওয়ার পর চীনে বার্ষিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার প্রায় ১০ শতাংশ বজায় রয়েছে। এ ৩০ বছর গ্রাম হোক, শহর হোক, ব্যক্তি হোক, দেশ হোক, সবক্ষেত্রেই বিরাট পরিবর্তল এসেছে। পরিবর্তনের কারণ বলতে সুবিধাজনক নীতি থাকা সত্ত্বেও আইন ও নিয়মবিধির নিশ্চয়তাও এড়ানো যায় না। আমি আপনাদের চারটি গল্পের মাধ্যমে তা বুঝাতে চেষ্টা করবো।

    প্রথমে শুনুন গ্রামবাসীদের গল্প। ৩০ বছর আগে মধ্য চীনের আনহুই প্রদেশের সিয়াও কাং গ্রামের ১৮ জন কৃষক একটি ভূমিতে পণ্য উত্পাদন চুক্তিতে টিপ-ছাপ দিয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো চীনের সংস্কারের পথ চলা। পরের বছরে অনুষ্ঠিত জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশনে পারিবারিক যৌথ উত্পাদনে ভূমি ঠিকা দেয়ার ব্যবস্থা প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের দরুণ চীনের গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন, কর্মের ধারা এবং মানসিক অবস্থার ব্যাপক ধারাবাহিক পরিবর্তন হয়েছে। মান জাতির নারী লিন সিউ ফাং হচ্ছেন হেংলুংচিয়াং প্রদেশের একজন সাধারণ গ্রামীণ ক্যাডার। তিনি গত ৩০ বছরের গ্রামের পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেছেন, 'ভূমি যৌথ উত্পাদনে ঠিকা দেয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে জনসাধারণকে ভূমি দেয়া হয়েছে। ফলে কৃষকরা কাজ করতে উত্সাহ পেয়েছেন। এরপর কৃষকদের জীবনে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন হয়েছে। দেখো, আমাদের গ্রামের অনেক কৃষক নিজের গাড়ি কিনেছেন। তাদের সাজানো ঘর ঠিক শহরবাসীদের বাড়ির মতো।'

    গ্রামের অর্থনৈতিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের অনেক আশাও বাস্তবায়িত হয়েছে। যেমন, কৃষি কর ও বিশেষ কৃষি পণ্যের কর মওকুফ, কৃষি ভরতুকি দেয়ার নীতি কার্যকর, গ্রামাঞ্চলে বাধ্যতামূলক শিক্ষা সম্প্রসারণ, নতুন ধরনের সহযোগিতামূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা ও গ্রামের সর্বনিম্ন জীবনযাপনের নিশ্চয়তাবিধান ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু। এভাবে চীন কৃষকদের সুবিধার মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের নীতি ব্যবস্থা গঠিত হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের চোখে গ্রামাঞ্চলের নির্মাণ কাজ কেবল গ্রামের ব্যাপার, তাই নয়। এ সম্পর্কে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস ও আনহুই প্রদেশের ভারপ্রাপ্ত গর্ভণর রেন হাই শেং বলেন, 'আজ আমরা সমাজতান্ত্রিক নতুন গ্রাম নির্মাণ করছি। এটা কেবল কৃষি উন্নয়নের ব্যাপার নয়, এর মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণকৃত নির্মাণ শিল্প ও সেবা শিল্পও বিকাশ হবে।'

     এবার শহরবাসীদের গত ৩০ বছরের পরিবর্তনের দিকে নজর দেয়া যাক। ১৯৭৯ সালে জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশনের প্রধান দায়িত্ব ছিলো জাতীয় অর্থনীতির সুবিন্যস্তকরণ, সংস্কার ও উন্নত করা। অধিবেশনের দু'মাস পর হংকং এর ৩১ বছর বয়সী মেয়ে উ সু ছিং চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল সাধারণ ব্যুরোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেন। তারা বিমানে সরবরাহ খাবার উত্পাদনের সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। বর্তমান চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের স্থায়ী সদস্য, হংকং মেইসিন গ্রুপের পরিচালক উ সু ছিং বলেছেন, 'আমরা প্রথমে স্মারক লিপিতে স্বাক্ষর করেছি। আনুষ্ঠানিক চুক্তি সরকারের অনুমোদন পেতে অনেক সময় লেগেছে। কারণ তত্কালীন মূলভূভাগের অনেক বিভাগই জানতো না যে, এ ধরণের সহযোগিতা কীভাবে করা যায়। পরে বেসরকারী বিমান চলাচল সাধারণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সিদ্ধান্ত জানালেন যে, অনুমোদন না পেলেও আমাকে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট সাজসরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে। অর্থাত্ আমরা ডিম পাওয়ার পরই মুরগী পাবো। তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমার মূলভূভাগের অনেক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আমি দেখেছি, গোটা দেশ এ ৩০ বছর দ্রুত ও সাফল্যজনকভাবে উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর করেছে।'

    চীনের প্রথম যৌথ প্রতিষ্ঠান—পেইচিং বিমান খাদ্য লিমিটেড কোম্পানি সেবারের আলোচনার এক বছর পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাস্তব সত্য প্রমাণ করেছে যে, এটা একটি উভয়ের জয়লাভের সহযোগিতা।

    ১৯৮০ সালে জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশনে 'দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানের আয় কর আইন' গৃহীত হয়। এর পর বহু ধরনের অর্থনৈতিক উপাদান, পরিকল্পনা ও বাজার সংক্রান্ত বিষয় কয়েক বছরের দুটি অধিবেশনের উষ্ণ আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও চীনে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োজিত অর্থনীতি ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছে।

    জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি, লেনোভো গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লিউ ছুয়েন চি চীনের বেসরকারী অর্থনীতি উন্নয়নের কথা স্মরণ করে বলেছেন, '১৯৮৪ সালে আমাদের লেনোভো কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সময় আমাদের দেশে পরিকল্পিত অর্থনীতিই প্রধান ছিলো। পরে চীনের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয়ার পরপরই বেসরকারী অর্থনীতির লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। এতে চীনের অর্থনীতির উন্নয়নও ত্বরান্বিত করেছে। এখন বেসরকারী অর্থনীতির উন্নয়ন চীনের জন্য বিরাট সহায়ক। আমি বিশ্বাস করি, বেসরকারী অর্থনীতির আরো বেশি অগ্রগতি হবে।'

    ৩০ বছরে চীনারা স্বদেশের বিরাট পরিবর্তন উপলব্ধি করেছেন। এ ক্ষেত্রে শেনচেনবাসীদের অনুভব সবচেয়ে গভীর। ১৯৮০ সালের ২৬ আগস্ট পঞ্চম জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি 'কুয়াংতুং প্রদেশের অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল গঠন সংক্রান্ত নিয়মবিধি' অনুমোদন করে। এ দিনটি শেনচেন অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দিবস। শেনচেনের নানলিং গ্রামের সম্পাদক চাং ইয়ু বিয়াও হচ্ছেন বর্তমান জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন, 'সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতির ভিত্তিতে নানলিং গ্রাম এখন সমৃদ্ধ হয়েছে। ১৯৮২ সালে আমরা বিনিয়োগ আকর্ষণের সুবিধাজনক নীতি কাজে লাগিয়ে হংকংয়ের ব্যবসায়ীকে আমাদের গ্রামে কারখানা খুলতে আকৃষ্ট করি। এভাবে একজনের পর একজন বিদেশী ব্যবসায়ী আসার ফলে এখন এই ছোট গ্রামে ৬০টিরও বেশি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'

     এভাবে সীমান্তবর্তী এ ক্ষুদ্র গ্রামটি ধাপে ধাপে আধুনিক মহানগরে পরিণত হয়েছে। এর পর ১৯৮৮ সালে জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশনে হাইনান প্রদেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি এবং হাইনান অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠারও অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে হাইনানের বিস্ময়কর বিকাশ শুরু হয় এবং বোয়াও এশিয় ফোরাম ও মিস. ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচীও হাইনানে ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    চীনের প্রাচীন দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেন, ত্রিশ বছর বয়সেই নিজেকে সাফল্যের সঙ্গে গড়ে তোলা সম্ভব। অর্থাত্ সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৩০ বছরের মধ্যেই চীনের বিরাট পরিবর্তন সৃষ্ট হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বে চীন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও বলেন, 'সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ বর্তমান চীনের নিয়তিকে চূড়ান্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও চাবিকাঠি বাছাই। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়নের গোটা প্রক্রিয়ার অংশ। কোন সময় তা নড়চর হতে পারে না।'(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)