চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ ১২ ডিসেম্বর সকালে পেইচিংয়ে শুরু হয়েছে । চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী উ ই বলেন , চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্যিক সমস্যার রাজনীতিকরণের পরিবর্তে গঠনমূলক মনোভাব পোষণ করে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে ।
চীন-মার্কিন তৃতীয় কৌশলগত অর্থনৈতিকসংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন । তিনি তার ভাষণে খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের আহ্বানও জানিয়েছেন।
চীন-মার্কিন কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ সংলাপ । এর আগে এ সংলাপ দু'বার অনুষ্ঠিত হয়েছিল । বর্তমান সংলাপের প্রতিপাদ্যহল অর্থনীতির বিশ্বায়নের সুযোগকে কাজে লাগেয়ে অর্থনীতির বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করা । সংলাপে দু' পক্ষ অর্থনীতির বিশ্বায়ন নীতি , বাণিজ্যে পরস্পরের আস্থা স্থাপন এবং দ্রব্যের গুণগত মান ও খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে মতবিনিময়।
উপপ্রধানমন্ত্রী উ ই ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী হেনরী পলসন যৌথভাবে এ সংলাপ পরিচালনা করেছেন । উ ই বলেন , চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সম্পর্ক হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি। এ বছর দু'দেশের বাণিজ্যের পরিমান ৩ শ' বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে । চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে গঠনমূলক মনোভাব পোষণ করে দু' দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের সমস্যাগুলোর মীমাংসা করতে হবে ।
তিনি বলেন , আমরা লক্ষ্য করেছি দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রসারে কিছু বিরোধ ও সমস্যা দেখা দিয়েছে । সংলাপ ও আলাপ পরামর্শের মাধ্যমেই শুধু এ সব সমস্যা নিরসন করা সম্ভব হবে । দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রসারের ইতিহাস বার বার জানিয়ে দেয় যে বিরোধ , অভিযোগ ও চাপ সৃষ্টির চেয়ে সংলাপ বেশি কার্যকর ।
উ ই জোর দিয়ে জানান , চীন আর্থ-বাণিজ্যিক সমস্যাকে রাজনীতিকরণের দৃঢভাবে বিরোধিতা করে । আমি লক্ষ্য করেছি , এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট সদস্যরা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কিত ৫০টিরও বেশি বাণিজ্য সংরক্ষণবাদী প্রস্তাব পেশ করেছেন । এ সব প্রস্তাব গৃহীত হলে দু'দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের গুরুতর ক্ষতি হবে । তিনি আরো বলেন , বাণিজ্য সংরক্ষণবাদের মাধ্যমে অন্য একটি দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবকাঠামো সমস্যার জন্য দায়ী করার পদ্ধতি কার্যকর হবে না । এটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেরও জন্যও ক্ষতিকর ।
পণ্যদ্রব্যের গুণগত মান ও খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে উ ই বলেন , দু' পক্ষকে সৃষ্ট এ নতুন সমস্যার মীমাংসা করতে হবে । তিনি বলেন , অর্থনীতির বিশ্বায়নের পটভূমিতে দ্রব্যের গুণগত মান ও খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবসম্পন্ন একটি সমস্যা । চীন সরকার এ সমস্যাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ পণ্যের গুণগত মান ও খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে , আমি এ গ্রুপের নেতা । এ গ্রুপের পরিচালনায় সমগ্র চীনে চার মাসব্যাপী বিশেষ তত্বাবধান অভিযান চলছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী হেনরী পলসন তার ভাষণে ২০০৬ সালের শেষ দিকে দু'দেশের কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ চালুর পর অর্জিত সাফল্যের উচ্চ মূল্যায়ন করে বলেন , আগের দু'বারের সংলাপের মাধ্যমে দু দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ বিনিময় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে দুপক্ষ একমত হয়েছে ।
বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ সম্পর্কে পাউলসোন বলেন , ( রেকর্ডিং ৩ ) বুশ সরকার বরাবরই বাণিজ্য সংরক্ষনবাদের উপর আইন প্রণয়নের বিরোধিতা করেন , বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রের বিরোধীতা । বিদেশের পুঁজি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্বাগত জানানো যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ।
দুদিনব্যাপী চীন-মার্কিন তৃতীয় কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ চলাকালে দু পক্ষ অর্থনীতির ভারসাম্যের বিকাশ , জ্বালানী ও পরিবেশের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো এবং পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করবে ।
|