** বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম
কলকতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে বাংলা ১২৬৮ সালের পঁচিশে বৈশাখ অর্থাত্ ১৮৬১ সালের ৭ মে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয়। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মহত্ চরিত্রের জন্যে তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করতো, ভালবাসতো।
দেবেন্দ্রনাথ বিলাসিতা মোটেও পছন্দ করতেন না। পুত্রকন্যাকে তিনি অতি সাধারণভাবে মানুষ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের শৈশবকাল কেটেছে ভৃত্যদের তত্ত্বাবধানে। অত্যন্ত সাধারণ পোষাক তাকে পরতে হতো এবং সাধারণ খাবার খেতে হতো।
আট বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে কলকাতা নর্মাল স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হয়। কিন্তু স্কুলের একঘেয়ে পড়া ও সীমাবদ্ধ পরিবেশ তার ভাল লাগলো না। তিনি স্কুল ছেড়ে দিলেন এবং পরবর্তী জীবনে তিনি আর কোনদিনই স্কুলের বাঁধা পরিবেশ পছন্দ করতে পারেন নি। তবে তাঁর জানার আগ্রহ ছিল অপরিসীম। তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন এবং পড়তেন। স্কুলের ডিগ্রী তাঁর ছিল না। তবুও তিনি অনেক বড় পন্ডিত ও বিখ্যাত সাহিত্যিক হয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভা বহুমুখী। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। কবি হিসেবেই তিনি বিখ্যাত। স্রষ্টা, মানুষ ও প্রকৃতিকে তিনি ভালবাসতেন। সবার মনের কথা তিনি কবিতায় বলার চেষ্টা করতেন। তাঁর মধ্যে একটা শিল্পীমন ছিল।
১৯১৩ সালে কবি তাঁর বিখ্যাত কাব্য গীতাঞ্জলীর জন্য নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর পূর্বে এত বড় সম্মান আরো কোন বাঙালী অর্জন করতে পারেন নি। সেই সময় বিশ্ববাসী প্রথম জানলো বাংলাভাষা ও সাহিত্যের কথা। দেশ, জাতি ও ভাষার গৌরব বৃদ্ধি পেলো। রবীন্দ্রনাথ পরিচিত হলেন বিশ্বকবি নামে। পৃথিবীর জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিরা কবিকে সম্মান জানালেন।
গীতাঞ্জলীর সকল কবিতাই গান। এসব গানের ভাব ও ভাষা অতুলনীয় । এ ছাড়াও কবি কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত্, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ঋতুর গান, প্রেমের গান, দেশপ্রেমের গান, ভক্তির গান। কবির লেখা গানকে রবীন্দ্র সংগীত বলা হয়।
গান ছাড়া কবি নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোট গল্প ইত্যাদি রচনা করেছেন। তাঁর প্রত্যেক রচনাই সুন্দর। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম সার্থক ছোট গল্প রচনা করেন। তাঁর কয়েকশো ছোট গল্পে তিনি এদেশের মানুষ ও সমাজের অনেক ছবি এঁকেছেন। তাঁর গল্পের চরিত্রগুলো আমাদের খুব পরিচিত মনে হয়। মনে হয় আমাদের কথাই কবি বলেছেন। তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে কবি এত পরিচিত , এত প্রিয়।
রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা, ছোট গল্প এবং উপন্যাস অনূদিত হয়েছে। অনুবাদের মাধ্যমে কবি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হলেন সাহিত্য-শিল্পী হিসেবে। বিদেশীরা কবির সাহিত্য পড়ে মুগ্ধ হলেন। অনেক বিদেশী পবিত্র গ্রম্হের মত কবির গীতাঞ্জলীর অনুবাদ কাছে রাখেন এবং পড়েন।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের লেখা। এ গানে সোনার বাংলাদেশকে পাওয়া যায়।
কবি রচিত কয়েকটি উপন্যাসের নাম হলোঃ গোরা, ঘরে বাইরে, চোখের বালি, নৌকাডুবি ইত্যাদি। এসব উপন্যাসে কবি লিখেছেন দেশ, সমাজ ও মানুষের কথা।
১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ আশি বছর বয়সে কবি ঘুমিয়ে পড়লেন চিরদিনের মত। অর্থাত্ তিনি ১৯৪১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তবু যতদিন বাংলা ভাষা ও বাঙালী জাতি জীবিত থাকবে কবি রবিন্দ্রনাথও ততদিন জীবিত থাকবেন এদেশের মানুষের মনে, এদেশের সাহিত্যে।
|